আগামী সেপ্টেম্বর থেকেই ভারত ও বাংলাদেশের মৈত্রী সেতুর কারনে আরও তাড়াতাড়ি উত্তর পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলোতে পৌঁছানো সম্ভব হবে
দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর অবশেষে উত্তর পূর্ব ভারতের সাতটি রাজ্য বঙ্গোপসাগরের সাথে সংযুক্ত হতে চলেছে যার প্রধান কারন মৈত্রী সেতু। আগামী সেপ্টেম্বর মাসে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে মৈত্রী সেতুর উদ্ভোদন হতে চলেছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী নিজে উপস্থিত থেকে এই সেতুর উদ্ভোদন করবেন। গত তিন বছর ধরে এই সেতুটি নির্মানের কাজ চলছিলো অবশেষে আগামী সেপ্টেম্বর মাসে সেতুটি জনসাধারনের জন্য খুলে দেওয়া হবে। এই সেতুকে উত্তর পূর্ব ভারতের প্রবেশদ্বার বলা হচ্ছে। এই সেতু নির্মানের ফলে উত্তর পূর্ব ভারতের সাতটি রাজ্য সরাসরি বঙ্গোপসাগরের সাথে যুক্ত হয়ে যাবে। এর আগে উত্তর পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলোর কাছে সবচেয়ে কাছের বন্দর ছিল কলকাতা বন্দর। উত্তর পূর্ব ভারত থেকে শিলিগুড়ি করিডর হয়ে ঘুরে কলকাতা বন্দর পৌঁছাতে অনেক সময় লাগতো। তাছাড়া এই পথে বানিজ্যে সময় ও খরচ দুই বৃদ্ধি পেত। কিন্তু এই মৈত্রী সেতু নির্মানের ফলে ত্রিপুরা থেকে সরাসরি বাংলাদেশ যাওয়া সম্ভব হবে। এই সেতু থেকে চট্টগ্রাম বন্দরের দূরত্ব মাত্র ৭০-৮০ কিলোমিটার। এতদিন পর্যন্ত ভারতের মূল ভূভাগ থেকে সরু চিকেন নেক শিলিগুড়ি করিডরের মাধ্যমেই উত্তর পূর্ব ভারতে পৌঁছানো যেত কিন্তু এই সেতু নির্মানের ফলে বাংলাদেশ হয়ে উত্তর পূর্ব ভারতে পৌঁছানোর একটি বিকল্প পথও তৈরি হয়ে যাবে।
মৈত্রী সেতু বা ফ্রেন্ডশিপ ব্রিজ একটি ১.২ মাইল বা ১.৯ কিলোমিটার লম্বা সেতু যা ফেনী নদীর উপর তৈরি করা হচ্ছে। ১১৬ কিলোমিটার লম্বা ফেনী নদী একটি ট্রান্স বাউন্ডারি নদী। যেসব নদী দুটি দেশের মধ্যে একটি প্রাকৃতিক সীমানা হিসাবে কাজ করে তাদের ট্রান্স বাউন্ডারি নদী বলা হয়। দক্ষিন ত্রিপুরা থেকে উৎপন্ন হয়ে এই ফেনী নদী সাবরুম শহর মধ্যে দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশের পর বঙ্গোপসাগরে গিয়ে মিশেছে। ২০১৫ সালের জুন মাসে ফেনী নদীর উপর সেতু নির্মান প্রজেক্টের সূচনা করেছিল উভয় দেশের প্রধানমন্ত্রী। ভারত সরকারই বাংলাদেশ সরকারকে এই সেতু নির্মানের প্রস্তাব দিয়েছিল। সেসময় ভারত সরকার জানিয়েছিল এই সেতু নির্মানের খরচ ও রক্ষণাবেক্ষন ভারতই করবে।
এই সেতু ত্রিপুরার সাবরুম এবং বাংলাদেশের চট্টগ্রামের রামগড়কে সংযুক্ত করবে। এছাড়া এই সেতু ভারতের জাতীয় সড়ক ৮ এনং ফেনী নদীর ওপারে বাংলাদেশের বারাইয়াঘাট-মাগারচেরি সড়কেও সংযুক্ত করবে। ২০২১ সালের ৯ মার্চ ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই সেতুর উদ্ভোদন করেছিলেন। মৈত্রী সেতু নির্মানে মোট ১৩৩ কোটি টাকা বা ১৬ মিলিয়ন ডলার খরচ হচ্ছে। গুজরাটের দীনেশ চন্দ্র আর.আগরওয়াল ইনফ্রাকন প্রাইভেট লিমিটেড বা ডিআরএ ইনফ্রাকন দুই লেন বিশিষ্ট এই সেতু নির্মানের কাজ করছে। ন্যাশনাল হাইওয়ে অ্যান্ড ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন লিমিটেড বা এনএইচআইডিসিএল এই সেতুর যাবতীয় রক্ষণাবেক্ষনের দায়িত্বে থাকবে। সেপ্টেম্বর মাসে সেতু উদ্ভোদনের একমাস পর থেকেই এই সেতুর মাধ্যমে পন্য পরিবহনও শুরু হয়ে যাবে।
ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে বন্ধুত্বের প্রতীক হিসাবে এই সেতু তৈরি করা হচ্ছে। এখন ত্রিপুরার রাজধানী আগরতলা থেকে শিলিগুড়ি করিডর হয়ে ঘুরে কলকাতার হলদিয়া বন্দরে পৌঁছাতে ১৬০০ কিলোমিটার দূরত্ব অতিক্রম করতে হয় কিন্তু এই সেতুর মাধ্যমে ত্রিপুরা থেকে চট্টগ্রাম বন্দরের দূরত্ব মাত্র ৮০ কিলোমিটার।
২০২৩ সালেই বাংলাদেশ সরকার ভারতকে চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দরের প্রবেশাধিকার দিয়েছে। যার জন্য উত্তর পূর্ব ভারত থেকে চট্টগ্রাম বন্দরের মাধ্যমে বানিজ্য আরও সহজ হয়ে গেছে ভারতের জন্য। এই সেতুর কারনে ত্রিপুরা ভবিষ্যতে উত্তর পূর্ব ভারতের প্রবেশদ্বারে পরিনত হবে এবং সাবরুম একটি ব্যবসায়িক কেন্দ্র হয়ে উঠবে। ত্রিপুরার শান্তির বাজার রেলওয়ে স্টেশন থেকে বাংলাদেশের ফেনী জংশন পর্যন্ত একটি রেললাইনও তৈরি করা হবে যাতে পন্য পরিবহন আরও সহজ হবে। ভারত ও মায়ানমারের মধ্যে কালাদান মাল্টিমোডাল প্রজেক্টের বিকল্প হতে চলেছে এই মৈত্রী সেতু্। তাছাড়া ভবিষ্যতে চীনের সাথে যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে উত্তর পূর্ব ভারতে পৌঁছাতে এই মৈত্রী সেতু শিলিগুড়ি করিডরের বিকল্প হিসাবে ব্যবহার করা সম্ভব হবে।