চীন থেকে খালি হাতে ফিরলো বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
সম্প্রতি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চীন সফরে গিয়েছিলেন, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর চীন সফরে নজর ছিল ভারতেরও। ভূরাজনৈতিক বিশেষজ্ঞগনের ধারনা ছিল ভারতকে চাপে রূখতে শেখ হাসিনাকে চীন হয়ত পাঁচ বিলিয়ন ডলারের লোন দেবে ও তিস্তা নদী প্রকল্পে চুক্তি হবে এবং এর বদলে চীন হয়ত বাংলাদেশের থেকে চট্টগ্রাম, মোংলা বন্দরের মতোন কোনও গুরুত্বপূর্ন বন্দরের নিয়ন্ত্রন চাইবে। কিন্তু হয় এর পুরো বিপরীত। আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে সাধারনত যখন কোনও দেশের রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী অন্য একটি দেশে যায় তখন সেখানে যে চুক্তি, বৈঠক হয় তা সব আগে থেকেই ঠিক থাকে। সাধারনত কোনও দেশের রাষ্ট্রপ্রধানই অন্যদেশ থেকে চুক্তি করতে ব্যর্থ হয়ে ফিরে আসেনা। ইতিহাসে এরকম উদাহারন খুব কমই আছে। কিন্তু বাংলাদেশের ক্ষেত্রে ঠিক এটাই হয়েছে। শেখ হাসিনা চারদিনের জন্য চীন সফরে গিয়েছিল কিন্তু তিনদিনের মধ্যে তিনি দেশে ফিরে আসেন। এই বিষয়ে বাংলাদেশ সরকার জানিয়েছে শেখ হাসিনার মেয়ের শরীর খারাপের কারনে তিনি দ্রুত দেশে ফিরে এসেছেন মেয়েকে দেখতে। কিন্তু বাংলাদেশ সরকারের এই বক্তব্য কোনও আন্তর্জাতিক গনমাধ্যমই বিশ্বাস করেনি। আন্তর্জাতিক মিডিয়া অনুযায়ী বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মনে করেছিলেন তাকে হয়ত চীন ব্যাপক অভ্যর্থনা জানাবে এবং চীনের রাষ্ট্রপতি শি জিনপিং এর সাথে দীর্ঘ বৈঠক হবে কিন্ত এসব কীছুই হয়নি। উপরন্ত বাংলাদেশের পাঁচ বিলিয়ন ঋনের অনুরোধও বাতিল করে দিয়েছে। চীন বাংলাদেশকে মাত্র একশো মিলিয়ন ডলারের ঋনের প্রস্তাব দিয়েছিল যা একপ্রকার বাংলাদেশকে অপমানের সমান। ২০১৬ সালে শি জিনপিং যখন বাংলাদেশ সফরে এসেছিল তখন বাংলাদেশকে কয়েক বিলিয়ন ডলার ঋন দেওয়ার কথা জানিয়েছিল, সেই হিসাবেই বাংলাদেশ চীনের থেকে পাঁচ বিলিয়ন ডলার ঋন চেয়েছিল। কিন্তু ২০১৬ সালের চীন এবং ২০২৪ সালের চীনের মধ্যে অনেক তফাৎ।
২০১৬ সালে চীনের অর্থনীতি ব্যাপক মজবুত ছিল সেসময় চীন সবদেশে মোটা ঋন দিচ্ছিল কিন্তু বর্তমানে চীনের অর্থনীতি কিছুটা ধীরগতির হয়ে গেছে। চীনের প্রস্তাবে অবাক হয়ে গিয়েছিল শেখ হাসিনাও কারন ১০০ মিলিয়ন ঋন বাংলাদেশ অন্য কোথাও থেকেও পেয়ে যাবে। এজন্য শেখ হাসিনা তার চীন সফর থেকে একদিন আগেই ফিরে আসে। এই ঘটনার কথা বাংলাদেশ সরকার সরকারি ভাবে জানায়নি স্বাভাবিক এতে সরকারের ভাবমূর্তি বিনষ্ট হত।
যেকোনও দেশের রাষ্ট্রপ্রধান যখন অন্যদেশে কুটনৈতিক সফরে যায় তখন সেই দেশটির সর্বোচ্চ নেতা তার দেশে আসা অন্যদেশের রাষ্ট্রপ্রধানকে সর্বোচ্চ সম্মান দেয়। বাংলাদেশও সেটাই আশা করেছিল কিন্তু শেখ হাসিনার চীনে পৌঁছানোর পর চীনের রাষ্ট্রপতি শি জিনপিং মাত্র পাঁচ থেকে দশ মিনিট বৈঠক করে শেখ হাসিনার সাথে এরপর চীনের প্রিমিয়ার বাকী বৈঠক করে। এই ঘটনায় আন্তজার্তিক স্তরে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়েছে। এই ঘটনার মাধ্যমে চীন বুঝিয়ে দিয়েছে বাংলাদেশ তাদের কাছে ততটা গুরুত্বপূর্ন নয়। এই হিসাবে দেখতে শেখ হাসিনা ঠিক কাজই করেছে। তবে চীনের বাংলাদেশকে প্রতিশ্রুতি দিয়েও পাঁচ বিলিয়ন ডলার ঋন না দেওয়ায় বিশ্বের অন্যান্য দেশের কাছেও একটা বার্তা গেল যে চীন নির্ভরযোগ্য দেশ নয়, চীন চাইলে প্রতিশ্রুতি দিয়েও তা ভঙ্গ করতে পারে। বাংলাদেশের পাঁচ বিলিয়ন ডলারের মতোন বিপুল ঋন প্রয়োজন কারন বৈদেশিক মুদ্রার ঘাটতি। বাংলাদেশের রপ্তানির তুলনায় আমদানি বেড়েই চলেছে যার জন্য দেশটিতে বৈদেশিক মুদ্রার সংকট দেখা দিয়েছে। এক বছর আগেও যেখানে বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার ঘাটতি ২.৫ বিলিয়ন ডলার ছিল সেখানে তা বর্তমানে ক্রমাগত বৃদ্ধি পেয়ে ৮.৩৬ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছে গেছে। তাছাড়া বাংলাদেশ পাকিস্তানের মতোই আইএমএফ বা ইন্টারন্যাশনাল মানিটারি ফান্ড থেকে ৪.৭ বিলিয়ন ডলার ঋন নিয়েছে। আইএমএফের থেকে ঋন নেওয়ার অর্থ বাংলাদেশেও মুদ্রাস্ফীতি দেখা দেবে, জীবনযাপনের খরচ এক ধাক্কায় অনেকটাই বেড়ে যাবে যার ফলে দেশটির অর্থনীতিতেও ঋনাত্মক প্রভাব পড়বে। এই জন্য বাংলাদেশের বর্তমানে আইএমএফ ছাড়াও অন্যকোথাও থেকে পাঁচ বিলিয়ন ডলারের মতোন ঋন প্রয়োজন। বাংলাদেশের কাছে এই মূহুর্তে একটাই উপায় আছে তাহল ভারত। গত ৯ জুন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর তৃতীয়বারের মতোন প্রধানমন্ত্রী পদে শপথগ্রহনকে কেন্দ্র করে দিল্লি এসেছিলেন শেখ হাসিনা। এরপরে দুই সপ্তাহের মধ্যে আবারও দ্বিতীয়বারের মতোন ভারত সফরে আসেন তিনি। সেসময় ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে রেল নেটওয়ার্ক তৈরি নিয়ে চুক্তি হয়। অতীতে মালদ্বীপ, শ্রীলঙ্কাকে ভারত যেমন অর্থনৈতিক সহয়তা করেছিল, ঠিক তেমনি এখন বাংলাদেশও ভারতের কাছে কয়েক বিলিয়ন ডলার ঋন আশা করছে। কিন্তু ভারতের পক্ষেও এত বিপুল পরিমান ঋন দেওয়া সম্ভব নয়। তাছাড়া বারবার প্রতিবেশী দেশগুলোকে এভাবে অর্থ সাহায্য করা ভারতের পক্ষেও অসম্ভব। বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার সংকট তৈরি হওয়ার পেছনে আরও একটি বড় কারন হচ্ছে ভুল খাতে অর্থ খরচ। বাংলাদেশ তার সেনাবাহিনীর জন্য অস্ত্র কেনার জন্য বৈদেশিক অর্থ খরচ করা শুরু করেছে। বাংলাদেশের সাথে ভারত ও মায়ানমারের সীমানা রয়েছে, শুধু মায়ানমারের বিরুদ্ধে সুরক্ষার জন্য বাংলাদেশ মোটা বৈদেশিক অর্থ খরচ করছে যার প্রভাব পড়েছে দেশটির অর্থনীতিতে।