তবে কী দেশে ভিল প্রদেশ নামে নতুন একটি রাজ্য গঠন হবে!
আমাদের দেশ ভারতবর্ষে সম্প্রতি আরও একটি নতুন রাজ্য গঠনের দাবী উঠেছে এই নিয়ে রীতিমতো মিছিলও হয়। রাজস্থান, গুজরাট, মধ্যপ্রদেশ ও মহারাষ্ট্র এসব রাজ্যগুলোর কিছু অংশ নিয়ে একটি নতুন রাজ্য গঠনের দাবী উঠেছে। একটি উপজাতি গোষ্ঠী ভিল সম্প্রদায় তাদের জন্য আলাদা করে ভিল প্রদেশ নামে একটি রাজ্য গঠনের দাবী করছে। রাজস্থানের একটি জেলা বাঁশওয়াড়ার একজন সংসদ রাজকুমার রোট সম্প্রতি জানিয়েছেন একটি ভিল রাজ্য গঠনের দাবী বহুদিন ধরেই রয়েছে। রাজস্থানের মানগড় ধামে কিছু দিন আগেই ভিল উপজাতির মানুষরা একটি মিছিল করে সেখানেই রাজকুমার রোট এই কথা ঘোষনা করেন। তিনি এই বিশাল মিছিলের পর আরও জানান তিনি নিজে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর কাছে এই বিষয়ে প্রস্তাব দেবেন।
রাজস্থান সরকারের উপজাতি উন্নয়ক মন্ত্রী বাবুলাল খারাদি জামিয়েছেন গনতান্ত্রিক দেশে প্রত্যেকের নিজস্ব মত প্রকাশের স্বাধীনতা রয়েছে এবং ছোট ছোট রাজ্য উন্নয়নের জন্য সবচেয়ে ভালো। কিন্তু তিনি এটাও বলেন শুধু একটি জাতির উপর নির্ভর করে আলাদা রাজ্য করা সম্ভব নয়। তিনি বলেন যদি আজ আদিবাসীদের জন্য আলাদা রাজ্য করে দেওয়া হয় তাহলে হয়ত আগামীকাল অন্যকোনও জাতির মানুষজন তাদের জন্য আলাদা রাজ্য চাইবে। এরকম ঘটনা কোনও সমাজ ও দেশের জন্যই ভালো ব্যাপার নয়।
পশ্চিম ভারতে অর্থাৎ রাজস্থান, গুজরাট, মধ্যপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র এই চারটি রাজ্যের ৪৯টি জেলা মিলিয়ে ভিল রাজ্য গঠনের দাবী অনেকদিন ধরেই চলছে। এসব জেলায় ভিল উপজাতিদের জনসংখ্যা সবচেয়ে বেশী। অতীতে বিভিন্ন ভিল দল এই দাবী করেছে যার মধ্যে ভারতীয় ট্রাইবাল পার্টি বা বিটিপি অন্যতম। ২০১৭ সালে গুজরাটে বিটিপি দল তৈরি হয়েছিল এই ভিল প্রদেশ গঠনের দাবীকে সামনে রেখেই। বিটিপি রাজস্থানের প্রেসিডেন্ট ডঃ ভেলারাম ঘোগরা জানিয়েছেন ভিল সম্প্রদায়ের ধর্মগুরু গোবিন্দ গুরু ১৯১৩ সালে সর্বপ্রথম ভিলদের জন্য আলাদা একটি রাজ্যের দাবী করেছিল। ব্রিটিশ ভারতে মানগড় গনহত্যার পরেই ভিলদের জন্য আলাদা রাজ্য গঠনের দাবী শুরু হয়েছিল।
জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকান্ডের ছয় বছর আগেই রাজস্থান ও গুজরাটের সীমান্তে অবস্থিত মনগড় পাহাড়ে ১৯১৩ সালের ১৭ নভেম্বর কয়েকশো ভিল উপজাতির মানুষকে ব্রিটিশ পুলিশ হত্যা করেছিল। ইতিহাসে এই ঘটনা মানগড় গনহত্যা নামে পরিচিত। স্বাধীনতার পরবর্তী কালে বিভিন্ন সময়েই এই ভিল প্রদেশ গঠনের দাবী উঠেছে ভারতে। ভেলরাম