লাইফস্টাইল

শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। ত্বক আমাদের শরীরে যে উপকার গুলি করে

আমাদের মানব দেহের মধ্যে সবচেয়ে বড় অঙ্গ হলো ত্বক। ত্বক আবরণী কলার অন্তর্গত। এটি তিনটি স্তরে গঠিত। এগুলি হল- 

  • এপিডার্মিস:

    এপিডার্মিস সবচেয়ে বাইরের স্তর। এটি জীবাণু সংক্রমণের বিরুদ্ধে প্রাথমিকভাবে দেহকে সুরক্ষা দেয়। সবচেয়ে বড় কথা, আমাদের শরীর থেকে অতিরিক্ত জল বের হতে বাধা দেয় এটি। শরীর থেকে প্রতিনিয়ত ব্যাপন এবং বাষ্পীভবন প্রক্রিয়ায় যে পরিমাণ তরল বের হয়ে যাচ্ছে, তার কড়া হিসেব রাখে।

  • ডার্মিস:

এপিডার্মিসের নিচের স্তরটি হল ডার্মিস। । এটি কুশনের মতো কাজ করে প্রাথমিকভাবে দেহকে তাপ ও চাপ থেকে সুরক্ষা দেয়। এখানে মেকানোরিসেপ্টর এবং থার্মোরিসেপ্টর  নামক দুই ধরনের বায়োসেন্সর থাকে। এরা চাপ ও তাপকে অনুধাবন করে সেগুলো স্নায়ুতন্ত্রের মাধ্যমে মস্তিষ্কে পাঠিয়ে দেয়। এভাবে বাইরের পরিবেশ সম্পর্কে আমাদের মস্তিষ্ক তথ্য সংগ্রহ করে সচেতন হয়ে ওঠে।

এছাড়া এখানে চুলের গোড়া, ঘর্মগ্রন্থি, তৈলগ্রন্থি, এপোক্রাইন গ্রন্থি এবং রক্তনালী বিস্তৃত থাকে। এসব রক্তনালী ডার্মিস এবং এপিডার্মিসকে প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবরাহ করে। এই দুই স্তরে বিভিন্ন কোষীয় প্রক্রিয়ায় যে সকল বর্জ্য পদার্থ উৎপন্ন হয়, তা-ও এই রক্তনালীর মাধ্যমে অপসারিত হয়।

  • হাইপোডার্মিস: 

ডারমিসের পরের  এবং সবচেয়ে শেষ স্তর হলো হাইপোডার্মিস। আমরা অনেকে একে ‘সাব-কিউটেনিস টিস্যু’ নামে চিনি। হাইপোডার্মিস অর্থ যা ডার্মিসের নিচে। ত্বকের সবচেয়ে ভেতরের এই স্তরটি মূলত চর্বির গুদামঘর হিসেবে কাজ করে। এডিপোসাইড গুলো এখানে গুচ্ছ গুচ্ছ আকারে জমা হয়ে সারা দেহে বিস্তৃত সাবকিউটেনিয়াস চর্বির স্তর তৈরি করে। এটি আমাদের দেহের সবচেয়ে বড় খাদ্যের মজুদ। অনাহারের সময় এই চর্বি বিপাক প্রক্রিয়ায় দেহে শক্তি যোগান দেয়। আবার মেদবহুল মানুষদের লক্ষ্য, জিম বা পরিশ্রমের মাধ্যমে অতিরিক্ত সঞ্চিত চর্বিকে ক্ষয় করা।

আমাদের শরীরে ইনজেকশনের মাধ্যমে যে সকল পথে ঔষধ প্রয়োগ করা হয় তার একটি উল্লেখযোগ্য জায়গা এই স্তরটি। ডায়াবেটিস রোগীদের ইনসুলিন এই স্তরেই দেওয়া হয়।

ত্বকের কাজ:

   ত্বকের কাজের ইয়ত্তা নেই। এটি যেমন দেহের সবথেকে বড় অঙ্গ, তেমনিই বড় এর কাজের পরিধি। চলুন একনজরে দেখে নেওয়া যাক সেগুলো-

  • সুরক্ষা:

ত্বকের প্রধান কাজ নিঃসন্দেহে দেহকে আবরণ প্রদান করা। বাইরের রুক্ষ আবহাওয়া থেকে ভেতরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গগুলো রক্ষা পায় এর ফলে। অতিবেগুনি রশ্মি এবং রোগ সৃষ্টিকারী জীবাণুর হাত থেকে দেহকে রক্ষা করে এই ত্বক।

  • অনুভূতি:

   মেকানোরিসেপ্টর এবং থার্মোরিসেপ্টর এর সাহায্যে পরিবেশে চাপের ও তাপের পার্থক্য অনুভব করে মস্তিষ্ককে জানান দেয়।

  • তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ:

   ত্বক শুধু তাপমাত্রা অনুভব করতে পারে তা নয়, বরং শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ ও করে। ঠান্ডার সময় দেহের সাবকিউটেনিয়াস চর্বির স্তর দেহের তাপকে বাইরে বেরোতে দেয় না। এতে শরীর উষ্ণ থাকে। আবার গরমের সময় শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে গেলে, ঘামের মাধ্যমে তাপ বের করে দেয়। ফলে শরীরে সঠিক তাপমাত্রা বজায় থাকে।

  • ইম্যুনিটি বা প্রতিরক্ষা:

   ইম্যুনিটিতে ত্বকের গুরুত্ব অপরিসীম। এছাড়া ল্যাংগারহ্যান্স কোষ এবং ম্যাক্রোফেজের সাহায্যে প্যাথোজেন থেকে দেহকে সুরক্ষা প্রদান করে। 

  • নিঃসরণ:

   আমাদের দেহ থেকে বিপাকীয় বর্জ্য পদার্থ মূলত মূত্রের সাথে বের হয়। তবে এদের একটি বড় অংশ ত্বকের মাধ্যমেও দেহ থেকে নিষ্কাশিত হয়। এই তালিকায় রয়েছে ইউরিয়া, এমোনিয়া এবং ইউরিক এসিড। ঘামের মাধ্যমেই এটি ঘটে।

  • অন্তঃক্ষরা গ্রন্থি হিসেবে ত্বক:

   ভিটামিন-ডি এর আগের ধাপ ৭-ডিহাইড্রোকোলেস্টেরল আমাদের ত্বকে সঞ্চিত থাকে। সূর্যের আলোতে এই ৭-ডিহাইড্রোকোলেস্টেরল ভিটামিন ডি-তে রূপান্তরিত হয়। 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *