অফবিট

নিজের পেট কেটে নিজেই অপারেশান করেছিলেন রাশিয়ান ব্যাক্তি। কি এমন কারন ছিল এর পেছনে?

নিউজ ডেস্ক চিকিৎসকে মূলত  ভগবানের পরে অর্থাৎ দ্বিতীয় স্থান দেওয়া হয়। কারণ চিকিৎসকরাই একমাত্র রয়েছেন যারা কোন মানুষের প্রাণ বাঁচাতে পারেন। তবে বিশ্বে এমন একজন চিকিৎসক রয়েছেন যার প্রাণ বাঁচানোর জন্য কেউ ছিলনা। নিজের প্রাণ নিজেকেই বাঁচাতে হয়েছে চিকিৎসকের।  যদিও পরবর্তীতে এমন বিরল ঘটনার জন্য পৃথিবী বিখ্যাত হয়েছিলেন তিনি। অল্পবিস্তর মানুষ এই চিকিৎসকের নাম জানেন। হ্যাঁ ঠিকই ধরেছেন এই পৃথিবী বিখ্যাত চিকিৎসকের নাম লিওনিড রোগোজভ। তিনি নিজের অ্যাপেন্ডিক্স নিজে অপারেশন করার জন্য পরিচিত। যদিও এমন ভয়াবহ ও বিরল ঘটনা অভিজ্ঞতা মৃত্যুর আগে নিজের ডায়েরিতে লিখে গিয়েছিলেন চিকিৎসক লিওনিড রোগোজভ।  

সালটা ছিল ১৯৬১। চিকিৎসা বিজ্ঞানের উচ্চপদে অবস্থিত হওয়ার পর আন্টার্টিকার সোভিয়েত ইউনিয়নের অধীন  নোভোলাজারেভস্কায়া মেরু গবেষণা কেন্দ্র যান তিনি। এখানে লিওনিড রোগোজভ ছাড়া আর কোন চিকিৎসক উপস্থিত ছিল না। প্রাথমিক দিকে সবকিছু ভালো চললেও মূলত ৮ মাস পর গবেষণা কেন্দ্রে কাটানোর পর হঠাৎই একদিন অসহ্য পেটে ব্যথা হয় চিকিৎসকের। তবে ঠিক কি কারণে এমন জনগণ তা পরীক্ষা করার জন্য তার চিকিৎসা কেন্দ্রের ১ হাজার মাইলের মধ্যে কোন দ্বিতীয় ডাক্তার ছিলেন না। যার কারণে নিজের চিকিৎসা নিজে করার সিদ্ধান্ত নেন লিওনিড রোগোজভ।  

সেই শারীরিক অসুস্থতার  সময়কালে যে অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়েছে সেটি সহ বিস্তারিতভাবে একটি ডায়েরিতে লিখে রেখেছিলেন লিওনিড রোগোজভ।  সেখান থেকেই জানা যায়, যখন তার অসহ্য পেটে ব্যথা হচ্ছিল এবং ধারে কাছে কোন ডাক্তার ছিলনা তখন তিনি তার সহকর্মীদের সহায়তায় অপারেশনটি করেন। যদিও এই বিষয়ে প্রথমদিকে তার বন্ধুদের জানতে দেননি তিনি। কারণ সেই সময়টা ছিল ঠান্ডার সময় অর্থাৎ ভ্রমণ করার সময়। যার কারণে নিজের বন্ধুদের আনন্দ মাটি করতে চাইনি লিওনিড রোগোজভ। কিন্তু যদিও চিকিৎসকের শারীরিক অবনতির বিষয়ে জেনে গিয়েছেন তার বন্ধুরা। পরবর্তী নিজের বন্ধুদের সাহায্যে তিনি যে ঘরে অপরেশন করেছে সেই ঘরের সমস্ত জিনিসপত্র বাইরে বের করা। এরপর বেড স্যানিটাইজার করে জীবাণুমুক্ত করার পর নিজে তার উপর শুয়ে পড়ে। যদিও তার তুমুল জ্বর আসা, পেটের ডান দিকে নিচের দিকটা ফুলে টনটন করা ও বমি বমি ভাব সহ ইত্যাদি সিমটমস দেখে বুঝে গিয়েছিলেন যে তার অ্যাপেন্ডিক্সের সমস্যা হয়েছে। ‌ তাই তিনি ডায়েরি লেখার সময় জানিয়েছেন,”মনে হচ্ছিল আমায় অ্যাপেন্ডিসাইড হয়েছে। কিন্তু আমি কাউকে জানাতে পারছিলাম না। মূলত কারোর যাতে মন খারাপ না হয় সেইজন্য সকলের সামনে হাসিখুশি থাকার চেষ্টা করছিলাম। তবুও কি করে হঠাৎই আমার বন্ধুরা সব জেনে যায়। এরপরই প্রস্তুতি শুরু হয় অপারেশনের। সেই সময় মনে হচ্ছিল কয়েকশো শয়তান আমার উপর হামলা করেছে। আমার আত্মা যেন খুবলে খাচ্ছে ১০০ শেয়াল। আমি ভেবেছিলাম হয়তো আর বাঁচবো না। তাই অপরেশন শুরু করার আগে সাদা অ্যাপ্রন পরা সদ্য ডাক্তারি পথে পদার্পণ করা সহকর্মীদের একবার নজর ভরে দেখি নিয়েছিলাম। তবে বাঁচি কিংবা মরি হাত গুটিয়ে বসে থাকা সম্ভব ছিল না। তাই উপরওয়ালার পরেই সমস্ত কিছুর দায়ভার ছেলে দিয়ে শুরু করলাম অপরেশন। প্রথমে ইনজেকশনের সিরিঞ্জে নভোকেইন ভোরে নিজেকে প্রথমে ইনজেকশন দিলাম। এরপরই হঠাৎই আমার মধ্যে ওটি করার মনোভাব চলে আসলো। অপারেশন প্রক্রিয়া শুরু করার পর বহু রক্তক্ষরণ হচ্ছিল। কিন্তু আমার হাত থামেনি নিজের কাজ থেকে। তবে অপারেশন চলাকালীন পেরিটোনিয়াম সরাতে গিয়ে বৃহদন্ত্রের নালিতে সজোরে আঘাত লাগে। যদিও পরবর্তীতে সেই জায়গা অপারেশন করতে হয়েছিল। তবে দীর্ঘসময়ের সার্জারি প্রক্রিয়ায় ৪/৫ মিনিট পর পর প্রায় ২০-২৫ মিনিটের মত ব্রেক নিতে হচ্ছিল নাহলে যাচ্ছিলাম। যাই হোক অবশেষে দীর্ঘ অপারেশনের পর সফল হলো অ্যাপেন্ডিস অপসরণ করা।

পরবর্তীতে অ্যাপেন্ডিক্সটি দেখলে ওখানে দেখা যায় তার তলে কালো স্পট হয়ে গেছে। অর্থাৎ আর কয়েকদিন থাকলেই সেটি ফেটে গিয়ে মৃত্যু হতে পারত। তবে হয়তো তখন সময় ছিল না মৃত্যুর যার কারণে কঠিন অপারেশনের পরেও বেঁচে ফেরা সম্ভব হয়েছে। অপারেশন করার প্রায় দুই সপ্তাহ পর রীতিমতো সুস্থ হয়ে উঠেছিলেন চিকিৎসা।

নিজের অপারেশন নিজে করে গোটা পৃথিবীতে সেল্ফ সার্জারীর একটি নতুন কায়েম গড়েছিলেন  লিওনিড রোগোজভ। এরপর তাকে সোভিয়েত সরকার সেই বছরই লিওনিড রোগোজভকে অর্ডার অফ দ্য রেড ব্যানার অফ লেবার সম্মানে ভূষিত করা হয়। যদিও এখানেই ক্ষান্ত ছিলেন না লিওনিড রোগোজভ। পরবর্তীতে ১৯৬২ সালের অক্টোবর মাসে তিনি নিজের অভিযান শেষে দেশে ফিরলেন। পরবর্তীতে সার্জারির উপরে এমডি করলেন। যার কারণে সেন্ট পিটার্সবার্গ রিসার্চ ইন্সটিটিউটে সার্জারি বিভাগের হেড অফ দা ডিপার্টমেন্ট হন ডা. লিওনিড রোগোজভ।  দীর্ঘদিন নিজের চিকিৎসাবিদ্যা দিয়ে বহু রোগীর চিকিৎসা করে তাদের সাড়িয়ে তুলেছেন। যদিও সেই জীবন অর্থাৎ ২০০০ সালে পৃথিবীর জনপ্রিয় চিকিৎসক লিওনিড রোগোজভ ফুসফুসের ক্যান্সার রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। তবে তিনি পৃথিবী থেকে চলে গেলেও তার এমন অবিশ্বাস্যকর অপারেশনের গল্পটি পৃথিবীতে রয়ে গিয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *