ফিচার আর্টিকেল

হাই হিলের জুতা পুরুষদের জন্য উদ্ভাবিত হয়েছিল

সমাজ উন্নত হওয়ার আগে এমন অনেক ঘটনা ঘটেছে যেটা বর্তমান যুগে অভাবনীয়। কিন্তু কালের পরিবর্তনের সাথে সমাজ উন্নত হয়েছে এবং পাল্টেছে বহু রীতি নীতি। সেরকমই পূর্বে ঘটিত পাঁচটি ভয়ঙ্কর প্রথা যা আজও চমকে দিতে পারে গোটা সমাজকে-

I) স্ত্রী কে কুস্তি লড়াইয়ে হারাতে পারলে তবেই বিয়ে করতে পারবেন :- বহু আগে চেঙ্গিস খানের পরিবারে একটি প্রথা প্রচলিত ছিল। কোন ব্যক্তি বিয়ে করতে গেলে তাকে আগে তার হবু বউকে কুস্তি খেলায় হারাতে হবে তারপরে সে বিয়ে করতে সমর্থ হবে। এভাবেই চলত বিয়ের প্রথা। এছাড়াও মধ্যযুগে খুতুলুন নামের একজন মহিলা ছিলেন যিনি প্রায় হাজার জন পুরুষকে কুস্তি খেলায় হারিয়েছিলেন। অর্থাৎ ঐ মহিলাকে বিয়ে করা পুরুষের কাছে প্রায় অসাধ্য হয়ে উঠেছিল। 

II) নারীকে চুম্বন করে দেখা হতো মদ খেয়েছে কিনা:- প্রাচীন রোমে চুম্বনের অধিকার বলে একটি আইনত প্রথার প্রচলন ছিল। এই আইন অনুযায়ী কোন নারী মদ্য পান করলে তাকে ব্যভিচারী হিসেবে দেখা হত। আর সেই ব্যভিচারিণীর শাস্তি ছিল মৃত্যুদণ্ড। সে কারণেই এই প্রথার মাধ্যমে ওই মহিলাকে তার স্বামী বাবা কিংবা ভাই প্রত্যহ চুম্বন করত এবং যাচাই করত যে তিনি সুরা পান করেছেন কিনা। আপাত দৃষ্টিতে সেই চুম্বন স্নেহের মনে হলেও এর পেছনে আসল কারণ ছিল মদ্য পান করেছে কিনা সেটা যাচাই করা। তখনকার যুগের রোমানিয়ারা মনে করত যে কোন সৎ নারী মদ্যপান করলে সে চিরকালের মতো গর্ভধারণ ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। সেক্ষেত্রে এটা কে বেআইনি মনে করা হতো এবং আত্মীয়দের সম্মতিতেই মহিলাদের হত্যা করার রেওয়াজ ছিল। তবে যে মহিলারা নৃত্য করে কিংবা অন্য কোন জায়গায় কাজ করে তাদের ক্ষেত্রে মদ্যপানের উপর নিষেধাজ্ঞা ছিল না। খ্রিস্টপূর্ব ১ম শতাব্দীতে ভ্যালেরিয়াস ম্যাক্সিমাস নামের একজন ইতিহাসবিদ লিখেছিলেন,❝যে নারী মদের প্রতি অত্যাধিক লোভী, সে পূণ্যের সকল দরজা বন্ধ করে দেয়, এবং পাপের দরজা খুলে দেয়।❞

III) জার্মানির মধ্যযুগের বিচার ব্যাবস্থা :- জার্মানিতে স্বামী স্ত্রীর মধ্যে বিবাদ হলে মারামারি করে সেই বিবাদ মিটানোর আইন ছিল। যেহেতু পুরুষেরা বরাবরই স্ত্রীদের থেকে বেশি শক্তিশালী তাই এটি নিয়ম করেছিল সেই দেশের সরকার। আইন অনুসারে পুরুষদের মাটিতে হাফ গর্ত করে তার মধ্যে ঢুকিয়ে দিয়ে একটি হাত বেঁধে দেওয়া হতো সে দিক থেকে নারী থাকতে সম্পূর্ণ মুক্ত। এরপর দুজনের হাতেই মুগুর থাকত এবং পুরুষকে এক হাত দিয়ে লড়াই করতে হতো তার বিবাহিতা স্ত্রীর সঙ্গে। এভাবেই তাদের সংসারিক ঝামেলা মেটানোর রেওয়াজ ছিল।

IV) হাই হিলের জুতা পুরুষদের জন্য উদ্ভাবিত হয়েছিল :-  প্রাচীন গ্রীকের অভিনেতারা হাই হিল জুতো পরিধান করত। তবে হাই হিল জুতো ঠিক কবে আবিষ্কার করা হয়েছে সেই সম্বন্ধে সঠিক কোন তথ্য নেই। তবে বলা হয়ে থাকে যে এই জুতোগুলো আবিষ্কার করা হয়েছিল জুতাগুলোর উচ্চতা মঞ্চে চিত্রিত বিভিন্ন চরিত্রের সামাজিক শ্রেণী এবং গুরুত্বকে আলাদা করতে সাহায্য করেছিল। কিন্তু এ ধারণা যে কতটা ঠিক সেই বিষয়কে ঘিরেও রয়েছে যথেষ্ট ধোঁয়াশা। তবে অনুমান করা হয় ১৫ শতকে পারস্যের সৈনিকরা প্রথম এই জুতো ব্যবহার করেছিল। কারণ তখনকার দিনে অস্ত্র চালানোর পাশাপাশি ঘোড়া চালানোতেও পারদর্শী হতে হতো সৈনিকদের। তাই ঘোড়ার রেকাবে পা যথাযথভাবে আটকাতে সাহায্য করতো এই জুতো। যার কারণে শত্রুর দিকে লক্ষ্য স্থির করতে সুবিধা হত সৈনিকদের। 

পরবর্তীতে মধ্যযুগে  ইউরোপে একই জুতো পুরুষ ও মহিলা, উভয়কে পড়তে দেখা যেত। তখন সেই জুতোকে বলা হত প্যাটেন। সেই সময় ইউরোপের রাস্তা এতটাই নোংরা থাকতো যে  জামা কাপড়ে যাতে নোংরা না লাগে তাই নারী ও পুরুষ উভয় হাইহিলের জুতো পড়তো। তবে কালের পরিবর্তে আসতে আসতে সেই জুতো নারীদের ফ্যাশন হয়ে উঠলো। তবে এটা কোনদিনই অস্বীকার করা যায় না যে সর্বপ্রথম হাই হিলের জুতো ব্যবহার করা শুরু করেছিল পুরুষেরাই। 

V)হাতির মাধ্যমে মৃত্যুদন্ড :- পশ্চিমা বিশ্বে কিংবা দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ বিশেষ করে ভারতে হাতির মাধ্যমে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার প্রচলন ছিল। সেটা যুদ্ধক্ষেত্রে হোক বা বাড়ির প্রাঙ্গনে প্রচলন সব জায়গাতেই দেখা যেত। উনিশ শতক পর্যন্ত হাতির মাধ্যমে এই মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার রেওয়াজকে বলা হত গুঙ্গা রাও। পরবর্তীতে ভারতের ব্রিটিশ শাসন শুরু হওয়ায় কালক্রমে এই পুরনো রেওয়াজের ইতি ঘটেছিল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *