Uncategorised

ভারত ও চীনের মধ্যে কোবাল্ট যুদ্ধ শুরু

ভূরজানীতিতে ভারত মহাসাগর বরাবরই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন। তবে সম্প্রতি কোবাল্টকে কেন্দ্র করে ভারত মহাসাগর আন্তর্জাতিক সংবাদের শিরোনামে রয়েছে। ভারত মহাসাগরের তলদেশে কয়েক বিলিয়ন ডলারের কোবাল্ট রয়েছে। ভারত মহাসাগরের তলদেশে এই কোবাল্ট নিয়ে রীতিমতো প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে গেছে ভারত ও চীনের মধ্যে। চীন ইতিমধ্যেই এই প্রতিযোগিতায় ভারতের থেকে পিছিয়ে পড়েছে। চীন ভয়ে রয়েছে ভারত মহাসাগরের তলদেশে থাকা এই কোবাল্টোর পাহাড় ভারতের হাতে না চলে যায় এবং ভারত খননকার্য না শুুরু করে দেয়। ভূরাজনৈতিক বিশেষজ্ঞগন ভারত ও চীনের মধ্যে কোবাল্ট প্রতিযোগিতার এই নাম দিয়েছে ভারত মহাসাগরের কোবাল্ট যুদ্ধ। 

প্রাকৃতিক ভাবে প্রাপ্ত কোবাল্টের রঙ হয় নীল। বলা হচ্ছে আগামীদিনে জীবাশ্ম জ্বালানির পরিবর্তে ইলেকট্রিক গাড়ি চলাচল করবে। ২০৩০ এর মধ্যে ভারতের অধিকাংশ গাড়িই ইলেকট্রিক হবে। এই ইলেকট্রিক গাড়ি, মোবাইল ফোনে লিথিয়াম ব্যাটারি ব্যবহার করা হয়। লিথিয়াম ব্যাটারি নির্মানে লিথিয়াম ছাড়াও কোবাল্টের প্রয়োজন। সমস্ত ইলেকট্রনিক্স জিনিসের লিথিয়াম ব্যাটারি নির্মানে, বিমানের ইঞ্জিন নির্মানে, বায়ুশক্তি উৎপাদনের জন্য টারবাইন নির্মানে এবং উচ্চমানের স্টিল নির্মানে কোবাল্টের প্রয়োজন। কোবাল্ট খুবই দুস্পাপ্য ধাতু, বিশ্বের খুব কম জায়গাতেই কোবাল্ট পাওয়া যায়। ভারত মহাসাগরের গভীরে থাকা কোবাল্ট প্রাচীরে ভারত যদি পৌঁছে যায় এবং খননকার্যের অনুমোদন পেয়ে যায় তাহলে এটা ভারতের জন্য গেমচেঞ্জার হবে। ভারত মহাসাগরের একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলে নিকিতিন সীমাউন্ট নামক প্রকৃতির এক অসাধারন সৃষ্টি রয়েছে। কয়েক মিলিয়ন বছর আগে এখানে আগ্নেয়গিরি ছিল। আগ্নেয়গিরির বিস্ফোরনের ফলে ম্যাগমা জমে ভারত মহাসাগরের তলদেশে নিকিতিন সীমাউন্ট নামক পাহাড় তৈরি করেছে। ভারত মহাসাগরে আগ্নেয়গিরির সংখ্যা খুবই কম, আগ্নেয়গিরি সাধারনত বেশী রয়েছে প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে। এই নিকিতিন সীমাউন্টে কোবাল্ট, তামা সহ মূলব্যান ধাতু প্রচুর পরিমানে রয়েছে যার মূল্য কয়েকশো বিলিয়ন ডলার। ভারত আন্তর্জাতিক সংগঠনের কাছে অনুমোদন চেয়েছে নিকিতিন সীমাউন্টে খননকার্যের জন্য। যেহেতু নিকিতিন সীমাউন্ট আন্তর্জাতিক জলসীমায় রয়েছে তাই এখানে খননকার্যের জন্য আন্তর্জাতিক সংগঠনের অনুমোদন প্রয়োজন। জামাইকায় অবস্থিত ইন্টারন্যাশনাল সীবেড অথরিটিকে ভারত ইতিমধ্যেই প্রস্তাব দিয়েছে নিকিতিন সীমাউন্টে খননকার্য করার জন্য। ভারত জানিয়েছে এর ফলে গোটা ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলেরই উন্নয়ন হবে। মজার ব্যাপার হল ইন্টারন্যাশনাল সীবেড অথরিটিতে একবার প্রস্তাব দিতে খরচ হয় পাঁচ লাখ ডলার বা প্রায় চার কোটি কুড়ি লাখা টাকা। তবে অনুমোদন পাওয়া এতটা সহজ হবেনা। কারন শ্রীলঙ্কাও খনন কার্যের জন্য সীবেড অথরিটিতে প্রস্তাব দিয়েছে। শ্রীলঙ্কা জানিয়েছে নিকিতিন সীমাউন্টের সবচেয়ে কাছে শ্রীলঙ্কা রয়েছে সুতরাং শ্রীলঙ্কার বেশী অধিকার রয়েছে এখানে মাইনিং করার। যে শ্রীলঙ্কা বিগত কয়েক বছর ধরে অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের মধ্যে রয়েছে, ভারতের সাহায্য নিয়ে দুইবছর দেশ চলেছে সেই শ্রীলঙ্কা ভারতের সাথে প্রতিযোগিতা করছে এটা অনেকটাই আশ্চর্যের! তবে এখানে শ্রীলঙ্কার পেছনে চীন রয়েছে। শ্রীলঙ্কার কাছে এত অর্থ নেই, চীন চাইছে একবার শ্রীলঙ্কা অনুমোদন পেয়ে গেলে তারাই যাবতীয় কাজ করবে। মালদ্বীপও খননকার্যের দাবী করেছিল কিন্তু মালদ্বীপের কাছে অর্থ নেই সেজন্য তারা পীছু হটে গেছে। এখানে ভারত ও শ্রীলঙ্কার মধ্যেই মূল প্রতিযোগিতা চলছে। সমুদ্রের তলায় খননকার্যে বিলিয়ন ডলার খরচ হয় সুতরাং চীন শ্রীলঙ্কার মাধ্যমে অনুমোদন চালাচ্ছে। তবে এখানে ভারতেরই অনুমোদন পাওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। ভারত যদি এখান থেকে কোবাল্ট উত্তোলন করতে পারে তাহলে বিশ্বের কঙ্গোর উপর নির্ভরতা কমবে।

আফ্রিকা মহাদেশের একটি দেশ কঙ্গোতে বিশ্বের ৬০-৭০ শতাংশ কোবাল্ট পাওয়া যায়। কঙ্গোর উপকূল ভাগের দৈর্ঘ্য খুব কম সুতরাং তাদের কোবাল্ট রপ্তানি করবার পরিকাঠামো ততটা আধুনিক নয়। সেই তুলনায় ভারতের দীর্ঘ উপকূলভাগে অনেক বন্দর রয়েছে, যা কোবাল্ট রপ্তানির জন্য একদম আদর্শ। ভারতের বড় বড় সংস্থা রয়েছে ব্যাটারি নির্মানের জন্য সুতরাং নিকিতিন সীমাউন্টে ভারত মাইনিং এর অনুমোদন পেলে এটা ভারতের জন্য সবচেয়ে ভালো খবর হতে চলেছে। ভারত মৎস্য ৫০০০ নামে একটি বিশেষ জলযানও তৈরি করছে যেটি ভারত মহাসাগরের তলদেশে গিয়ে নিকিতিন সীমাউন্টকে পরীক্ষা করবে এবং কোবাল্টের খননকার্যের জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য সরবরাহ করবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *