অফবিট

বর্তমানে কিংমেকারের ভূমিকায় ভারতবর্ষ। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর রাশিয়া সফরের কারনে এবার হুমকীর সুর আমেরিকান রাষ্ট্রদূতের গলায়

সম্প্রতি ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী রাশিয়া সফরে গিয়েছিলেন। এই সফর যথেষ্ট সফল হয় এবং রাশিয়ার রাষ্ট্রপতি ভ্লাদিমির পুতিন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে রাশিয়ার সর্বোচ্চ নাগরিক সম্মান দেন। ভ্লাদিমির পুতিন ও নরেন্দ্র মোদীর আলিঙ্গনরত ছবি রীতিমতো ইন্টারনেটে ভাইরাল হয়েছে যা দেখে আমেরিকা সহ পশ্চিমা বিশ্ব খুশি নয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ঠান্ডা লড়াইয়ের সময় বিশ্ব যেমন দুটি মেরুতে বিভক্ত ছিল ঠিক তেমনি বর্তমানেও বিশ্ব আবারও দুটি মেরুতে বিভক্ত হয়ে যাচ্ছে। একদিকে রয়েছে রাশিয়া, চীন মেরু এবং আরেকদিকে রয়েছে আমেরিকান জোট। কোন জোট সবচেয়ে বেশী শক্তিশালী হবে তা অনেকটাই নির্ভর করছে ভারতের উপর। ভারত যে পক্ষে যোগ দেবে সেই পক্ষ সবচেয়ে বেশী শক্তিশালী হবে। সেই কারনে ভারত এখন রীতিমতো কিং মেকার। সেজন্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর রাশিয়া সফরের দিকে সবচেয়ে বেশী নজর ছিল আমেরিকা সহ সমস্ত পশ্চিমা বিশ্বের এবং ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর এই সফরে মোটেও খুশী নয় আমেরিকা। আমেরিকা রীতিমতো ভারত বিরোধী মন্তব্য করাও শুরু করে দিয়েছে ইতিমধ্যেই। ভারতে আমেরিকার রাষ্ট্রদূত এরিক গারসেট্টি বলেছে ভারতকে মনে রাখা দরকার কোনও যুদ্ধই দূরে নয়। যার অর্থ ইউক্রেন রাশিয়া যুদ্ধ ভারত থেকে দূরে মনে হলেও যুদ্ধের প্রভাব গোটা বিশ্বে পড়েছে। গত বছর ভারতীয় বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর এক বক্তৃতায় জানিয়েছিলেন ইউরোপ সবসময় মনে করে তাদের সমস্যা গোটা বিশ্বের সমস্যা এবং বাকী বিশ্বের সমস্যা তাদের নয়। এস জয়শঙ্করের সেই বক্তব্যের জবাব এবার এভাবেই দেওয়া শুরু করেছে আমেরিকা। এখানেই থেমে থাকেনি এরিক গারসেট্টি তিনি একটি বক্তৃতাও দিয়েছেন এই প্রসঙ্গে। এরিক গারসেট্টি তার বক্তৃতায় বেশ কয়েকবার জানিয়েছে ভারত ও আমেরিকার কারোরই উভয় দেশের মধ্যে কুটনৈতিক সম্পর্ককে হালকা করে দেখা উচিত নয়। এই পুরো বক্তৃতা শুনে ভূরাজনৈতিক বিশেষজ্ঞগনের ধারনা এরিক গারসেট্টি রীতিমতো হুমকী দিয়েছে ভারতকে। এরিক গারসেট্টি সর্বদাই আমেরিকা ও ভারতের কুটনৈতিক সম্পর্ককে জোরদার করার ব্যাপারেই কথা বলে। তার মুখে এধরনের বক্তব্য শুনে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর রাশিয়া সফরে খুশি নয় আমেরিকা। 

এরিক গারসেট্টি জানিয়েছে ভারত রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধে নিরপেক্ষ থাকতে পারবেনা, কোনও না কোনও পক্ষকে সমর্থন করতেই হবে। অতীতে ভারত বরাবরই জোট নিরপেক্ষ থেকেছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সোভিয়েত ইউনিয়ন ও আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে যখন শীতল যুদ্ধ শুরু হয় তখন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরুর নেতৃত্বে ভারত আমেরিকা ও সোভিয়েত ইউনিয়ন কোনওপক্ষেই যোগ না দিয়ে একটি  নিরপেক্ষ জোট তৈরি করে। পরে অবশ্য সোভিয়েত ইউনিয়নের দিকেই ভারত বেশী ঝুঁকে পড়ে। অর্থাৎ কোনওদেশই শেষ পর্যন্ত জোট নিরপেক্ষ থাকতে পারেনা, এটাই বোঝাতে চেয়েছে আমেরিকার রাষ্ট্রদূত এরিক গারসেট্টি। তবে ভারত যে রাশিয়া পন্থী এমনওনা। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে বিগত দশবছরে আমেরিকা ও ভারতের মধ্যে কুটনৈতিক সম্পর্ক সবচেয়ে বেশী উন্নত হয়েছে। আমেরিকার সাথে একাধিক গুরুত্বপূর্ন চুক্তি হয়েছে ভারতের। তেজস যুদ্ধবিমানের ইঞ্জিন সহ বহু সামরিক অস্ত্র আমেরিকা থেকে কেনা শুরু করেছে ভারত। তাছাড়া মহাকাশ প্রযুক্তিতেও দুই দেশ একসাথে কাজ করা শুরু করেছে। 

