ফিচার আর্টিকেল

আমেরিকাকে চাপে রাখতে কিউবাতে পরমানু সাবমেরিন মোতায়েন!

বিশ্বে চারটি সুপার পাওয়ার দেশ রয়েছে আমেরিকা, রাশিয়া, ভারত ও চীন। কিন্তু আমেরিকা বাদে বাকী তিনটি দেশের সাথেই প্রতিবেশীদের নিয়ে বিবাদ রয়েছে ভারতের সাথে পাকিস্তান ও চীনের, চীনের সাথে তার প্রায় প্রতিবেশীদের এবং রাশিয়ার সাথে পুরো ইউরোপের বিরোধীতা রয়েছে। আমেরিকা একটি এমন দেশ যার আশেপাশে রাশিয়া ছাড়া শক্তিশালী দেশ নেই। আমেরিকার পাশ্ববর্তী মেক্সিকো ও কানাডার তেমন সামরিক ক্ষমতা নেই, সেজন্য আমেরিকা অনেকটাই সুরক্ষিত মনে করে নিজেকে। তবে আমেরিকার শান্তিভঙ্গ করার ক্ষমতা রয়েছে একমাত্র রাশিয়ার। সম্প্রতি রাশিয়া আমেরিকার জলসীমার কাছেই তাদের নৌবাহিনী মোতায়েন করা শুরু করেছে যা নিয়ে ইতিমধ্যেই বিশ্ব রাজনীতিতে শোরগোল পড়ে গেছে। 

রাশিয়া তাদের ইয়াসিন শ্রেনীর পরমানু সাবমেরিন আমেরিকার সীমান্তের মাত্র ১৫০ কিলোমিটার দূরে মোতায়েন করেছে। আমেরিকার সমস্ত মিডিয়াতে পর্যন্ত বলা হচ্ছে রাশিয়ান পরমানু সাবমেরিন কিউবা উপকূলে যাতায়াত করছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সোভিয়েত ইউনিয়ন ও আমেরিকার মধ্যে চলা ঠান্ডা লড়াইয়ের সময়েও কিউবাতে পরমানু মিসাইল রেখেছিল সোভিয়েত ইউনিয়ন যা নিয়ে আমেরিকা ও সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে প্রায় যুদ্ধ শুরু হওয়ার পরিস্থিতি তৈরি হয়ে গিয়েছিল। ইতিহাসে এই ঘটনা কিউবার মিসাইল সংকট নামে পরিচিত। আবারও রাশিয়া কিউবা উপকূলেই পরমানু সাবমেরিন পাঠানো শুরু করেছে আমেরিকাকে চাপে রাখতে। রাশিয়ান সাবমেরিন ১৫০ কিলোমিটার দূর থেকে যদি আমেরিকার দিকে কোনও সুপারসনিক ক্রুজ মিসাইল ছোঁড়ে তাহলে এতটা কম দূরত্ব হওয়ার কারনে আমেরিকা সেই মিসাইল প্রতিরোধও করতে পারবেনা।

ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকোভ জানিয়েছে আমেরিকা তাদের জন্য শত্রুদেশ। এই ক্রেমলিন থেকেই রাশিয়ার সরকার পরিচালিত হয় সুতরাং ক্রমলিনের মুখপাত্র এই বক্তব্য সরাসরি রাশিয়ার রাষ্ট্রপতি ভ্লাদিমির পুতিনের ইশারাতেই করেছে। রাশিয়া ও আমেরিকার এই বৈরীতার প্রধান কারন রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধ। 

২০২২ সালের ফেব্রুয়ারীতে রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে আমেরিকার নেতৃত্বে পশ্চিমা দেশ গুলো রাশিয়াকে বিশ্বে একঘরে করে দেয়, রাশিয়ার সোনা, বৈদেশিক মুদ্রা সঞ্চয় পর্যন্ত অবরুদ্ধ করে দেয়, ব্যাপক পরিমানে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয় রাশিয়ার উপর৷ পশ্চিমা দেশগুলো এখানেই থেমে না থেকে ইউক্রেনকে অস্ত্র ও অর্থ সহায়তা দেওয়া শুরু করে। 

আমেরিকা এখনও পর্যন্ত কয়েক বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র সাহায্য করেছে ইউক্রেনকে। রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে দুই বছর ধরে যুদ্ধ চলছিলো ইউক্রেনের মাটিতেই কিন্তু কিছুদিন ধরে ইউক্রেন পশ্চিমা অস্ত্রের সহায়তায় রাশিয়ার বিভিন্ন শহরে আক্রমন করা শুরু করেছে। যার কারনে রাশিয়ার রাষ্ট্রপতি ভ্লাদিমির পুতিন জানিয়েছে রাশিয়াও পশ্চিমা দেশগুলোর শত্রুদের অস্ত্র দেবে। অর্থাৎ খুব শীঘ্রই রক্তাক্ত পরিস্থিতি তৈরি হতে চলেছে পশ্চিমা দেশগুলোতেও। পশ্চিমা দেশগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার হুমকী দিলেও রাশিয়ার প্রধান শত্রু আমেরিকা কিন্তু রাশিয়ার থেকে আমেরিকার দূরত্ব অনেকটাই। রাশিয়ার আরও সমস্যা হচ্ছে আমেরিকার আশেপাশে আমেরিকার কোনও শত্রু দেশ নেই যেখানে রাশিয়া সামরিক ঘাঁটি করতে পারবে। আলাস্কাতেও আমেরিকার শক্তিশালী সামরিক পাহাড়া থাকায় রাশিয়া আলাস্কাতেও আক্রমন করতে সক্ষম নয়। রাশিয়া থেকে আমেরিকা পৌঁছানোর দুটি উপায়, প্রশান্ত মহাসাগর হয়ে এবং উত্তর আটলান্টিক মহাসাগর হয়ে। আমেরিকার বিরুদ্ধে রাশিয়া এই উত্তর আটলান্টিক মহাসাগরকেই বেছে নিয়েছে এবং তাদের পরমানু সাবমেরিন কিউবা উপকূলে পাঠিয়েছে। ঠান্ডা লড়াইয়ের পর আবারও কিউবাকে নিয়ে সমস্যায় পড়েছে আমেরিকা। কিউবা আমেরিকার সবচেয়ে বড় স্ট্রাটেজিক দুর্বলতা। 

সামরিক বিশেষজ্ঞগন ইতিমধ্যেই জানিয়েছেন রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে যুদ্ধ একটি বড় বিপর্যয় ডেকে আনতে চলেছে। ফ্রান্স, ইংল্যান্ড, আমেরিকা, জার্মানি সহ বহুদেশই পরোক্ষভাবে এই যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছে। রাশিয়া ক্রমশ তার বন্ধুর সংখ্যা বৃদ্ধি করছে, উত্তর কোরিয়া, চীন, ইরান সহ মধ্যপ্রাচ্যের অনেকদেশই রাশিয়াকে সমর্থন করছে, আবার ভারতকেও রেকর্ড পরিমানে তেল বিক্রি করছে রাশিয়া। সুতরাং এই যুদ্ধকে কেন্দ্র করেই তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হওয়ারও সম্ভবনা রয়েছে। বিগত কয়েকদিন ধরেই ইউরোপীয় মিডিয়াতে অপারেশন আনথিঙ্কবেলের কথা শুরু হয়েছে। অপারেশন আনথিঙ্কবেলের পরিকল্পনা করেছিল ১৯৪৫ সালে ব্রিটেন সোভিয়েত ইউনিয়নের বিরুদ্ধে। 

দুটো পরিকল্পনা করা হয়েছিল এই স্ট্রাটেজিতে যদিও এই অপারেশন কখনও হয়নি। এতবছর পর আবারও অপারেশন আনথিঙ্কবেলের কথা ফিরে এসেছে কারন রাশিয়া সরাসরি জানিয়েছে তাদের সক্ষমতা রয়েছে একদিনের মধ্যে ব্রিটেন ও ফ্রান্সের পরমানু অস্ত্র ধ্বংস করে দেওয়ার। রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধকে ঘিরে ফ্রান্স সহ ইউরোপীয়ান দেশ গুলো ইঙ্গিত দিয়েছে ইউক্রেনের মাটিতে খুব শীঘ্রই তাদের সেনা যাবে। তবে সম্ভবত ইউক্রেনের সেনাবাহিনীকে প্রশিক্ষন দিতেই ফ্রান্স, ইংল্যান্ডের সেনা ইউক্রেন যাবে যা সরাসরি রাশিয়ার বিরুদ্ধে সেনা অভিযানেরই সমান। এরকম পরিস্থিতি হলে যুদ্ধের গতিপ্রকৃতি আরও সংবেদনশীল হয়ে পড়বে যেখানে পরমানু হামলার সম্ভাবনা আরও জোরালো হয়ে পড়বে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *