দুর্যোধনের কোন ভাইকে পাণ্ডবরা হত্যা করেনি? কি এমন কারন ছিল এর পেছনে?
নিউজ ডেস্ক: কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে বহু রথী-মহারথীরা নিজেদের প্রাণ হারিয়েছে। বিশেষ করে কৌরবদের পক্ষ থেকে যেসব শক্তিশালী যোদ্ধারা যুদ্ধ করেছিল তাদের মধ্যেই প্রায় সবাই মৃত্যুবরণ করেছিল এই যুদ্ধে যেমন গুরু দ্রোণাচার্য , ভীষ্ম, কর্ন এছাড়াও আরো অনেক বীর যোদ্ধারা। এই যুদ্ধে যে শুধুমাত্র কৌরব বংশের নাশ হয়েছিল তা নয় কৌরব বংশের পাশাপাশি কৌরব দের পক্ষ থেকে যুদ্ধ করা যোদ্ধাদের বিনাশ ঘটেছিল। কিন্তু এমন এক যোদ্ধা আছেন যিনি কৌরব দের পক্ষ থেকে যুদ্ধ করেও বেঁচে ছিলেন মহাভারতের যুদ্ধের পর। কে ছিলেন তিনি এবং তার কাছে এমন কি ক্ষমতা ছিল যার জন্য পাণ্ডবরা ও তাকে হত্যা করতে পারেননি?
মহাভারতে এমন অনেক যোদ্ধা আছে যাদের বিষয় বেশিরভাগ মানুষই জানে না কিন্তু তাদের ক্ষমতা আমাদের পরিচিত যোদ্ধাদের থেকে কিছু অংশে কম ছিলনা। মহাভারতে এমনই একটি চরিত্র হলো কৃতবর্মা যিনি কৌরবদের পক্ষ থেকে যুদ্ধ করেও মহাভারতের যুদ্ধের পরও বেঁচে ছিলেন।
রাজা হৃদিকের পুত্র ছিলেন কৃতবর্মা এবং যাদব বংশের অন্যতম এক শক্তিশালী বীর যোদ্ধা ছিলেন। মহাভারত আদিপর্ব অনুযায়ী উত্তম ধনুর্ধর ছিলেন কৃতবর্মা এবং তিনি মহাভারতের যুদ্ধের সম্পূর্ণ 18 দিন পর্যন্ত যুদ্ধ করেছিলেন। যুদ্ধ শুরু হওয়ার আগে যখন অর্জুন এবং দুর্যোধন শ্রী কৃষ্ণের কাছে সহায়তার জন্য গিয়েছিল তখন দূর্যোধন শ্রীকৃষ্ণের থেকে তার নারায়ণী সেনা চেয়েছিলে। এইজন্য কৃতবর্মা কৃষ্ণের অনুগত হওয়া সত্বেও কৌরবদের পক্ষে যোগ দিয়েছিলেন। কারণ শ্রীকৃষ্ণ দুর্যোধনকে নারায়ণী সেনা দেবার প্রতিজ্ঞা করেছিল। যেহেতু নারায়ণী সেনা সেনাপতি ছিলেন তিনি এই জন্য তাকে কৌরব দের পক্ষ থেকে যুদ্ধ করতে হয়েছিল। কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের পূর্বে কৌরবদের সভায় যখন শ্রীকৃষ্ণ সন্ধির প্রস্তাব নিয়ে গিয়েছিলেন তখন তার সাথে সাত্যকি এবং কৃতবর্মাও গিয়েছিলেন।যখন শ্রীকৃষ্ণকে বন্দি করার পরিকল্পনা করেছিলেন দুর্যোধন সহ বাকি কৌরবরা তখন সাত্যকি সেই মনভাব বুঝতে পারে যাওয়ায় তিনি সার্তকি কৃতবর্মাকে নিযুক্ত করেছিলেন যাতে দুর্যোধন কোন প্রকার চতুরতা করতে না পারেন। কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে বহুবার পান্ডবসেনাদের যুদ্ধের বিমুখ করেছিল কৃতবর্মা। অর্জুন অভিমন্নু সাত্যকিকে বাদ দিয়ে প্রায় সমস্ত পান্ডব যোদ্ধাদের পরাজিত করেছিলেন তিনি। তার কাছে পরাজিত হয়েছিল যুধিষ্ঠির ভীম শিখণ্ডী ধৃষ্টদ্যুম্ন এর মতো বীরযোদ্ধারা।
যুদ্ধের 14 দিনের মধ্যে তার কাছে দ্বিতীয় পান্ডব দুইবার পরাজিত হয়েছিলেন। এমনকি তার সাথে ঘটোৎকচ এরও প্রবল যুদ্ধ হয়েছিল।যখন পান্ডবদের পক্ষ থেকে ঘটোৎকচ পান্ডবসেনাসহ কৃতবর্মা ওপর আক্রমণ করেছিলেন। তখন কৃতবর্মা একাধিক পাণ্ডবসেনাদের সংহার করেছিলেন। তবে তিনি বহুবার পরাজিত হয়েছিলেন পান্ডবদের কাছে। কুরুক্ষেত্রে যুদ্ধে একবার ধৃষ্টদ্যুম্ন সাথে যুদ্ধ করতে গিয়ে পরাজিত হয়েছিল এই কৌবরযোদ্ধা। এমনকি অভিমুন্য নির্মম হত্যায় তারও ভূমিকা কিছু কম ছিল না। একদিকে অভিমন্যুকে কাবু করার পরামর্শ দেন গুরু দ্রোণ অন্যদিকে অভিমন্যুর ধনুক কেটে ফেলেন কর্ণ এবং অভিমন্যুর 2 সারথি বধ করেন কৃপাচার্য আর কৃতবর্মা অভিমুন্য রথের সব ঘোড়াকে মেরে ফেলেন।দুর্যোধনকে দ্বৈপায়ন সরবরে গিয়ে যুদ্ধের জন্য উৎসাহিত করেন তিনি। ভীম দুর্যোধনকে পরাজিত করায় ক্রোধিত অশ্বথামা পান্ডবদের ঘুমন্ত অবস্থাতেই বধ করার সিদ্ধান্ত নেয়। কৃতবর্মা এই ঘটনার জেনেও ওই সময়ে কোনো বিরোধ করেনি। এমনকি এই নীতি যুদ্ধের নিয়মের বিরুদ্ধে এবং এই কার্য কোন অধর্মের থেকে কম নয় এ কথা জানা সত্ত্বেও। অশ্বথামা যখন পান্ডবদের পুত্রদের বধ করেন তখন সেখানে কৃতবর্মা পান্ডবদের শিবিরের আগুন ধরিয়ে দেন এবং শিবিরের থেকে পালিয়ে যাওয়ার যোদ্ধাদের বধও করেন। তিনি অশ্বথামাকে এই সব কিছুতেই সহায়তা করেছিলেন। কুরুক্ষেত্রের সম্পূর্ণ যুদ্ধ তিনি কৌশল এবং চতুরতার সাথে লড়েছিলেন এবং এই কারণেই তিনি অন্তিম পর্যন্ত জীবিত ছিলেন । কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের সমাপ্তির পর দুর্যোধনের মৃত্যুর কথা ধৃতরাষ্ট্রকে জানিয়ে তিনি তার রাজ্যে ফিরে যান।কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের 36 বছর পেরিয়ে যাবার পর যখন শ্রীকৃষ্ণ বুঝতে পারলে যে গান্ধারীর দেওয়া অভিশাপ সত্য হতে চলেছে তখন তিনি সব যাদবদের তীর্থযাত্রায় গমন করার পরামর্শ দিলেন। একদিন যখন যাদবেরা প্রভাতীর্থে গেলেন তখন সবাই সেখানে অত্যাধিক মদিরা সেবন করেন।সর্তকির সাথে কৃতবর্মা সেখানে বাকদ্বন্ধ শুরু হয় পান্ডবদের ঘুমন্ত সন্তানদের বধ করা নিয়ে।এই বাকদ্বন্ধ এ কৃতবর্মার উপর খুবই ক্রুধিত করে যায় সর্তকি। ক্রোধের বশে সর্তকি তার তলোয়ার দিয়ে কৃতবর্মার ধড় থেকে মাথা আলাদা করে দেয়।এইভাবে সর্তকির হাতে কৃতবর্মার মৃত্যু হয়।