মানসিক শান্তির জন্য যোগের বিকল্প নেই। আন্তর্জাতিক যোগ দিবস উপলক্ষে ডঃ অনির্বান গঙ্গোপাধ্যায়ের বিশেষ উদ্যোগ
গতকাল ২১ জুন গোটা বিশ্বব্যাপী আন্তর্জাতিক যোগ দিবস পালিত হল। ২০১৪ সালে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী জাতিসংঘে ২১ জুন তারিখটিকে আন্তর্জাতিক যোগ দিবস হিসাবে পালন করার কথা জানান। জাতিসংঘে কোনও প্রস্তাব পাশ হতে গেলে সেই প্রস্তাব নিয়ে দেশগুলোর মধ্যে ভোট হয়। তবে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর এই প্রস্তাব কোন ভোট ছাড়াই পাশ হয়ে যায় এবং ২০১৫ সাল থেকে আন্তর্জাতিক যোগ দিবস পালন হয়ে আসছে বিশ্বব্যাপী। জাতিসংঘে ১৭৭টি দেশ সেসময় ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর এই যোগ দিবসের প্রস্তাবকে সমর্থন করেছিলো। জাতিসংঘের ইতিহাসে কোনও প্রস্তাবে এত বেশী সংখ্যক দেশের সমর্থন করেনি, এই ঘটনা রীতিমতো ঐতিহাসিক।
প্রাচীন ভারতে হিন্দু ধর্মে যোগ চর্চা হত মনসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যের উন্নতির জন্য। যোগের মাধ্যমে, ধ্যানের মাধ্যমে মহাপুরুষগন ইশ্বরকে পেয়েছেন, জীবনের উদ্দেশ্য জেনেছেন। যোগে রোগমুক্তি হয়, যোগের অলৌকিক প্রভাব রয়েছে। প্রাচীন ভারতে ঋষিদের দ্বারা তৈরি সেই যোগই আজ বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে। সারা বিশ্বের মানুষ বুঝতে পেরেছে মানসিক শান্তির জন্য যোগের বিকল্প নেই। ২০২৪ এর দশম আন্তর্জাতিক যোগ দিবসের থিম ছিল নিজের ও সমাজের জন্য যোগব্যায়াম। আমেরিকার টাইমস স্কোয়্যার থেকে শুরু করে, ব্রিটেন, ফ্রান্স, থাইল্যান্ড, নিউজিল্যান্ড সহ সমস্ত দেশেই আন্তর্জাতিক যোগ দিবস উদাযাপন করা হয় গতকাল। গতকাল নিউইয়র্কের টাইমস্কোয়্যারে যোগ দিবসে ১০,০০০ জন মানুষ অংশ নেন। ওয়াশিংটনে ভারতীয় দূতাবাস, জাপানের টোকিওতে ভারতীয় দূতাবাস সর্বত্র যোগদিবস পালন করা হয়েছে গতকাল। জাপানে বৃষ্টি সত্বেও সুকিজি হংওয়ানজি মন্দিরে ভারতীয় দূতাবাস কর্মীদের পাশাপাশি জাপানি কুটনৈতিকগন, রাজনৈতিক নেতৃত্ব ছাতা নিয়েই যোগ দিবস পালন করেন। আন্তর্জাতিক যোগ দিবস উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী গতকাল ভারতীয়দের ও বিশ্ববাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়ে জাতির উদ্দেশ্যে জানান এবারের যোগ দিবসে বিশ্বে নতুন রেকর্ড তৈরি হয়েছে। তিনি জানিয়েছেন ভারতে যোগ পর্যটনের নতুন ক্ষেত্র তৈরি হচ্ছে। ঋষিকেশ থেকে শুরু করে কাশী, কেরলে সহ ভারতে প্রতিবছর বিদেশ থেকে বহু মানুষ আসছেন যোগ শিখতে। গতকাল আন্তর্জাতিক যোগ দিবস উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী কাশ্মীর যান। শ্রীনগরেই যোগ দিবস পালন করেন তিনি। ভারতে রেকর্ড তৃতীয়বারের মতোন প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েই তিনি যোগ দিবসের জন্য কাশ্মীরকে বেছে নেন। শ্রীনগরে সকালে ডাল লেকের ঠিক পাশেই অবস্থিত শের ই কাশ্মীর আন্তর্জাতিক সেন্টারেই যোগ দিবস পালনের পরিকল্পনা ছিল প্রধানমন্ত্রীর কিন্তু শেষমুহুর্তে বৃষ্টির জন্য হলে যোগ দিবস পালন করেন তিনি।
সারা ভারতের বিভিন্ন শহরে সবাই যখন যোগ দিবস পালন করছে। তখন মুর্শিদাবাদের বহরমপুরে যোগ দিবস কর্মসূচীতে অংশ নেন পশ্চিমবঙ্গের বিশিষ্ট বিজেপি কর্মকর্তা ডঃ অনির্বান গঙ্গোপাধ্যায়। বহরমপুরের বিবেকানন্দ ব্যায়াম সমিতিতে যোগ দিবস উপলক্ষে বিশেষ যোগ কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছিল সেখানেই অংশ নেন বিজেপি কর্মকর্তা। শ্রী প্রনব কুমার ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে ৮৩ বছর আগে মানুষের শরীর স্বাস্থ্যের উন্নয়নের জন্য তৈরি হওয়া এই বিবেকানন্দ ব্যায়াম সমিতি আন্তর্জাতিক যোগ দিবসের জন্য সবচেয়ে আদর্শ স্থান। বহরমপুর থেকে ডঃ অনির্বান গঙ্গোপাধ্যায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে শুরু আন্তর্জাতিক যোগ দিবসের মাধ্যমে মানুষের সুস্বাস্থ্য গড়ে তোলার বার্তা দেন। এরপর বিজেপি কর্মকর্তা নদীয়ার বীরনগরের ঊষাগ্রামের অনুশীলন ফাউন্ডেশনে যান যোগ দিবস উদযাপনে। এখানে তিনি যোগ দিবস উপলক্ষে বক্তব্য রাখেন। নদীয়ার ঊষাগ্রাম নামটি এসেছে শ্রীঅরবিন্দের নাম অনুসারে। এই গ্রামেই শ্রীঅরবিন্দের সমাধি রয়েছে। সুতরাং এমন পবিত্র স্থানই যোগ চর্চার জন্য প্রকৃত স্থান বলে জানান ডঃ গঙ্গোপাধ্যায়। তিনি জানান অতীতে যেমন ভারতে যোগ চর্চা ছিল ঠিক তেমনি ভারতীয় এই যোগ পরম্পরা আগামী কয়েক দশকে সারা বিশ্বে আরও দ্রুত ছড়িয়ে পড়বে। তিনি নতুনদের প্রতিদিন যোগ চর্চা করতে উৎসাহ দেন এবং আগামীদিনে যোগকে কেন্দ্র করে ক্যারিয়ার তৈরির কথাও আলোচনা করেন। এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন ১৯৪৮ সালে ঋষি শ্রীঅরবিন্দের যোগ ও সাধনা নিয়ে কৃষ্ণনগর কলেজে পড়াতেন অধ্যাপক হরিদাস চৌধুরী। শ্রীঅরবিন্দ সেই অধ্যাপক হরিদাস চৌধুরী ও তার স্ত্রী বিনা চৌধুরীকে আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়া পাঠিয়েছিলেন। আমরিকাতে তারা উভয়েই বহু দশক সেখানকার মানুষদের ভারতীয় যোগ শিখিয়েছিলেন। ডঃ গঙ্গোপাধ্যায় আরও বলেন প্রাচীন ভারতবর্ষ ছিল শিক্ষা ও জ্ঞানের পীঠস্থান। একসময় ভারতের গৌরব নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ে দুর্গম পথ অতিক্রম করে কোরিয়া, জাপান থেকেও শিক্ষার্থীরা পড়তে আসতো। এখানে পড়া সম্পূর্ন করে ভারতীয় শিক্ষা, সংস্কৃতি তারা নিজেদের দেশে প্রচার করতো। সেই নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিষয়ের মধ্যে একটি ছিল যোগ সাধনা। নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাচীন ভারতের জ্ঞানের পীঠস্থান ছিল। এই বিশ্ববিদ্যালয় যখন আক্রমনকারীরা জ্বালায়ি দেয় তখন ছয় মাস ধরে এখান গ্রান্থাগার পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছিল। বিজেপি কর্মকর্তা জানান বর্তমান যুগ তথ্যপ্রযুক্তি ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার। এই যুগের মতো গতিশীল সমাজ বিগত পাঁচ দশক আগেও ছিলনা। সুতরাং এই যুগে দাঁড়িয়ে মানুষের যোগ সাধনা, শরীর চর্চার অপরিসীম গুরুত্ব রয়েছে। বিগত দশবছরে যোগ চর্চা অনেকটাই বৃদ্ধি পেয়েছে এবং এটি এমন একটি ক্যারিয়ার যেখানে কেউ খালি হাতে কোনওদিন বসে থাকবেনা বলে জানিয়েছেন ডঃ গঙ্গোপাধ্যায়। কিছুদিন আগেই গুজরাটের আয়ুশ সম্মেলনে দুইদিনে নয়হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ এসেছে বলেও জানান তিনি। ডঃ গঙ্গোপাধ্যায় বলেন ভারতের যোগ ক্রমশ বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়ছে যার সবচেয়ে বড় উদাহারন সৌদি আরব, যেখানে যোগ চর্চার জন্য বিশেষ কমিটি রয়েছে। শুধু তাই নয় সৌদি আরব সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশের প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ শেখানো হবে। চীন যেমন তার সংস্কৃতিকে, প্রাচীন ঔষুধের গুরুত্বকে প্রচার করে ঠিক তেমনি ভারতকেও সনাতনী ঐতিহ্য যোগ এবং আয়ুর্বেদে আরও বেশী গুরুত্ব দেওয়ার কথা তিনি জানান। পরিশেষে ডঃ গঙ্গোপাধ্যায় বলেন ১৯৪৮ সালে ঋষি শ্রীঅরবিন্দ বলেছিলেন একটা সময় ভারতবর্ষ শক্তিশালী দেশ হিসাবে উঠে আসবে কিন্তু ভারতবর্ষ যদি তার সাংস্কৃতিক ও আধ্যাত্মিক সত্ত্বাকে ভুলে যায় তবে বাকী দেশগুলোর সাথে ভারতবর্ষের কোনও পার্থক্য থাকবেনা। আজ ভারতবর্ষ অর্থনৈতিক, সামরিক ও ভূরাজনীতিতে বিশ্বের একটি প্রভাবশালী দেশ। সুতরাং এরকম পরিস্থিতিতেও প্রাচীন ভারতীয় যোগ দর্শনের মাধ্যমে ভারতবর্ষের আধ্যাত্মিক ও সংস্কৃতিক ঐতিহ্য আরও ভালোভাবে তুলে ধরা প্রয়োজন বলে জানিয়েছে ডঃ অনির্বান গঙ্গোপাধ্যায়।