অফবিট

ভগবান শ্রীকৃষ্ণের দ্বারকা নগরী হারিয়ে গিয়েছে সমুদ্রের অতল গভীরে। জানুন বিস্তারিত

নিউজ ডেস্কঃ আমরা পৌরাণিক তথ্য থেকে সবাই জানি যে দ্বারকা নগরী ছিল শ্রীকৃষ্ণের রাজধানী।যা  হারিয়ে গিয়েছে সমুদ্রের অতল গভীরে।কিন্তু কেন কিভাবে তা হয়ত অনেকেই জানেন না? এছাড়াও আরেকটি প্রশ্ন মনের মধ্যে উঠে যে সত্যি কি দ্বারকা নগরী বলতে কিছু ছিল নাকি এটি রূপকথার গল্পের মতো কাল্পনিক? দেখা যায় যে  পৌরাণিক তথ্য বলে অনেকে বিশ্বাস করে না তাই এবার এই বিষয়ের প্রমান দিচ্ছে বিজ্ঞানীরা।এই নগরীর বিষয়ে কি বলেন সেটি বিস্তারিতভাবে জেনে নিন।

দ্বারকা শব্দটি শুনলেই সবার প্রথমে যার নাম ভেসে ওঠে তিনি হলেন ভগবান শ্রীকৃষ্ণ একসময় ভারতের অন্যতম শ্রেষ্ঠ নগর বলে পরিচিত দ্বারকা হারিয়ে গিয়েছে সমুদ্রের অতল গভীরে।

এখনকার দ্বারকা শহরটি গুজরাটের জামনগর জেলায় অবস্থিত হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের কাছে চারধার নামে পরিচিত চার প্রধান তীর্থ স্থানের একটি হলো দ্বারকা আবার সপ্তসুরি নামে পরিচিত ভারতের সাতটি প্রাচীনতম শহরের অন্যতম হলো দ্বারকা। দ্বারকাকে কৃষ্ণের রাজধানী ও বলা হয়ে থাকে এ কারণে কৃষ্ণের অপর নাম দ্বারকেশ্বর শ্রীকৃষ্ণের প্রাচীন শহরকে একসময় শুধুই পুরাণকাহিনী বলে মনে হলেও 2000 সালে খুঁজে পাওয়া গেছে একে পুরাণকাহিনী অনুযায়ী কৃষ্ণের ছিল এমন এক বিশাল শহর জাতে ছিল স্বর্ণ-রৌপ্য এবং অন্যান্য মূল্যবান ধাতু দিয়ে তৈরি প্রাসাদ। কৃষ্ণের মৃত্যুর পর তাঁর তলিয়ে যায় সাগরে বর্তমানে যেখানে দ্বারকা শহর তার কাছে সাগরের 131 ফুট নিচে অবস্থিত এই প্রাচীন নগরী এর স্থাপনার মাঝে দেখা যায় অদ্ভুত রকমের জ্যামিতিক পরিমাপের ব্যবহার এর মাঝে পাওয়া যায় এমন সব নিদর্শন যায় বয়স খ্রিস্টপূর্ব 7500 সাল পর্যন্ত হতে পারে ঢাকা থেকে প্রকাশিত ভারত বিচিত্রার পঞ্চদশ বর্ষ মার্চ 1998 ফাল্গুন-চৈত্র 1394 পৃষ্ঠা 24 থেকে 28 শে মেরিন আর্কিওলজি সেন্টারের প্রজেক্ট ডাইরেক্টর ডক্টর এস.আর.রাও বলেছেন জলমগ্ন দ্বারকা নগরী খুঁজে পাওয়া গেছে অবশেষে এই প্রবন্ধে তিনি সমুদ্রে ডুবে যাওয়া জাহাজ আবিষ্কারের সময় খুঁজে পাওয়া জলের নিচে অবস্থিত হিন্দু মন্দির সহ একটা নগরী আবিষ্কারের এক সুন্দরময় বর্ণনা দেন রূপকথার গল্প থেকে তিনি তুলে আনেন দ্বারকাকে মানুষের চোখের সামনে স্থানেই পাওয়া গেছে 210টি জাহাজের ভগ্নাবশেষ যা প্রমাণ করে এখানে একসময় অবস্থিত ছিল এক বিশাল সমুদ্র বন্দর যা আবার মানুষের চোখের সামনে উঠে এসেছে ভারতীয় সমুদ্র উপকূলে অনেক প্রাচীন বন্দর ডুবে গেছে তার মাঝে দ্বারকা অন্যতম। ডুবে যাওয়ার কারণ সম্পর্কে বিজ্ঞানীরা অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর এই সিদ্ধান্তে এসেছেন যে 10 হাজার বছর আগে সমুদ্রপৃষ্ঠ বর্তমান থেকে 60 মিটার নীচু ছিল অতএব 3500 বছর আগে সমুদ্র 9 মিটার নীচু ছিল দ্বারকা ডুবে যাওয়ার কারণ সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি। বেদ দ্বারকায় যে তৈজসপত্র পাওয়া গেছে তা থেকে বৈজ্ঞানিকরা ধারণা করেন যে এই স্থানে অনেক পুরনো সভ্যতা ছিল যা মহাভারতে বর্ণিত শ্রীকৃষ্ণের দ্বারকা নগরীর সঙ্গে একেবারে মিলে যায় আসলে দ্বার এবং কা এই দুটি শব্দ থেকেই দ্বারকা শব্দটির উৎপত্তি।

দ্বার কথাটির অর্থ হলো দরজা এবং কা কথাটির অর্থ হল চিরায়িত সুখ বা মোক্ষ লাভ।তাই দ্বারকাকে অনেকে মোক্ষ প্রাপ্তির দরজা  বলে থাকেন।মোক্ষপুড়ি,মোক্ষধাম দ্বারাবতী, দ্বারামতি, কুসস্থলী ইত্যাদি নামেও দ্বারকা চিহ্নিত করা যায়।একবার নয় সাতবার সমুদ্রে গ্রাসে তলিয়ে গেছে দ্বারকা আবার ভেসে উঠেছে মহাভারতে দ্বারকা নগরির পরিচিত ছিল শ্রীকৃষ্ণ তথা যদুবংশীয়দের রাজধানী হিসেবে সমুদ্র জলরাশির মধ্যে ভেসে থাকা একটি শহর দ্বারকা আসলে দ্বীপ নগর। চারদিক থেকে জলরাশি বেষ্টন করে এই নগর রক্ষা করত দ্বারকার ছিল দুটি ভাগ মূল দ্বারকা এবং দ্বীপ দ্বারকা।বিভিন্ন পুরাণে বিশেষ করে বিষ্ণুপুরাণ এবং গরুর পুরাণের নানা শ্লোকে দেখা যাচ্ছে দুটি দ্বারকার মাঝে ছিল অগভীর সমুদ্র জোয়ারের সময় দুই দ্বারকা বিচ্ছিন্ন হয়ে যেত আবার জল নেমে গেলে জুড়ে যেত। মূল দ্বারকার দূরত্ব ছিল 30 কিলোমিটার শ্রীকৃষ্ণ বাল্যকাল শেষ করে মথুরায় চলে আসেন এবং কংস কে পরাজিত করে ন্যায় স্থাপন করেন কংসের মৃত্যুর খবর পেয়ে মগধ রাজ জরাসন্ধ বহুবার মথুরা আক্রমণ করলে যাদবরা কৃষ্ণের শরনাপন্ন হলে তিনি সৌরাষ্ট্রের পশ্চিমে সাগরপাড়ে গড়ে তোলেন দ্বারকা নগরির মূল শহর আধুনিক নগরী ছয়টি ভাগে বিভক্ত ছিল বসবাসের জায়গা এবং বাণিজ্যিক কেন্দ্র আলাদা ছিল একটি সুন্দর সমুদ্র বন্দর ছাড়াও সুধর্মসভা নামে একটি হলঘর ছিল এখানে সমস্ত আলোচনা সভা বসত। প্রায় সাত লক্ষ ছোট বড় প্রাসাদ ছিল এই নগরীতে কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের 36 বছর পর ফের একবার দ্বারকায়ে আসতে হয়েছিল অর্জুনকে কৃষ্ণের নির্দেশে তা প্রায়  3138 খ্রিস্টপূর্বে। মহাভারতের মৌষল পর্ব এবং আশ্রমবাশিকা পর্বে 250 টি শ্লোক দ্বারকার সমুদ্রে বিলীন হওয়া অর্জুনের দ্বারকায় আগমন যাদবকুলে  মাত্র কয়েকজন কে বাঁচিয়ে হস্তিনাপুরে  নিয়ে আসার বর্ণনা রয়েছে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের সৃষ্টি করা দ্বারকা নগরি যে আমাদের মাঝেই রয়েছে সেটি খুবই আশ্চর্যের একটি বিষয় ঈশ্বর যে  সত্যিই আছেন তার প্রমাণ দেয় প্রাকৃতিক গর্ভে লুকিয়ে থাকা অস্তিত্ব তাই তো কখনো কখনো বিজ্ঞানও এইসব অস্তিত্বের কাছে হার মেনে যায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *