অফবিট

প্রজেক্ট ৭৬। ভারতীয় নৌবাহিনীর জন্য নতুন সাবমেরিন তৈরি করতে চলেছে DRDO

ডিআরডিও ভারতীয় নৌবাহিনীর জন্য একটি নতুন সাবমেরিন প্রকল্প প্রজেক্ট ৭৬ শুরু করতে চলেছে। এই প্রজেক্টে ডিআরডিও ভারতের নিজস্ব প্রযুক্তিতে তৈরি কনভেনশনাল সাবমেরিন তৈরি করবে। ডিআরডিও ইতিমধ্যেই এই প্রজেক্টের জন্য প্রাথমিক পর্যায়ের গবেষনা শুরু করেছে। ভারতীয় নৌবাহিনীর জন্য পরমানু শক্তিচালিত সাবমেরিন ও কমভেনশনাল ডিজেল ইলেকট্রিক সাবমেরিনের জন্য ভিন্ন ভিন্ন প্রজেক্ট রয়েছে। পরমানু শক্তিচালিত সাবমেরিন সবচেয়ে শক্ত হলেও ডিজেল সাবমেরিন অনেক বেশী দ্রুতগতির এবং তুলনামূলক অগভীর জলেও যেতে সক্ষম। তাছাড়া ডিজেল ইলেকট্রিক সাবমেরিনের দাম পরমানু সাবমেরিনের থেকেও অনেক কম। এই জন্য ভারতীয় নৌবাহিনী ডিজেল ইলেকট্রিক সাবমেরিনের উপর বেশী গুরুত্ব দিয়েছে। বিশ্বের চতুর্থ শক্তিশালী দেশ হলেও ভারতীয় নৌবাহিনীতে সাবমেরিনের ঘাটতি রয়েছে। ভারতের বিশাল সমুদ্রসীমা হওয়া সত্ত্বেও ভারতীয় নৌবাহিনীতে মাত্র ষোলোটি কনভেনশনাল সাবমেরিন রয়েছে। যার মধ্যে ছয়টি ফ্রান্স থেকে কেনা স্করপিয়ান বা কালভেরী শ্রেনীর, চারটি জার্মানি থেকে কেনা শিশুমার শ্রেনীর এবং ছয়টি রাশিয়া থেকে কেনা কিলো শ্রেনীর সাবমেরিন। অর্থাৎ সমস্ত সাবমেরিনই বিদেশী প্রযুক্তির। তাই ডিআরডিও এবার নিজস্ব প্রযুক্তিতে সাবমেরিন তৈরি করতে চলেছে যাতে ভবিষ্যতে এসব দেশের উপর অতিরিক্ত নির্ভরশীল হতে না হয়। তাছাড়া শিশুমার ও কিলো শ্রেনীর সাবমেরিনগুলো যথেষ্ট পুরোনো, খুব তাড়াতাড়িই এগুলো অবসরে যাবে যার জন্য ভারতের নতুন সাবমেরিন দরকার। এই জন্য ভারতীয় নৌবাহিনীর ভবিষ্যতের জন্য প্রজেক্ট ৭৬ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন একটি পদক্ষেপ। প্রজেক্ট ৭৫ এর আওতায় ভারতীয় নৌবাহিনীতে যুক্ত হওয়া ছয়টি কালভেরী শ্রেনীর সাবমেরিনের মোট ডিসপ্লেসমেন্ট ১,৬০০-১,৭০০ টন। ডিআরডিও প্রজেক্ট ৭৬ এর অধীনে যেসব সাবমেরিন তৈরি করতে চলেছে তাদের ডিসপ্লেসমেন্ট অন্তত ৩০০০ টন হবে অর্থাৎ কালভেরী শ্রেনীর সাবমেরিন দ্বিগুন। রাশিয়া থেকে কেনা সিন্ধুঘোষ বা কিলো শ্রেনীর সাবমেরিনগুলোর ডিসপ্লেসমেন্ট ছিল ৩০০০ টন, এবার ভারত নিজস্ব প্রযুক্তিতেই ৩০০০ টনের সাবমেরিন তৈরি করতে চলেছে। এই জন্য এই সাবমেরিনগুলোকে সুপার কালভেরী শ্রেনীর সাবমেরিন বলা হচ্ছে। সাধারনত ভারতীয় নৌবাহিনীর সমস্ত সাবমেরিন প্রজেক্টে ছয়টি করে সাবমেরিন তৈরি করা হয়। কিন্তু প্রজেক্ট ৭৬ এর আওতায় ১২টি সাবমেরিন তৈরি করা হবে। ভারতের কোচিন শিপইয়ার্ড, মাঁজগাও শিপইয়ার্ডে এতদিন পর্যন্ত সাবমেরিন তৈরি করা হলেও সাবমেরিন ডিজাইন করা কোনওদিন হয়নি। কিন্তু এবার ডিআরডিও নিজেই সাবমেরিন ডিজাইনও করছে। 

