অফবিট

ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে রাশিয়ান সেনাবাহিনী বাইকের ব্যবহার শুরু করেছে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর এই প্রথম

যখনই কোনও যুদ্ধ দীর্ঘমেয়াদি ভাবে চলে তখন নির্দিষ্ট সময় অন্তর অন্তর যুদ্ধে নতুন কিছু প্রযুক্তির ব্যবহার বা এমন কিছু লক্ষ্য করা যায় যা আগে কখনও দেখা যায়নি। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধেও এই কারনে বহু আধুনিক প্রযুক্তি, অস্ত্র, চিকিৎসা পদ্ধতির উদ্ভব হয়েছিল। সম্প্রতি রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধেও একটি অবাক করার মতোন ঘটনা দেখা গেল। ইউক্রেনের সাথে যুদ্ধে রাশিয়া এবার বাইকের ব্যবহার শুরু করেছে। গত দুই বছর ধরে চলা রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধে এখনও পর্যন্ত রাশিয়া ১৫,০০০ ট্যাঙ্ক ও সাঁজোয়া গাড়ি হারিয়েছে, রাশিয়ান সেনাবাহিনীর বাইক ব্যবহার করার এটাও একটা বড় কারন। বাইক বা মটর সাইকেলে খুব সহজেই আরও দ্রুত ইউক্রেন সেনাদের ঘাঁটির কাছে পৌঁছানো সম্ভব হবে। বাইক ছাড়াও অন্যান্য অসামরিক গাড়ির ব্যবহারও শুরু করেছে রাশিয়ান সেনাবাহিনী। 

রাশিয়ান সেনাবাহিনী বিভিন্ন ধরনের অসামরিক গাড়ি ব্যবহার শুরু করেছে যার মধ্যে প্রথমেই রয়েছে এমন এক ধরনের মটর সাইকেল যাতে অন্তত তিনজন যাওয়া যাবে। শোলে সিনেমায় জয় ও বীরু যে মটর সাইকেল ব্যবহার করেছিল সেই ধরনের মোটরসাইকেলই রাশিয়ান সেনাবাহিনী ব্যবহার করছে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় থেকেই এধরনের মটর সাইকেলের ব্যবহার শুরু হয়েছিল যুদ্ধক্ষেত্রে। কিন্তু ধীরে ধীরে আধুনিক প্রযুক্তির আর্মার গাড়ির ব্যবহার শুরু হয় যুদ্ধক্ষেত্রে। কিন্ত পর্যাপ্ত সাঁজোয়া গাড়ির ঘাটতির জন্য ও অত্যাধিক খরচের কারনে রাশিয়া বর্তমানে বাধ্য হয়েছে মটর সাইকেল ব্যবহারে। ডার্ট বাইক নামে আরও এক ধরনের মটর সাইকেল ব্যবহার করছে রাশিয়ান সেনাবাহিনী। এইধরনের বাইক কর্দমাক্ত রাস্তাতেও স্বাচ্ছন্দ্যে চলাচল করতে সক্ষম। কোয়ার্ডিসাইকেলস নামে একধরনের চারচাকা বিশেষ বাইক আছে যেগুলো সাধারন সমুদ্র সৈকতে মানুষজন চালায়। এইধরনের গাড়িতে ব্রাজুকা বা আরপিজি, মেশিন গান যুক্ত করে যুদ্ধ উপযোগী করে তুলেছে রাশিয়া। বিখ্যাত মোবাইল গেম পাবজি বা বিজিএমআইএ ডিউন বাগি নামে একধরনের গাড়ি রয়েছে, বাস্তবে রাশিয়া এই ধরনের বাগিও যুদ্ধক্ষেত্রে ব্যবহার করা শুরু করেছে। ডিউনবাগি যথেষ্ট হালকা ও উচ্চগতির হয়। হালকা হওয়ার কারনে বাগি যেকোনও ভূমিতে সহজেই চলাচল করতে পারে, বাগিতে দুইজন ব্যক্তি বসতে পারে। এধরনের বাগি গাড়িতে রাশিয়া মেশিমগান ব্যবহার করে তাকে যুদ্ধে ব্যবহার উপযোগী করে তুলেছে। এভাবে ইউক্রেনের সাথে যুদ্ধে রাশিয়া এক নতুন ধরনের পরিবহন পদ্ধতি শুরু করেছে। পূর্ব ইউক্রেনের ডনবাস অঞ্চলে মূলত এধরনের অসামরিক গাড়ি ব্যবহার করছে রাশিয়ান সেনাবাহিনী। এসব গাড়ি ব্যবহার করে সাম্প্রতিক সময়ে ইউক্রেনের সেনাঘাঁটির উপর আক্রমনে রীতিমতো সাফল্য পেয়েছে রাশিয়া। ইউক্রেনের সেনাঘাঁটির কাছে সর্বদাই নজরদারি ড্রোন, কমব্যাট ড্রোন উড়ছে। এরকম অবস্থায় রাশিয়া কোনও বড় ট্যাঙ্ক দিয়ে আক্রমনের চেষ্টা করলে সহজেই রাশিয়ান ট্যাঙ্ক ধ্বংস করে দেবে ইউক্রেন, এভাবেই বহু ট্যাঙ্ক হারিয়েছে রাশিয়া। কিন্তু সেই তুলনায় ছোট ছোট দ্রুতগামী অসামরিক গাড়ি দিয়ে আক্রমন করলে ড্রোন দিয়ে খুঁজে পেতে কিছুটা সময় লাগবে। বিশ্বের সবচেয়ে বড় দেশ রাশিয়া ইউক্রেনে প্রতি ইঞ্চি ভূমির জন্য লড়াই করছে। রাশিয়ান ক্যাপ্টেন ইয়ারোস্লাভ ইতিমধ্যেই জানিয়েছে তারা প্রতি মিটার জায়গার জন্য লড়াই করবে। দুই বছর আগে যখন ইউক্রেনের সাথে রাশিয়ার যুদ্ধ শুরু হয়েছিল তখন রাশিয়া ভেবেছিল কয়েক সপ্তাহেই ইউক্রেন পরাজিত হবে কিন্তু আমেরিকা, সহ পশ্চিমা দেশগুলোর সমর্থনে ইউক্রেন রীতিমতো টক্কর দিচ্ছে রাশিয়ার সাথে। এজন্য আপাতত রাশিয়া ইউক্রেনে ধীরে চলো নীতি নিয়েছে। রাশিয়া ইউরোপ সহ সমগ্র বিশ্বে সবচেয়ে বড় দেশ। ইউক্রেন আয়তনে ইউরোপের দ্বিতীয় বড় দেশ। রাশিয়ার বহুদিন ধরেই লক্ষ্য ইউক্রেন দখল করা। 

২০১৪ সালে ইউক্রেনের ক্রিমিয়া দখল করে নেয় রাশিয়া। গত ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে ইউক্রেন আক্রমন করে রাশিয়া। তবে এখন রাশিয়ান প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন চাইছে যুদ্ধবিরতি করতে এবং তারা যে জায়গা ইউক্রেনের দখল করেছে সেটা নিজেদের কাছে রাখতে। এখনে রাশিয়ার একটি বড় ধরনের চালাকি রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে যুদ্ধের পর রাশিয়া পূর্ব ইউক্রেনের অনেকাংশই দখল করেছে, যুদ্ধে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির কারনে রাশিয়া চাইছে যুদ্ধবিরতি করতে যাতে পুনরায় তাদের সামরিক পরিকাঠামো মজবুত করতে পারে, এরপর আবারও সুযোগ বুঝে রাশিয়া ইউক্রেন আক্রমন করবে। এই জন্য রাশিয়ার যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে না করে দিয়েছে ইউক্রেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *