বিয়ের আগে কিভাবে মাতা পার্বতীকে পরীক্ষা করেছিলেন দেবাদিদেব মহাদেব?
নিউজ ডেস্কঃ আমার সবাই জানি যে মাতা পার্বতী এবং দেবাদিব মহাদেবের বিবাহ হয়েছিল। কিন্তু আপনারা কি জানেন যে এই বিবাহ করার আগে স্বয়ং মহাদেব তাঁর পরীক্ষা নিয়েছিলেন। হ্যাঁ ঠিকই শুনছেন। মাতা পার্বতীর পরীক্ষা নিয়েছিলেন মহাদেব কিন্তু কেন এই পরীক্ষা নিয়েছিলেন এবং কিভাবে পরীক্ষা নিয়েছিলেন? এই প্রশ্নটায় তো মনের মধ্যে উঠছে তাই তো।
পৌরাণিক কাহিনী অনুসারে, ভগবান শিব এবং মাতা পার্বতীর একটি কাহিনী ছিল খুব রোমাঞ্চকর। ভগবান শিবকে স্বামী হিসেবে পাওয়ার জন্য মাতা পার্বতী ঘোর তপস্যা শুরু করছিলেন। ওই সময় সমস্ত দেবতাগণ মাতা পার্বতীর এই কঠিন তপস্যা দেখে মনে মনে এই কামনা করলেন যে মাতা পার্বতীর মনোবাসনা যাতে খুব দ্রুত পূর্ণ হয়। তারপর দেবতারা ভগবান শিবকে অনুরোধ করেন মাতা পার্বতীর পরীক্ষা নেওয়ার জন্য। তখন মহাদেব মাতা পার্বতীর পরীক্ষা নেওয়ার জন্য পৃথিবীলোকে পাঠান সপ্ত ঋষিদের। সপ্তঋষিরা পৃথিবীলোকে পৌঁছে গিয়ে মাতা পার্বতীর কাছে যান এবং সেখানে গিয়ে তারা ভগবান শিবের নানা খারাপ গুন সম্পর্কে বলতে থাকেন। ঋষিদের এই সব কথা শুনেও মাতা পার্বতী তার সংকল্প থেকে নড়লেন না তাঁর সাথে তিনি সপ্তঋষিদের বলেন যে লক্ষ লক্ষ খারাপ গুন থাকলেও তিনি ভগবান শিবকে বিয়ে করবে। মাতা পার্বতীর এই সব কথা সপ্ত ঋষিরা শুনে মহাদেবকে কাছে গিয়ে জানান। সপ্ত ঋষিরা কথা শুনে তখন মহাদেব স্বয়ং নিজে মাতা পার্বতীর পরীক্ষা নেওয়ার জন্য প্রস্তুত হন। যেখানে বসে মাতা পার্বতী তপস্যা করছিলেন ঠিক তার পাশের একটি পুকুর ছিল এবং সেখানে একটি কুমির একটি শিশুকে মুখে করে নিয়ে জলের মধ্যে চলে যাচ্ছিলো। তখন শিশুটি তার প্রাণ রক্ষার জন্য প্রাণপণে চিৎকার করতে লাগলো। তখন মাতা পার্বতী ওই শিশুটির চিৎকার শুনে তার তপস্যা ছেড়ে ওই পুকুরটির কাছে যায়। এবং সেখানে গিয়ে তিনি দেখলেন যে একটি কুমির একটি শিশুকে মুখের করে নিয়ে জলের মধ্যে চলে যাচ্ছে। তখন মাতা পার্বতী হাতজোড় করে কুমিরটিকে বললেন যে এই শিশুটি নির্দোষ এই শিশুটিকে ছেড়ে দাও এর পরিবর্তে তোমার যা চাই তাই আমি তোমায় দেবো।
কুমিরটি মাতা পার্বতীর এই কথা শুনে বলেন যে সে এই শিশুটিকে ছেড়ে দেবে তবে তার একটি শর্ত আছে। কুমিরে কাছে শর্তটি জানতে চাইলে কুমিরটি বলেন যে আপনি তপস্যা করে ভগবান শিবের কাছে যে বরদান পেয়েছিলেন যদি তার সমস্ত ফল তাঁকে দিয়ে দেয় তাহলে সে ওই শিশুটিকে ছেড়ে দেবে। পার্বতী কুমিরের শুনে কোনো কিছু না ভেবেই তৈরি হয়ে গেলেন এবং তিনি বলেন যে তিনি তাঁর তপস্যার সম্পূর্ণ ফল তাঁকে দিয়ে দিতে প্রস্তুত তবে তার পরিবর্তে সে যেন এই শিশুটিকে ছেড়ে দেয়। পার্বতীর এই কথা শুনে কুমিরটি বলে উঠলো যে আপনাকে আমি আবারো ভাবার সময় দিচ্ছি আপনার কঠোর তপস্যা ফল এই শিশুটির প্রান বাঁচানোই ব্যর্থ না চলে যাবে। তবে মাতা পার্বতী তার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেন না। তিনি তাঁর তপস্যার ফল দান করে দিতেই কুমিরের শরীর চকচক করতে লাগলো। তখন কুমিরটি দেবী পার্বতীকে বলে ওঠেন যে দেখলেন এই তপস্যার ফল এতটাই বেশি যে আমি নিজেকে প্রবল তেজস্বী অনুভব করছি। এরপর কুমিরটি মাতা পার্বতীকে আরও একবার বলেন যে তিনি তাঁর সারা জীবনের সমস্ত পরিশ্রম এই অজানা শিশুর জন্য ত্যাগ করছেন যদি আপনি তাহলে আপনারা সমস্ত তপস্যার ফল ফিরিয়ে দিতে পারি। কিন্তু তাতে দেবী পার্বতী বললেন যে তিনি তাঁর সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করবেন না তিনি তাঁর সমস্ত তপস্যার ফল তাঁকে দিয়ে দিলেন তবে সে যেন তাঁর কথা অনুযায়ী সেই শিশুটিকে ছেড়ে দেয়। এরপর হঠাৎ করে কুমির এবং শিশুটি দুজনেই উধাও হয়ে যায়। এতক্ষণ তার সাথে ঠিক কি হলো কিছুই বুঝতে পারলেন না দেবী পার্বতী। এরপর পুনরায় তপস্যা করার জন্য দেবী পার্বতী সংকল্প নিলেন। আর সেই সময় ভগবান শিব সেখানে প্রকট হন এবং তিনি মাতা পার্বতীকে প্রশ্ন করেন যে সে কেন আবার তপস্যা করতে যাচ্ছে? তখন মাতা পার্বতী বললেন যে তিনি তাঁর তপস্যার সমস্ত ফল দান করে দিয়েছি। তাই তিনি আবারও মহাদেবের জন্য ঠিক তেমনি তপস্যা করবে এবং সেই তপস্যায় তিনি মহাদেবকে প্রসন্ন করবে। এই শুনে ভগবান শিব হাসতে থাকেন। তারপর মহাদেব পার্বতীকে বলেন যে ওই কুমির এবং ওই শিশুটি তিনিই ছিলাম এবং তাঁকে সমস্ত তপস্যার ফল দান করেছে। এই পরীক্ষাটি নেওয়ার জন্য এই সবকিছুই ছিল তারই লীলা। তাই মাতা পার্বতীকে আর তপস্যা করার কোনো দরকার নেই। কারন তিনি পার্বতীর এই কাজে খুব প্রসন্ন হন। এই কথা শুনে ভগবান শিবকে প্রণাম করেন মাতা পার্বতী।