ভারতীয় নৌবাহিনীতে আধুনিক কনভেনশনাল সাবমেরিন যুক্ত করার যাত্রা শুরু হয় প্রজেক্ট ৭৫ এর মাধ্যমে। এই প্রজেক্টে ছয়টি স্করপিয়ন শ্রেনীর সাবমেরিনের জন্য ভারত ও ফ্রান্সের মধ্যে চুক্তি হয়েছিল। এই ছয়টি সাবমেরিন মুম্বাইয়ের মাঁজগাও শিপইয়ার্ডে তৈরি হলেও এর ডিজাইন ছিল ফ্রান্সের বিখ্যাত সাবমেরিন নির্মান সংস্থা নেভাল গ্রুপের। ভারতীয় নৌবাহিনীতে থাকা সবচেয়ে আধুনিক কনভেনশনাল সাবমেরিন এই স্করপিয়ন শ্রেনীর সাবমেরিনগুলোই। ক্যাবিনেট কমিটি অন সিকিউরিটি বা সিসিএস ডিআরডিওকে প্রজেক্ট ৭৬ এর জন্য সবুজ সংকেত দিয়ে দিয়েছে। ডিআরডিও এক বছরের মধ্যে এই প্রজেক্টের ব্যপাারে যাবতীয় গবেষনা করে তার রিপোর্ট সিসিএসকে দেবে এবং তারপরেই এই প্রজেক্টের জন্য চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হবে। প্রজেক্ট ৭৬ এর সাবমেরিনের ডিজাইন যেমন ভারতের নিজস্ব হবে ঠিক তেমনি সাবমেরিনগুলোর সমস্ত প্রযুক্তি যেমন মিসাইল, টর্পেডো, সোনার, সংযোগ ব্যবস্থা, ইলেকট্রনিক ওয়ারফেয়ার স্যুট, পেরিস্কোপ সহ সমস্ত জিনিস সম্পূর্ন দেশীয় প্রযুক্তিতেই তৈরি করা হবে। আধুনিক কনভেনশনাল সাবমেরিনের একটি গুরুত্বপূর্ন প্রযুক্তি হচ্ছে এআইপি বা এয়ার ইন্ডিপেন্ডেন্ট প্রোপালশন সিস্টেম। বিশ্বের গুটিকয়েক দেশের কাছেই এই প্রযুক্তি রয়েছে। এআইপি প্রযুক্তির মাধ্যমে একটি কনভেনশনাল সাবমেরিন বেশ কয়েক সপ্তাহ জলের নীচেই থাকতে পারে। ডিআরডিও ইতিমধ্যেই নিজস্ব প্রযুক্তিতে একটি এআইপি প্রযুক্তি তৈরি করেছে। 

২০২৫ সালের মধ্যে প্রথম কালভেরী সাবমেরিনে এই প্রযুক্তি যুক্ত করা হবে। এর পরবর্তী দুই, তিন বছরের মধ্যে বাকী সমস্ত কালভেরী সাবমেরিনেও এই প্রযুক্তি যুক্ত করা হবে। এআইপি প্রযুক্তি কালভেরী সাবমেরিনকে আরও বেশী ঘাতক করে তুলবে। ভবিষ্যতে প্রজেক্ট ৭৬ এর অধীনে তৈরি সুপার কালভেরী শ্রেনীর সাবমেরিনেও এই প্রযুক্তি যুক্ত করা হবে। প্রজেক্ট ৭৬ এর সাবমেরিনগুলোতে সর্বাধুনিক লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারি ব্যবহার করা হবে। ২০২৮ সালের মধ্যে প্রথম সাবমেরিনের প্রোটোটাইপ তৈরি করা হবে। প্রজেক্ট ৭৬ এর পাশাপাশি প্রজেক্ট ৭৫ আই এর অধীনেও ছয়টি সাবমেরিন কেনা হবে। অর্থাৎ অদূর ভবিষ্যতে ভারতীয় নৌবাহিনীতে ২৪টি আধুনিক কনভেনশনাল ডিজেল ইলেকট্রিক সাবমেরিন থাকবে। তাছাড়া ভারতীয় নৌবাহিনীর পরমানু সাবমেরিন এসএসবিএন ও এসএসএন তৈরির প্রজেক্টও চলছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *