চীন ও পাকিস্তানকে প্রতিরোধে গোপনে সাবমেরিন ঘাঁটি তৈরি ভারতবর্ষের!
বিশাখাপত্তনম থেকে ৫০ কিলোমিটার দূরে রামবিলিতে পূর্ব উপকূলে ১,৬৮০ একর জায়গা জুড়ে ভারতের উচ্চাভিলাষী নৌ ঘাঁটি নির্মান প্রজেক্ট বর্ষার কাজ দ্রুত গতিতে চলছে। সম্প্রতি উপগ্রহ চিত্র মারফত দেখা গেছে যে প্রজেক্টটি তার নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে শেষ হওয়ার পথে রয়েছে। প্রজেক্ট বর্ষা ভারতের একটি স্ট্রাটেজিক নৌ ঘাঁটি হতে চলেছে যেখানে বারোটির বেশী পরমানু শক্তিচালিত ব্যালেস্টিক মিসাইল সাবমেরিন বা এসএসবিএন থাকবে। উপগ্রহ চিত্রানুযায়ী এই নৌ ঘাঁটির বিশেষ বৈশিষ্ট্য হল এর বিস্তৃত ভূগর্ভস্থ এলাকা যার মধ্যে অনেক সূড়ঙ্গও রয়েছে। ভাবা অ্যাটমিক রিসার্চ সেন্টার বা বিএআরসি প্রজেক্ট বর্ষার এলাকা থেকে মাত্র ২০ কিলোমিটার দূরে একটি গবেষনা কেন্দ্র তৈরি করছে যা প্রজেক্ট বর্ষাকে সহায়তা করবে। ইতিমধ্যেই বিএআরসিকে গবেষনা কেন্দ্র তৈরির জন্য প্রায় ৮৪৫ হেক্টর জায়গা দেওয়া হয়েছে।
লাদাখের গালওয়ান উপত্যকাতে ভারত ও চীনের সেনাবাহিনীর পর এটা প্রমানিত হয়ে যায় যে পাকিস্তানের থেকে চীনই ভারতের সবচেয়ে বড় শত্রু। চীন শুধু ভারতের জন্য নয় বিশ্বের বহু দেশের জন্যই হুমকী স্বরূপ। ভারতের তিন প্রতিরক্ষা বাহিনীর মধ্যে ভারতীয় নৌবাহিনীই সবচেয়ে শক্তিশালী। যেকোনও দেশের শক্তিশালী হওয়ার প্রধান শর্তই শক্তিশালী নৌবাহিনী থাকা। ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে চীনকে একমাত্র প্রতিরোধ করতে সক্ষম ভারতীয় নৌবাহিনীই। মাঝে মধ্যেই চীনের গোয়েন্দা জাহাজ শ্রীলঙ্কাই চলে আসে। এই জন্য ভারত তার নৌবাহিনীকে আরও শক্তিশালী করার জন্য আইএনএস বর্ষা নামে একটি গোপন সাবমেরিন ঘাঁটি তৈরি করছে। বায়ুসেনার সবচেয়ে বড় শক্তি যুদ্ধবিমান ঠিক তেমনি নৌবাহিনীর সবচেয়ে বড় শক্তি সাবমেরিন। সাবমেরিন অনেক প্রকারের হয় যার মধ্যে পরমানু শক্তিচালিত সাবমেরিন বা পরমানু অস্ত্র বহনে সক্ষম সাবমেরিনকে যেকোনও দেশের সম্পদ বলা হয়। ভারতের এই আইএনএস বর্ষাতে পরমানু সাবমেরিন থাকবে। সাবমেরিন ঘাঁটি হিসাবে তৈরি করা হলেও আইএনএস বর্ষাতে ভারতীয় নৌসেনার অন্যান্য যুদ্ধজাহাজও থাকবে। বিশ্বের অন্যতম ব্যস্ত সমুদ্র বানিজ্যপথ ইন্দো প্যাসিফিক অঞ্চলের কাছেই অবস্থিত এই নৌঘাঁটি ভারতীয় নৌবাহিনীকে স্ট্রাটেজিক সুবিধা দেবে।
পাকিস্তান ও চীনের কথা মাথায় রেখে ভারত চারটি এসএসবিএন সাবমেরিন নৌবাহিনীতে যুক্ত করতে চাইছে যেগুলি পরমানু অস্ত্র বহনে সক্ষম হবে। ইতিমধ্যেই ভারতীয় নৌবাহিনীতে আইএনএস আরিহান্ট এসএসবিএন যুক্ত হয়ে গেছে। আইএনএস আরিহান্ট বারোটি কে-১৫ সাবমেরিন লঞ্চড ব্যালেস্টিক মিসাইল বহন করতে সক্ষম যাদের রেঞ্জ ৭০০ কিলোমিটার। দ্বিতীয় এসএসবিএন আইএনএস আরিঘাট এই বছরেই নৌবাহিনীতে যুক্ত হবে, তবে বেশ কিছু সূত্রানুযায়ী আরিঘাট ইতিমধ্যেই যুক্ত হয়ে গেছে নৌবাহিনীতে। ভারতের তৃতীয় এসএসবিএন যার কোডনেম এস ৪ ইতিমধ্যেই তৈরি শুরু হয়ে গেছে। উপগ্রহ চিত্রে লক্ষ্য করা গেছে এস ৪ আরিহান্ট ও আরিঘাটের থেকে দ্বিগুন মিসাইল বহন করতে সক্ষম। এস ৪ চব্বিশটি কে-১৫ অথবা আটটি কে-৪ মিসাইল বহন করতে সক্ষম যার রেঞ্জ ৩,৫০০ কিলোমিটার। এস ৪ এর নির্মান এই বছরেই সম্পূর্ন হয়ে যাবে, এরপর এটি সমুদ্র ট্রায়ালে যাবে। চতুর্থ এসএসবিএন এস ৪ এর ডিজাইনের উপররেই তৈরি করা হবে যদিও সেটি এস ৪ এর তুলনায় আরও আপগ্রেডেড হবে। ভারত ইতিমধ্যেই কে-৫ সাবমেরিন লঞ্চড ব্যালিস্টিক মিসাইল তৈরি করে ফেলেছে যার রেঞ্জ ৫,০০০ কিলোমিটার। কিন্তু এই প্রজেক্ট অত্যন্ত গোপনীয় রাখা হয়েছে।