ঘোগরা বলেছেন স্বাধীনতার আগে রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ, গুজরাটের দুঙ্গারপুর, বাঁশওয়াড়া, উদয়পুর অঞ্চল একই প্রেসিডেন্সির অধীনে ছিল কিন্তু স্বাধীনতার পর বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এসব অঞ্চল বিভক্ত করে দেয় বিভিন্ন রাজ্যের মধ্যে যাতে স্থানীয় উপজাতি সম্প্রদায়রা কখনও ঐক্যবদ্ধ হতে না পারে। ২০১১ সালের জনগননা অনুযায়ী রাজস্থানের ১৪ শতাংশ জনগোষ্ঠীই উপজাতি সম্প্রদায়ের যার মধ্যে বেশীরভাগই রয়েছে ভাগাদ অঞ্চলে যার মধ্যে প্রতাপগড়, বাঁশওয়াড়া, দুঙ্গারপুর এবং উদয়পুরের কিছু অংশ রয়েছে। ঘোগরা আরও বলেছে কেন্দ্রীয় সরকার বিভিন্ন সময়ে অনেক নীতি, আইন, প্রকল্প এনেছে স্থানীয় উপজাতিদের জন্য কিন্তু এসবের প্রয়োগ সঠিক ভাবে হয়নি এবং প্রক্রিয়া অনেক ধীর গতিতে এগিয়েছে। যেমন তিনি বলেছেন ১৯৬৬ সালে কেন্দ্রীয় সরকার দি প্রভিসন্স অফ দি পঞ্চায়েত আইন আনে যাতে আদিবাসী এলাকায় গ্রামসভাদের ক্ষমতা বাড়তে পারে কিন্ত রাজস্থান সরকার এই আইন গ্রহন করে ১৯৯৯ সালে এবং আইনের প্রয়োগ শুরু হয় ২০১১ সালে। তিনি এটাও বলেছেন এই আইন আসার ২৫ বছর পরেও দুঙ্গারপুরে তার গ্রাম পালদেভলের লোক এই আইনের ব্যাপারে জানেনা। সাধারন লোক ছাড়াও স্থানীয় বিজেপি ও কংগ্রেসের এমএলএরাও এই আইন সম্পর্কে জানেনা বলেই তিনি অভিযোগ করেছেন। যেকোনও দেশেই কোনও একটি নির্দিষ্ট জনগোষ্ঠী যখন আলাদা রাজ্যের দাবী করে তখন তার একটাই অর্থ সেই জাতি তাদের প্রাপ্য সুযোগ সুবিধা তেমন পায়নি। ভিলরাও এটাই দাবী করেছে, তারা জানিয়েছে আলাদা রাজ্য হলে তারা তাদের দাবী আরও সহজে জানাতে পারবে। ভিল প্রদেশের দাবী জানানো প্রধান দল বিটিপির কার্যকালাপে অনেক দলীয় নেতারাই খুশি ছিলনা। যার জন্য ২০২৩ সালে রাজস্থানে বিধানসভা নির্বাচনের কয়েকমাস আগেই ভারত আদিবাসী পার্টি বা বিএপি গঠন করা হয়। বিটিপির অনেক নেতা, কর্মকর্তাই এই নতুন দলে যোগ দেয়। বিএপি পুরোনো বিটিপি থেকে আরও অনেকবেশী শক্তিশালী দল। বর্তমানে রাজস্থান বিধানসভায় বিটিপির দুজন এমএলএ রয়েছে কিন্তু বিএপির তিনজন এমএলএ রয়েছে রাজস্থান বিধানসভায় এবং একজন এমপি রয়েছে লোকসভায়। বিএপি নেতারা এটাও জানিয়েছে তাদের সংস্কৃতি হিন্দু ধর্মের বিপরীত। তারা ধরমপূর্বী অর্থাৎ তাদের লোকেদের অস্তিত্ব ধর্মের উৎপত্তির আগেই ছিল। সম্প্রতি মানগড় ধামে ভিলেদের মিছিলেও স্থানীয় উপজাতি কর্মকর্তা মেনকা ডেমোর প্রকাশ্যে ঘোষনা করেছিল তারা হিন্দু নয় এবং তিনি আদিবাসী মহিলাদের মঙ্গলসূত্র ও সিঁদুর না পড়তে বলছিলো।