২০২৫ সালের মধ্যে আমেরিকা আন্তর্জাতিক মহাকাশ কেন্দ্রে একজন ভারতীয় মহাকাশচারীকে পাঠাবে। তাছাড়া দুইদেশ যৌথভাবে বিশ্বের সবচেয়ে দামী স্যাটেলাইটও নির্মান করছে। তাছাড়া ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে ভারত, আমেরিকা, জাপান ও অস্ট্রেলিয়ার নেতৃত্বে কোয়াড নামে একটি জোটও গঠন হয়েছে চীনকে প্রতিরোধের জন্য। সুতরাং বিগত দশবছরে ভারতের বিদেশনীতি সবসময় আমেরিকা ও রাশিয়ার মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করে। কিন্তু আমেরিকার এই জোট নিরপেক্ষতাও পচ্ছন্দ নয়, আমেরিকা চায় ভারত সরাসরি রাশিয়া ও চীনের বিপক্ষে গিয়ে তাদের জোটে যোগ দিক। এই একই কারনে আমেরিকা কোয়াডকে সামরিক জোট করবারও চেষ্টা করছে। আসলে ভারত যে একটি স্বাধীন নিজস্ব বিদেশনীতি রয়েছে এটা আমেরিকার পচ্ছন্দনা, আমেরিকা চায় সুপার পাওয়ার হিসাবে তাদের কথা সবাই মান্য করুক। এরিক গারসেট্টি বলেছেন আমেরিকা জানে ভারত স্পেয়ার পার্টসের জন্য রাশিয়ার উপর নির্ভরশীল কিন্তু বিশ্বের শ্রেষ্ঠ অস্ত্র রাশিয়া তৈরি করেনা, আমেরিকা ও পশ্চিমা দেশগুলো অনেক অত্যাধুনিক অস্ত্র তৈরি করে। ভারতের উচিত দ্রুত আমেরিকার থেকে অস্ত্র কেনা। আসলে বহুকাল ধরেই আমেরিকানরা মনে করে ভারত যুদ্ধাস্ত্রের জন্য রাশিয়ার উপরে নির্ভরশীল। আসলে ভারতের প্রতিরক্ষা সরঞ্জামের ৭০ শতাংশ অস্ত্রই রাশিয়ান। সুতরাং অদূর ভবিষ্যতে চীন ও পাকিস্তানের সাথে যুদ্ধ লাগলে স্পেয়ার পার্টসের জন্য রাশিয়ার উপরেই ভারত নির্ভর করবে এটাই এরিক গারসেট্টির বক্তব্য। কথাটা সত্য হলেও ভারত ও রাশিয়ার কুটনৈতিক সম্পর্ক শুধু অস্ত্র ব্যবসার উপর নির্ভর করেনা। রাশিয়া ভারতের সাথে যৌথভাবে অস্ত্র তৈরি করে, রাশিয়া ভারতে পরমানু চুল্লী নির্মান করেছে, আরও চুল্লী নির্মান করবে ভারতে রাশিয়া। এধরনের প্রযুক্তি কখনওই আমেরিকা ভারতকে দেবেনা। আবার রাশিয়া থেকে কম মূল্যে খনিজ তেল কেনে ভারত। আমেরিকা থেকে এই তেল কিনতে অনেক বেশী খরচ হয়ে যাবে। তবে আমেরিকাকেও প্রয়োজন ভারতের। আমেরিকার সমরাস্ত্র প্রযুক্তি রাশিয়ার তুলনায় কয়েকগুন ভালো। চীনের কাছে সবই রাশিয়ান অস্ত্র রয়েছে সুতরাং ভারতের আমেরিকার যুদ্ধাস্ত্র প্রয়োজন। আমেরিকার বড় বড় সংস্থাগুলি ভারতে বিপুল বিনিয়োগ করছে। সুতরাং ভারত ভূরাজনীতিতে আমেরিকা ও রাশিয়া উভয়ের মাঝেই আটকে গেছে, আমাদের দুজনকেই দরকার, কোনও একপক্ষে যোগ দেওয়া অসম্ভব। ভারত রাশিয়াকে ছেড়ে আমেরিকার পক্ষে যোগ দিলে রাশিয়া পুরোপুরি পাকিস্তান ও চীনকে সমর্থন করা শুরু করে দিবে এবং আফগানিস্তান ও ইরানকেও ভারতের বিপক্ষে করে দেবে। সুতরাং আমাদের রাশিয়াকেও প্রয়োজন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *