অফবিট

চোখ না তুলেও কিভাবে মানুষের ভেতর দেখতে পেতেন স্বামীজি?

নিউজ ডেস্কঃ স্বামী বিবেকানন্দ। শুধু দেশ নয় দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশেও বিরাট নাম পেয়েছিলেন এই মহান সন্ন্যাসী। তাঁর কথা শুনতে মানুষ দেশ বিদেশ থেকে এসে ভিড় জমাতেন। তিনি শুধু ধর্ম বা দর্শন নয় মানুষের ব্যাক্তিগত সমস্যা এবং প্রচুর মানুষকে মূলস্রোতে ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। তিনি বিবেক এবং জ্ঞানের এক বিরাট উদাহরণ। তাঁর মাত্র ৩৯ বছর বয়সের জীবনে এতো কিছু ঘটে গেছে যার ৫০ শতাংশ মানুষ মনে রাখতে হিমসিম খেতে হয়। বিদেশের প্রচুর প্রতিষ্ঠিত ব্যাক্তিকে তিনি জীবন সম্পর্কে বলেছিলেন এবং মূল স্রোতে ফিরিয়ে দিতে পেরেছিলেন।

ফরাসী গায়িকা মাদাম এমা কাল্ভে ১৮৯৪ সালের মার্চ মাস তখন, সেইসময় তিনি যশের সর্বোচ্ব শিখরে পৌঁছেছিলেন।  মেট্রোপলিটান অপেরা কোম্পানীর সংগে চিকাগোয় আসেন তিনি। এই নামকরা গায়িকা ছিলেন চড়া মেজাজী, একগুঁয়ে এবং পুরোমাত্রায় ভোগী। আর সেইসব কারনেই তাঁর জীবনে শান্তি ছিল না বললেই চলে। তিনি ছিলেন স্বামী বিচ্ছিন্না এবং তাঁর একমাত্র মেয়ে সেইসময়ে আগুনে পুড়ে শিকাগোতেই মারা গেছিল।

মাদাম কাল্ভে তখন প্রচণ্ড আত্মহত্যা প্রবণ হয়ে পড়েছিলেন। তাঁর এক বন্ধু স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে তাঁকে স্বামী বিবেকানন্দর কাছে নিয়ে যেতে চেয়ছিলেন তবে তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেন। আর এরই মধ্যে চারবার আত্মহত্যার চেষ্টা করেও বিফল হন। পঞ্চম বারের সময় যেন দৈব নির্দেশেই যে বান্ধবীর গৃহে স্বামীজি ছিলেন সেখানে এক ভোরে গিয়ে উপস্থিত হন কাল্ভে। তাঁকে বৈঠকখানায় বসান হয়। আর মাদাম যখন চেয়ারে বসে ছিলেন সেই সময়ে তিনি শুনতে পান পাশের ঘর থেকে কেউ তাকে ডাকলেন। কাল্ভে সেই পাশের ঘরে প্রবেশ করেন। স্বামীজির পাঠকক্ষ ছিল। মাদাম দেখলেন, একটি চেয়ারে স্বামীজি রয়েছেন এবং, সামনে টেবিল।

মাদাম ঘরে ঢুকে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে রইলেন। স্বামীজি ধ্যানমগ্ন এবং এক প্রশান্তির পরিবেশ সেইসময় ঘরে। একটু পরে চোখ না তুলেই স্বামীজি বললেন, ‘বাছা, কী ঝোড়ো হাওয়াই না তুমি নিয়ে এলে। শান্ত হও।’ তারপর অতি শান্তস্বরে মাদামের জীবনের গোপন জটিলতা, উদ্বেগ সম্বন্ধে বহু কথা বলতে লাগলেন, যে সব কথা মাদামের ঘনিষ্টতম বন্ধুরাও কোনোদিন জানত না। এক অলৌকিক ঘটনা। কাল্ভে হতবাক হয়ে প্রশ্ন করেছিলেন যে, ‘আপনি এত কিছু জানলেন কি করে? কে আপনাকে এত সব বলেছে? স্বামীজি মৃদু হেসে চোখ তুলে ওনার দিকে তাকালেন, এ যেন এক বালখিল্যের ন্যায় প্রশ্ন! তারপর মৃদুস্বরে বলেন, ‘কেউ আমাকে কিছু বলেনি। আমি খোলা বইয়ের মতন তোমার ভেতরটা পড়তে পারি।’ স্বামীজি বলেছিলেন যে চুপ করে বসে শুধু দুঃখের কথা ভেবোনা। তোমার আধ্যাত্মিক স্বাস্থ্যের জন্য এটা দরকার। তোমার শিল্পকলার জন্যও এটা অত্যাবশ্যক।’

সেদিন স্বামীজির কথায়, তাঁর ব্যক্তিত্বে, মুগ্ধ হয়ে বিদায় নিয়েছিলেন মাদাম এমা কাল্ভে। মাদাম কাল্ভে স্বামীজিকে পরবর্তীকালে ‘ম্ঁ পেরে’(আমার পিতা) বলে সম্বোধনও করতেন। তিনি ভারতবর্ষেও এসেছিলেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *