পোষা প্রানীর নাম রাখছে হামাস। ফিলিস্তিনের সাধারন মানুষই এখন হামাসকে পচ্ছন্দ করছেনা! গাজাবাসী হামাসের নেতার মৃত্যু চাইছে!
গত অক্টোবর মাস থেকে শুরু হওয়া ইসরায়েল হামাস যুদ্ধ দশ মাসে এসে পৌঁছেছে। এখনও যুদ্ধবিরতির কোনও লক্ষনই দেখা যাচ্ছেনা। এই যুদ্ধে উভয়পক্ষেরই ক্ষতি হয়েছে। অক্টোবর মাসে হামাস সদস্যদের আক্রমনের পর থেকে এখনও পর্যন্ত ইসরায়েলের প্রায় ১,৬০০ জন নাগরিকের মৃত্যু হয়েছে। বহু ইসরায়েলি নাগরিককে হামাস অপহরন করে নিয়ে গিয়েছে। এর বিপরীতে হামাসের বহু সদস্যও মারা যায় ইসরায়েলের সেনাবাহিনীর অভিযানে এবং ইসরায়েলি বায়ুসেনার আক্রমনে। তবে এই যুদ্ধে সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ফিলিস্তিনের সাধারন মানুষ। সরকারি ভাবে ফিলিস্তিনের প্রায় ৪০,০০০ মানুষের মৃত্যু হয়েছে এই দশমাসে। তবে বেসরকারী ভাবে এই সংখ্যা আরও অনেকবেশী বলে দাবী করা হচ্ছে। ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের দ্বন্দ্বে ইতিপূর্বে এত মানুষের কখনও মৃত্যু হয়নি অতীতে। তাছাড়া গাজা উপত্যকাতে কয়েক লাখ মানুষ ঘরছাড়া হয়েছে। আসলে যুদ্ধের পরিনয় সবসময় এরকমই হয়। যুদ্ধে সবসময় উভয়পক্ষের সাধারন মানুষই বেশী ক্ষতিগ্রস্ত হয়। গত ৭ অক্টোবর হামাস সদস্যরা যখন অতর্কিতে আক্রমন করে ইসরায়েলে তখন গাজা উপত্যকা সহ বহু দেশেই হামাসের এই আক্রমনকে রীতিমতো সমর্থন করা হচ্ছিলো। কিন্তু ইসরায়েলের সেনাবাহিনী ও বায়ুসেনা যখন পাল্টা অভিযান শুরু করে তখন মাত্র কয়েক মাসের মধ্যে চিত্রটা বদলে যায়। বর্তমানে গাজা উপত্যকাতে হামাসের জনপ্রিয়তা একদম নেই। ফিলিস্তিনের সাধারন মানুষই হামাসকে অপচ্ছন্দ করছে। এমনকী হামাসের রাজনৈতিক নেতা ইয়াহিয়া সিনওয়ারের মৃত্যু পর্যন্ত চাইছে গাজার মানুষজন। ফিলিস্তিনের মানুষ মনে করছে তাদের এই দুরাবস্থার জন্য ইয়াহিয়া সিনওয়ারই দায়ী কারন সেই ইসরায়েলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করেছে আগে। যদিও ইসরায়েলেও যুদ্ধের কারনে দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর জনপ্রিয়তা ব্যাপক কমে গেছে। ইসরায়েলের মানুষ রাস্তায় নেমে যুদ্ধবিরতির জন্য প্রতিবাদ করছে। আমেরিকার মতো ইসরায়েলের ঘনিষ্ঠ মিত্রদেশ পর্যন্ত ইসরায়েল সরকারের সমালোচনা করেছে।
ইসরায়েল ও প্যালেস্টাইনের মধ্যে শান্তি স্থাপনের জন্য ১৯৯৩ সালে ওয়াশিংটনে অসলো চুক্তি ১ সাক্ষরিত হয় দুই দেশের মধ্যে। ১৯৯৫ সালে মিশরে অসলো চুক্তি ২ সাক্ষরিত হয়। এই দুই চুক্তিতেই ইসরায়েল ও প্যালেস্টাইনের মধ্যে সমঝোতার জন্য আমেরিকা ও মিশর মধ্যস্থতা করে। চুক্তি অনুযায়ী ইসরায়েল ও প্যালেস্টাইন উভয় দেশকেই নিজ নিজ এলাকা শান্তিপূর্ন থাকার ব্যাপারে কথা হয়। এই চুক্তি অনুযায়ী প্যালেস্টাইন সরকার গঠন করা হয় যার কাজ ছিল ফিলিস্তিনীয় অঞ্চলে শাসন করা অর্থাৎ গাজা ও পশ্চিম তীরে। ফাতেহ নামে একটি দলই প্যালেস্টাইন সরকার গঠন করেছিল। মেহমুদ আব্বাসকে ফতেহর প্রেসিডেন্ট নিযুক্ত করা হয়েছিল। কিন্তু ২০০৭ সাল আসতে আসতে গাজাতে পরিস্থিতি পরিবর্তন হতে শুরু করে। হামাস নামে একটি সংগঠন তৈরি হয় গাজাতে যারা সরাসরি ইসরায়েলের বিরোধীতা শুরু করে। হামাস ও ফাতেহর চিন্তাধারা সম্পূর্ন বিপরীত ছিল যার জন্য উভয় দলের মধ্যে সশস্ত্র সংঘর্ষ হয় যাতে হামাস জয়ী হয়। গাজার সাধারন মানুষজনও তখন হামাসকেই সমর্থন করা শুরু করে। ২০০৭ সালে গাজাতে নির্বাচনে হামাস জয়লাভ করে এবং তখন থেকে গাজাতে হামাসেরই প্রভাব রয়েছে। ফতেহ শুধুমাত্র ইসরায়েলের পশ্চিমতীরেই সীমাবদ্ধ হয়ে পড়ে। কিন্তু হামাসকে কোনও আন্তর্জাতিক সংগঠন স্বীকৃতি দেয়নি, উপরন্তু হামাসকে অনেক দেশই জঙ্গী সংগঠন বলে ঘোষনা করে। ফাতেহ ইসরায়েলকে একটি দেশ হিসাবে স্বীকৃতি দেয় এবং ফাতেহ ১৯৬৭ সালের চুক্তি অনুযায়ী ইসরায়েল ও প্যালেস্টাইনের সীমান্তকে মান্যতা দিয়ে উভয় দেশের অস্তিত্বেই বিশ্বাস করতো। বিশ্বের অনেক দেশই দুই দেশ তত্বে অর্থাৎ ইসরায়েল ও প্যালেস্টাইন উভয় দেশের অস্তিত্বেই বিশ্বাসী। ভারতও দুই দেশ তত্ত্বকেই সমর্থন করে। কিন্তু হামাস ফাতেহর পুরোপুরি বিপরীত, হামাস সশস্ত্র প্রতিরোধে বিশ্বাসী এবং হামাস ইসরায়েলকে স্বাধীন দেশ হিসাবে মান্যই করেনা। হামাসের নেতা ইয়াহিয়া সিনওয়ার গত ৭ অক্টোবরে ইসরায়েলে এযাবৎকালের সবচেয়ে বড় আক্রমন করায়। বহু হামাস সদস্য ইসরায়েলে ঢুকে ১,২০০ জন নিরস্ত্র ইসরায়েলি নাগরিককে হত্যা করে এবং কয়েকশো ইসরায়েলি নাগরিককে বন্দী করে নিয়ে যায়। গাজাতে সেসময় হামাস সদস্যদের রীতিমতো নায়কের মতো অভ্যর্থনা জানানো হয়েছিল। গাজাতে বন্দী আহত ইসরায়েলিদের রীতিমতো প্যারেড করানো হয়েছিল এবং মানুষজন তাদের অপমান করছিলো। গাজার রাস্তায় ফিলিস্তিনি নাগরিকরা রীতিমতো আনন্দ মিছিল করছিলো। তার ভেবেছিলো ১৯৬৭ সালে ইসরায়েলের সাথে যুদ্ধে হেরে যাওয়ার প্রতিশোধ নিয়েছে হামাস। কিন্তু ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু যেই পাল্টা আক্রমনের নির্দেশ দেয় তারপরেই বিগত কয়েক মাসে গাজাবাসী বুঝতে পারে হামাস তাদের কত বড় ক্ষতি করে দিয়েছে। ইসরায়েলি অভিযান থেকে প্রানে বাঁচতে হামাসের বহু শীর্ষস্থানীয় নেতা কাতার, মিশর পালিয়ে গিয়েছে, ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সাধারন মানুষ। ওয়েস্টব্যাঙ্ক ইন্সটিটিউট ফর সোশ্যাল এন্ড ইকোনমিক পোগ্রেস বা আইএসইপির সমীক্ষাতে দেখা গেছে গাজার ৫৯.৯ মানুষ মনে করছে ইয়াহিয়া সিনওয়ারকে ক্ষমতাচ্যুত করা দরকার, সিনওয়ারই এই যুদ্ধ শুরু করেছে। গাজার সিংহভাগ মানুষ জানিয়েছে হামাস একটি সন্ত্রাসী সংগঠন তাদের কারনেই গাজাবাসীর চরম দুর্দশা হয়েছে। তাদের মতে ফাতাহ থাকলেই ভালো হত। গাজার ৪৪.৬ শতাংশ মানুষ মনে করে ফিলিস্তিনি ভূমিতে হামাসের বদলে প্যালেস্টাইন সরকার থাকা দরকার। শুধুমাত্র ৩ শতাংশ লোক হামাসকে সমর্থন করছে গাজাতে। ফিলিস্তিনের জনগন বুঝতে পেরেছে ইসরায়েলের সাথে সরাসরি যুদ্ধ করা কখনও সম্ভব নয় কারন ইসরায়েল সেই দেশ যারা মাত্র ছয়দিনে সমস্ত আরব দেশগুলোকে পরাজিত করেছিল। ইসরায়েলের সমর্থনে আমেরিকা রয়েছে।
গোটা বিশ্বে আমেরিকার ৮০০ সামরিক বেস রয়েছে সুতরাং ফিলিস্তিনবাসী জানে ইসরায়েলের সাথে যুদ্ধ করা সম্ভব নয়, তাই তারা শান্তিপূর্ন ভাবে ইসরায়েলের সাথে বসবাসেই আগ্রহী। বড়বড় আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে গাজার সাধারন মানুষ জানিয়েছে হামাসকে গাজাবাসী এতটাই ঘেন্না করে যে তাদের পোষা প্রানীর নাম রাখছে হামাসের নামে। তারা এটাও বলছে গাজার বাইরে বহু দেশের মানুষই হামাসকে সমর্থন করছে কিন্তু তারা এমন মানুষ যারা এসি ঘরে বসে হামাসকে সমর্থন করছে তারা গাজার প্রকৃত অবস্থা সম্পর্কে অবগত নয়। তাদের কেউই গাজাতে তাদের সন্তান হারায়নি। গাজাবাসী ওপরওয়ালার কাছে ইয়াহিয়া সিনওয়ারের মৃত্যু চাইছে যাতে এই প্রানঘাতী যুদ্ধ বন্ধ হয়।