অফবিট

ভারতবর্ষের কোন রাজ্যে পাঁচ পয়সাতেই ডিভোর্স হত?

নিউজ ডেস্ক –  আদি যুগ থেকেই গোটা দেশে আধিপত্যের বিস্তার ঘটেছে পুরুষতান্ত্রিক মতোধারার। প্রাচীনকাল থেকেই মেয়েদের কিভাবে দমন করা যায় বা দমিয়ে রাখা যায় সেই পরিকল্পনা করে আসছে পুরুষ সম্প্রদায়ের ব্যক্তিরা। বর্তমান সমাজে চোখ রাখলেই দেখা যাবে আজও তা অব্যাহত রয়েছে কিছু জায়গায়। যার কারণে আগে মেয়েদের শিক্ষার আলোয় আলোকিত করার সুযোগ দেওয়া হতো না, এমনকি বাড়ি থেকে বেরোনোর ক্ষেত্রেও ছিল যথেষ্ট বিধি নিষেধ। কিন্তু সেইসব নিয়মকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে নারীদের জাগ্রত করতে মাতৃতান্ত্রিক মতো ধারণা পোষণ করে জীবন যাপন করে চলেছেন উত্তর-পূর্বাঞ্চলে বসবাসকারী খাসী সম্প্রদায়, যারা মূলত মেঘালয়ের বাসিন্দা। এরা মূলত আদিবাসী সনাতন ধর্মে ধর্মীত হয়। কিন্তু কেউ চাইলে ধর্মান্তর করে মুসলিম অথবা খ্রিস্টান ধর্ম গ্রহণ করতে পারে। ‌

খাসী সম্প্রদায়ের বাসিন্দারা মাতৃতান্ত্রিক হওয়ায় এখানে মেয়েদেরকেই বিশেষত প্রাধান্য দেওয়া হয়। সমাজে যেখানে আমরা দেখে এসেছি বাড়ির প্রধান বা সম্পত্তির অধিকারী পুরুষদেরকেই করা হয় সেই নিয়মের সম্পূর্ণ বদল ঘটেছে এই গোষ্ঠীতে। এখানকার বাসিন্দারা মেয়েদের রীতি-নীতি অনুসারে জীবন অতিবাহিত করেন। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় – কোন গোষ্ঠীতে বিয়ের পর মেয়েদেরকে নিজেদের পদবী ত্যাগ করে স্বামীর পদবী গ্রহণ করতে হয়। কিন্তু খাসী সম্প্রদায়ের ক্ষেত্রে যেহেতু মাতৃতান্ত্রিক মতধারা বিরাজমান সেই ক্ষেত্রে এখানে বিয়ের পর পুরুষদের কোন পদবী গ্রহণ করেন না নারীরা। এমনকি সন্তান-সন্ততি হওয়ার পরেও মায়ের পদবীতে বড় হয়ে ওঠে তারা। 

শুধুমাত্র এই নয় এখানে কোন ব্যক্তির সম্পত্তি নিয়ে বচসা দেখা দিলে সেই বাড়ির ছোট মেয়েকে সকল সম্পত্তির অধিকারিণী করা হয়। এছাড়াও কারোর বিবাহ বিচ্ছেদ হলে মূল বক্তব্য হিসেবে ধরা হয় সেখানকার স্ত্রীর কথায়। তবে বিবাহবিচ্ছেদ ক্ষেত্রে কিছু নিয়ম দেখা যায় এই গোষ্ঠীতে। কোন নারী বিবাহ বিচ্ছেদ করতে চাইলে তার কথাকে মান্যতা দিয়ে তার স্বামীকে ৫ পয়সা দিতে হয় স্ত্রীর হাতে। এরপর সেই পাঁচ পয়সার সঙ্গে স্ত্রী নতুন করে ৫ বছর যোগ করে মোট ১০ পয়সা তুলে দেয় গোষ্ঠী প্রধানের হাতে। পরবর্তীতে গোষ্ঠী প্রদাধ সেই পয়সা নিয়ে দূরে ছুড়ে মারলে বিবাহ বিচ্ছেদ হয়ে যায় বলে মানেন খাসী সম্প্রদায়ের বাসিন্দারা।  যদিও বহু আগের এই সকল মতধারা চলতো কিন্তু বর্তমানে সমাজ শিক্ষিত হওয়ায় এবং গোষ্ঠীর সকল ব্যক্তিরা জ্ঞানলাভ করায় বর্তমানে এই রীতিকে খুব কমই মান্যতা দিতে দেখা যায় এই গোষ্ঠীতে। এখন খাসী সম্প্রদায়ের কোনো দম্পতি নিজেদের বিবাহ বিচ্ছেদ করলে চাইলে সেটি কোর্টে গিয়ে তার মীমাংসা করে আসেন। তবে বিবাহ-বিচ্ছেদের রিতীকে পরিবর্তন করলেও মাতৃতান্ত্রিক মতো ধারাকে আজও অব্যাহত রাখার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন এই গোষ্ঠী সম্প্রদায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *