ফিচার আর্টিকেল

ডোনাল্ড ট্রাম্প নাকী কমলা হ্যারিস কে হতে চলেছে আমেরিকার পরবর্তী রাষ্ট্রপতি! জানেনকী প্রজেক্ট ২০২৫ সম্পর্কে!

আগামী নভেম্বর মাসে আমেরিকার রাষ্ট্রপতি নির্বাচন রয়েছে যার দিকে নজর রয়েছে সমগ্র বিশ্বের। তবে এই নির্বাচনে আমেরিকার বর্তমান রাষ্ট্রপতি জো বাইডেনের পুনরায় নির্বাচিত হওয়ার সম্ভবনা কম কারন জো বাইডেনের বর্তমান বয়স ৮১ বছর এবং বলা হচ্ছে জো বাইডেন বার্ধক্য জনিত কারনে সব কিছু মনে রাখতে পারছেনা। এটাও বলা হচ্ছে যে ইউক্রেনের রাষ্ট্রপতি ভ্লাদিমির জেলেনেস্কিকে অনেক সময় ভুল করে ভ্লাদিমির পুতিন ডেকে ফেলছে জো বাইডেন। বিপক্ষ দল নয় বরং জো বাইডেনের নিজের ডেমোক্রেটিক দলই তার সম্পর্কে এসব কথা মিডিয়াকে জানিয়েছে। ডাক্তারি পরীক্ষাতেও দেখা গিয়েছে জো বাইডেনের মানসিক স্বাস্থ্য ততটা ভালো নয় এবং তার ডাইমেনশিয়া রোগ রয়েছে অর্থাৎ ভুলে যাওয়া রোগ রয়েছে। এই জন্য গত ২১ জুলাই একটি চিঠি লিখে জো বাইডেন জানায় আসন্ন আমেরিকার রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে তিনি আর প্রতিদ্বন্দ্বীতা করবেননা, তার বদলে দল থেকে রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী হবেন বর্তমান উপ রাষ্ট্রপতি কমলা হ্যারিস। আমেরিকার নির্বাচনে জো বাইডেনের ডেমোক্র্যাট দলের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প। 

২০২০ সালে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে পরাজিত করেই রাষ্ট্রপতি হয়েছিলেন জো বাইডেন। কিন্তু আমেরিকার বর্তমান পরিস্থিতিতে ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রতি সমর্থন জো বাইডেনের থেকে অনেক বেশী রয়েছে। সম্প্রতি সিএনএনের আয়োজিত একটি বিতর্ক সভাতেও জো বাইডেন ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে পরাজিত হন, তারপর থেকেই জো বাইডেনের সমর্থন কমতে থাকে। কিছু দিন আগে প্রকাশ্য সভায় ডোনাল্ড ট্রাম্পের উপর গুলি চালানো হয়, তারপর থেকে ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রতি সমর্থন বহু গুন বৃদ্ধি পেয়েছে। যদি জো বাইডেন ও ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যে নির্বাচন হত তবে খুব সহজেই ট্রাম্প জিতে যেত৷ তবে কমলা হ্যারিসও ট্রাম্পের বিরুদ্ধে খুব একটা সুবিধা করতে পারবেনা বলেই মনে হচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে ডোনাল্ড ট্রাম্প এবার রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে জিততে চলেছে। কিন্ত জো বাইডেনের তুলনায় কমলা হ্যারিসের সাথে ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রতিদ্বন্দ্বীতা আরও জোরদার হবে। তবে জো বাইডেন এত সহজে নির্বাচন থেকে সরতে চায়নি, মানসিক স্বাস্থ্য খারাপ থাকা সত্বেও জো বাইডেনের স্ত্রী চাইছিলো তার স্বামী পুনরায় রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে অংশ নিক। কিন্তু ডেমোক্র্যাট দলের সদস্যরা বহুদিন ধরেই জো বাইডেনকে সরে দাঁড়ানোর জন্য অনুরোধ করছিলো। এমনকী জো বাইডেনের কারনে নির্বাচন উপলক্ষে ডেমোক্র্যাটদের ফান্ডিং পর্যন্ত কমে যাচ্ছিল। এরপর গত শনিবার রাতে জো বাইডেন ডেমোক্র্যাটদের নিয়ে একটি বৈঠক ডাকে, বৈঠকে তার কিছু অতি ঘনিষ্ঠ সাথীও উপস্থিত ছিল। গভীর রাত পর্যন্ত বৈঠকের পর জো বাইডেন অবশেষে জানিয়ে দেয় তিনি নির্বাচনে লড়বেননা আর, তার জায়গায় কমলা হ্যারিস নির্বাচনে অংশ নেবে। 

ভারতীয় বংশোদ্ভূত কমলা হ্যারিসের পুরোনাম কমলা দেবী হ্যারিস। তার জন্ম হয় ১৯৬৪ সালের ২০ অক্টোবর ক্যালিফোর্নিয়ার অকল্যান্ডে, যাকে আজ সিলিকন ভ্যালি বলা হয়। ৬০ বছর বয়সী কমলা হ্যারিসের বাবা ডোনাল্ড হ্যারিস এবং মা শ্যামালা গোপালান যিনি তামিলনাড়ুর বাসিন্দা ছিলেন। তবে শ্যামালা গোপালান ২০০৯ সালেই মারা যান। ১৯৯০-১৯৯৮ সাল পর্যন্ত কমলা হ্যারিস অকল্যান্ডের ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ছিলেন, এরপর ২০০৪ সালে জেলা গভর্নর হন এবং ২০১০ সালে অ্যাটর্নি জেনারেল হন অর্থাৎ তার রাজনৈতিক ক্যারিয়ার যথেষ্ট মজবুত। এই জন্য আমেরিকার রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী হিসাবে কমলা হ্যারিসকে যথেষ্ট যোগ্য বলা হচ্ছে। আমেরিকাতে মোট ৫০টি প্রদেশ রয়েছে যাদের মধ্যে ভোটের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন হয়৷ আমেরিকাতে দুটি প্রধান রাজনৈতিক দল রয়েছে ডেমোক্র্যাটস এবং রিপাবলিক। ডেমোক্র্যাটদের প্রতীক হচ্ছে গাধা এবং রিপাবলিকদের প্রতীক হচ্ছে হাতি। একটা সময় আমেরিকাতে ডেমোক্র্যাটদের গাধা বলা হয় যার জন্য গাধাকেই তারা প্রতীক চিহ্ন হিসাবে বেছে নেয়। আমেরিকাতে রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী হতে গেলে বেশ কিছু যোগ্যতা আছে। যেমন প্রার্থীকো আমেরিকার নাগরিক হতে হবে, বয়স ৩৫ বছরের বেশী হতে হবে এবং অন্তত ১৪ বছর আমেরিকায় থাকতে হবে। আমেরিকাতে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন পাঁচটি ধাপে হয়। 

১) প্রাইমারিস এন্ড ককেশাস:—- আমেরিকাতে ৫০টি প্রদেশ আছে। সব প্রদেশ প্রাইমারিস অথনা ককেশাসের মধ্যে যেকোনও একটি বেছে নেয়। এই দুই পদ্ধতিতে স্থানীয় রাজনৈতিক দল থেকে রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থীরা নির্বাচিত হয়, এদের ডেলিগেটস বলা হয়। এই পদ্ধতিকে সুপার টুইসডেও বলা হয়। কারন এই নির্বাচন সাধারনত মঙ্গলবারই হয়। 

২) ন্যাশানাল কনভেনশন অফ ইচ পার্টি:—- একটা বড় পোগ্রামে ডেলিগেটসরা রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থীর জন্য নমিনিদের বেছে নেয়। এখানেই চূড়ান্ত হয়ে যায় দুই রাজনৈতিক দলের মধ্যে কোন দুজন চূড়ান্ত রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করবে। 

৩) সাধারন নির্বাচনী প্রচার:—- চূড়ান্ত প্রার্থী মনোনীত হওয়ার পর দুই প্রার্থী ভোট প্রচার শুরু করে। যেমন সম্প্রতি ডোনাল্ড ট্রাম্প ও জো বাইডেনের মধ্যে বিতর্ক সভার আয়োজন হয়েছিল এটাও ভোট প্রচারেরই অংশ। 

৪) সাধারন নির্বাচন :—- এই পদ্ধতিতে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের আগে প্রতিটি রাজ্য থেকে ডেলিগেটসদের নির্বাচন হয়।

৫) ইলেকটোরাল কলেজ:—- এটাই আসল রাষ্ট্রপতি নির্বাচন। আমেরিকার জাতীয় পতাকায় ৫০ স্টার রয়েছে যা আমেরিকার ৫০ রাজ্যকে নির্দেশ করে। সাধারন নির্বাচনে প্রত্যেক রাজ্য থেকে নির্দিষ্ট সংখ্যক ডেলিগেটস নির্বাচিত হয়, এদের মোট সংখ্যা হয় ৫৩৮। ভারতে লোকসভা নির্বাচনে প্রত্যেক রাজ্যের যেমন নির্দিষ্ট আসন রয়েছে ঠিক তেমনি আমেরিকার প্রতিটি রাজ্যে নির্দিষ্ট ডেলিগেটস আছে। আমেরিকার মোট ৫৩৮টি ডেলিগেটসের মধ্যে যে দল ২৭০টি ডেলিগেটস পাবে তারাই সরকার গঠন করবে। ভারতে যেমন সংসদ রয়েছে, আমেরিকাতে একে কংগ্রেস বলে। যে দল কংগ্রেসে তাদের সংখ্যা গরিষ্ঠতা প্রমান করতে পারবে তারাই ক্ষমতায় আসবে। ভারতে যেমন প্রতি পাঁচবছর অন্তর প্রধানমন্ত্রী নির্বাচন হয়, আমেরিকাতে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন হয় চার বছর অন্তর। 

বর্তমানে  আমেরিকার রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রধান দুই প্রতিদ্বন্দ্বী হচ্ছে ডোনাল্ড ট্রাম্প ও কমলা হ্যারিস। ডোনাল্ড ট্রাম্প জনসমর্থনে সবার আগে এগিয়ে থাকলেও ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ঘিরে প্রজেক্ট ২০২৫ নিয়ে সমালোচনাও হচ্ছে। ইন্টারনেটে রীতিমতো ভাইরাল হয়ে গিয়েছে প্রজেক্ট ২০২৫। জো বাইডেন পর্যন্ত জানিয়েছে ডোনাল্ড ট্রাম্প আমেরিকাতে গনতন্ত্রকে শেষ করে দিতে চাইছে এবং নিজে স্বৈরাচারী শাসক হতে চাইছে। এই ঘটনা নিয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্পের এতবেশী সমালোচনা হচ্ছে যে ট্রাম্প বাধ্য হয়েছে এটা বলতে যে সে এই প্রজেক্ট সম্পর্কে কিছু জানেনা। কিন্তু ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমর্থকরা মনে করছে ট্রাম্প রাষ্ট্রপতি হলেই আমেরিকা একদম বদলে যাবে এবং প্রজেক্ট ২০২৫ শুরু হয়ে যাবে। এই ঘটনাকে দ্বিতীয় আমেরিকান বিপ্লব পর্যন্ত বলা হচ্ছে। 

ডোনাল্ড ট্রাম্পের আমেরিকাতে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনী ভোট প্রচারে সহায়তা করছে অনেক সংগঠন যাদের মধ্যে একটি হচ্ছে দি হেরিটেজ ফাউন্ডেশন। এই সংস্থা মনে করে আমেরিকাকে খ্রীষ্টান সংখ্যা গরিষ্ঠ দেশ হিসাবেই থাকা উচিত। আমেরিকার একটি শক্তিশালী সংস্থা দি হেরিটেজ ফাউন্ডেশনের বক্তব্য আমেরিকাতে সাদা জনসংখ্যা ক্রমশ কমে যাচ্ছে, বাইরে থেকে অতিরিক্ত লোক আসায় আমেরিকার জনঘনত্ব পরিবর্তন হচ্ছে। এসব প্রতিরোধে দি হেরিটেজ ফাউন্ডেশন ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমর্থকদের সাথে যৌথভাবে ৯০০ পাতার একটি পরিকল্পনা তৈরি করেছে যার নাম প্রজেক্ট ২০২৫, ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় এলেই এই প্রজেক্ট শুরু করে দেওয়ার চেষ্টা করবে তারা। প্রজেক্ট ২০২৫ এ বলা হয়েছে ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় এলেই ক্ষমতার কেন্দ্রীয়করন করা হবে অর্থাৎ সরকারি কর্মচারী থেকে শুরু করে আমেরিকার প্রতিরক্ষাবাহিনী পর্যন্ত ট্রাম্পের অধীনে চলে আসবে। এরপর ৫০,০০০ ট্রাম্প বিরোধী সরকারি কর্মচারীদের চাকরিচ্যুত করা হবে এবং সে জায়গায় ট্রাম্প সমর্থকদের আনা হবে। প্রজেক্ট ২০২৫ অনুযায়ী আমেরিকান সরকার ১৫-২০ মিলিয়ন শরনার্থীদের তাদের দেশে ফেরত পাঠাবে এবং অন্যদেশ থেকে মানুষজন যাতে সহজে আমেরিকাতে আসতে না পারে তার ব্যবস্থা করা হবে। এর প্রভাব ভারতের উপরেও পড়বে কারন প্রচুর ভারতীয় শিক্ষার্থী প্রতিবছর আমেরিকা যায়। আমেরিকার আইন ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রনে পুলিশের বদলে সেনাবাহিনী ব্যবহারের কথাও বলা হয়েছে এই প্রজেক্টে। অর্থাৎ প্রজেক্ট ২০২৫ অনুযায়ী আমেরিকায় গনতন্ত্র উঠে যাবে ধীরে ধীরে এবং স্বৈরাচারী শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হবে। এই জন্য জো বাইডেন সহ আন্তর্জাতিক স্তরে প্রজেক্ট ২০২৫ এর সমালোচনা করা হচ্ছে। এই প্রজেক্টে এটাও বলা হয়েছে কোয়াড সংগঠনকে পুনরায় গুরুত্ব দেওয়া হবে এবং চীনকে প্রতিরোধে ভারত আমেরিকার অন্যতম প্রধান সাথী হবে। তবে ট্রাম্প নিজে অবশ্য জানিয়েছে সে এই প্রজেক্ট সম্পর্কে কিছু জানেনা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *