ফিচার আর্টিকেল

দেশের নৌবাহিনীর ইতিহাসে সবচেয়ে শক্তিশালী ফ্রিগেট তৈরি হতে চলেছে কলকাতায়

সম্প্রতি প্রতিরক্ষা মন্ত্রক ভারতীয় নৌবাহিনীর জন্য ৭০,০০০ কোটি টাকা মূল্যের প্রজেক্ট ১৭বি কে শুরু করবার অনুমোদন দিয়ে দেওয়া হয়েছে। মাঁজগাও শিপইয়ার্ড এবং গার্ডেনরিচ শিপবিল্ডিংএ এই প্রজেক্টের আওতায় ভারতীয় নৌবাহিনীর ইতিহাসে সবচেয়ে শক্তিশালী ফ্রিগেট তৈরি করা হবে। একটি দেশের নৌবাহিনীতে বিভিন্ন প্রকারের যুদ্ধজাহাজ থাকে যেমন এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ার, ডেস্ট্রয়ার, ক্রুজার, ফ্রিগেট, কর্ভেট, সাবমেরিন ইত্যাদি। এই সমস্ত যুদ্ধজাহাজের মধ্যে আকারে সবচেয়ে বড় হয় এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ার বা বিমানবাহী রনতরী। একে সমুদ্রে চলমান একটি বিমান ঘাঁটিও বলা হয়। এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ারের মাধ্যমে শত্রুর ভূমিতে এয়ারস্ট্রাইক করা সম্ভব। একটি এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ারের থেকে আয়তনে ছোট যুদ্ধজাহাজকে ক্রুজার বলা হয়। তবে ক্রজারের ফায়ার পাওয়ার একটি বিমানবাহী রনতরীর থেকে অনেক বেশী হয়। তবে বর্তমানে আমেরিকা ও রাশিয়া ছাড়া কোনওদেশের নৌবাহিনীতেই ক্রজার নেই। ক্রুুজারের থেকে আয়তনে ছোট যুদ্ধজাহাজকে ডেস্ট্রয়ার বলা হয়। মূলত কোনও দেশের নৌবাহিনীর মেরুদণ্ড বলা হয় এই ডেস্ট্রয়ারকে। আমেরিকার নৌবাহিনীর কাছে বিশ্বের সবচেয়ে বেশী ডেস্ট্রয়ার রয়েছে। ভারতীয় নৌবাহিনীতে চার ধরনের ডেস্ট্রয়ার রয়েছে রাজপুত শ্রেনীর, দিল্লি শ্রেনীর, কলকাতা শ্রেনীর এবং নির্মীয়মান বিশাখাপত্তনম শ্রেনীর। প্রজেক্ট ১৫বি এর অধীনে এই বিশাখাপত্তনম শ্রেনীর ডেস্ট্রয়ারগুলি তৈরি করা হচ্ছে। একটি প্রজেক্টে সাধারনত সাত বা আটটি যুদ্ধ জাহাজ তৈরি করা হয় এবং ওই নির্দিষ্ট প্রজেক্টের আওতায় সর্বপ্রথম যে যুদ্ধজাহাজটি তৈরি করা হয় তার নামেই গোটা শ্রেনীর নাম হয়। যেমন প্রজেক্ট পি ১৫বি এর প্রথম ডেস্ট্রয়ারের নাম আইএনএস বিশাখাপত্তনম, এই জন্য গোটা প্রজেক্টকে বিশাখাপত্তনম শ্রেনীর ডেস্ট্রয়ার নাম দেওয়া হয়েছে। ডেস্ট্রয়ারের থেকেও আয়তনে ছোট যুদ্ধজাহাজকে ফ্রিগেট বলা হয়। আয়তনে ছোট হওয়ার কারনে একটি ফ্রিগেটের গতিবেগ অনেকটাই বেশী হয়। এজন্য ক্রুজার, ডেস্ট্রয়ার ও বিমানবাহী রনতরীর সুরক্ষায় ফ্রিগেট ব্যবহার করা হয়। 

ভারতে যত ডেস্ট্রয়ার রয়েছে সেগুলো সবই বন্দর শহরের নামে তৈরি হয়েছে এবং সমস্ত ফ্রিগেটের নামকরন হয়েছে পাহাড়ের নামে। মাজগাঁও শিপইয়ার্ডে ও গার্ডেনরিচে এর আগে পি ১৭এ প্রজেক্টে নীলগিরি শ্রেনীর সাতটি ফ্রিগেট তৈরি করা হয়েছে। নীলগিরি শ্রেনীর আওতায় নীলগিরি, উদয়গিরি, তারাগিরি, মহেন্দ্রগিরি, হিমগিরি, ডুনাগিরি এবং বিন্ধ্যগিরি নামে সাতটি ফ্রিগেট তৈরি করা হয়েছে যার মধ্যে চারটি ফ্রিগেট মাঁজগাওয়ে এবং বাকী তিনটি ফ্রিগেট গার্ডেনরিচে তৈরি করা হয়েছে। এসব ফ্রিগেটের নামও বিভিন্ন পর্বতের নামেই রাখা হয়েছে। নীলগিরি শ্রেনীর ফ্রিগেটগুলো ব্রিটিশ লিয়েন্ডার শ্রেনীর ফ্রিগেটের উন্নত সংস্করন। পি ১৭ আলফা প্রজেক্টের সাতটি ফ্রিগেট তৈরি সম্পূর্ন হয়ে গেছে, এগুলো এখন সী ট্রায়ালে আছে। 

২০২৬ সালের মধ্যে এই সমস্ত ফ্রিগেট ভারতীয় নৌবাহিনীতে যুক্ত হয়ে যাবে। এজন্য নতুন পি ১৭বি প্রজেক্টের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে এই দুটি সংস্থাকে। পি ১৭বি প্রজেক্ট নীলগিরি শ্রেনীর ফ্রিগেটগুলোর থেকে অনেক বেশী আধুনিক হবে। কারন পি ১৭এ তে মোট ৪৫,০০০ কোটি টাকা খরচ হয়েছিল, সেখানে পি ১৭বি শ্রেনীতে মোট ৭০,০০০ কোটি টাকা খরচ হবে। তবে নতুন ফ্রিগেটগুলি কোন শ্রেনীর হবে তার এখনও নাম ঠিক করা হয়নি। নতুন ফ্রিগেটগুলিতে ভারতের নিজস্ব তৈরি প্রযুক্তি বেশী থাকবে যেমন দেশীয় প্রযুক্তির ফায়ার কন্ট্রোল সিস্টেম, ব্রাহ্মস ক্রুজ মিসাইল, অ্যান্টি সাবমেরিন ওয়েপনস, ইলেকট্রনিক ওয়ারফেয়ার সিস্টেম থাকবে। তবে এই প্রজেক্টের ব্যাপারে বিস্তারিত তথ্য এখনও ভারত সরকার প্রকাশ করেনি। ভারতীয় নৌবাহিনীতে যেমন প্রজেক্ট ১৫, ১৫এ এবং ১৫বি ডেস্ট্রয়ার প্রজেক্ট হিসাবে পরিচিত, প্রজেক্ট ১৭, ১৭এ এবং ১৭বি ফ্রিগেট প্রজেক্ট হিসাবে পরিচিত ঠিক তেমনি প্রজেক্ট ৭৫ কে সাবমেরিন প্রজেক্ট বলা হয়। প্রজেক্ট ৭৫ এর আওতায় বিভিন্ন ধরনের সাবমেরিন তৈরি করা হয়। মুম্বাইয়ের মাঁজগাও ডক লিমিটেড বা এমডিএলকে ভারতের অন্যতম শ্রেষ্ঠ যুদ্ধজাহাজ নির্মান সংস্থা বলা হয়। মাঁজগাও ডকে এর আগে পি ১৭এ, পি ১৫বি এর অধীনে ফ্রিগেট, ডেস্ট্রয়ার এবং কালভেরী শ্রেনীর সাবমেরিন তৈরি করা হয়েছে। আরও অতিরিক্ত তিনটি কালভেরী শ্রেনীর সাবমেরিন তৈরি করা হতে পারে মাঁজগাওয়ে যার মোট মূল্য প্রায় ৩৫,০০০ কোটি টাকা। এই নতুন তিনটি সাবমেরিন কালভেরী শ্রেনীর পুরোনো ছয়টি সাবমেরিনের থেকে আয়তনে বড় হবে এবং বেশী আধুনিক প্রযুক্তি যুক্ত হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *