অফবিট

পৃথিবীর কোথায় আদিবাসীরা নিজেদের বুকের দুধ দেয় বন্য প্রাণীদের লালন পালন করতে?

নিউজ ডেস্ক –  গোটা পৃথিবীতে মা শব্দটিতে এতটাই জোরালো মাহাত্ম্য যা অন্য কোন শব্দের সঙ্গে তুলনা করা যায় না। এই জন্য মায়েদের সর্বোচ্চ আসনটি দেওয়া হয়। ঠিক সেরকমই এমন একটি গ্রাম রয়েছে যেখানে মায়েরা নিজেদের বুকের দুধ পান করিয়ে বন্য শিশুদের বড় করে তোলে। বিষয়টি শুনতে আজব লাগলেও বাস্তবে সত্য। এমনই এক মানবিক দৃশ্য দেখা যায় ব্রাজিলের আমাজনের গহীন অরণ্যে অ্যাওয়া সম্প্রদায়ের মানুষদের মধ্যে। 

আদিবাসী গোষ্ঠীর মানুষেরা পোশাক কি জিনিস সেই সম্পর্কে অবগত নয়। তারা মূলত উলঙ্গ অবস্থায় বসবাস করে। এবং বোনের শাক-সবজি ও ফল খেয়েই খাদ্য নিবারণ করে থাকেন। তবে এরা বন্য পশুদের লালন-পালন করে বসবাস করে। এদের নিজেদের শিশুদের পাশাপাশি বড় হয়ে ওঠে মা হারানো বনের সেশন। ঠিক সেরকমই একটি দৃশ্য দেখা যায় এই গোষ্ঠীতে। সম্প্রতি জানা গিয়েছে একটি ছোট্ট কাঠবিড়ালি জন্মের পরেই তার মাকে হারিয়ে ফেলেছিল। কিন্তু মা হারা সন্তান কে বুকে আগলে নিয়েছিল অ্যাওয়ার সম্প্রদায়ের মহিলারা। তারা নিজের বুকের দুধ পান করিয়ে অনাথ পশুর শিশুদের বড় করে তোলে।  

একটি সংবাদ মাধ্যমে সম্প্রতি জানা গিয়েছে অ্যাওয়ার আদিবাসীরা প্রতিনিয়ত মৃত্যু হওয়ায় বর্তমানে তাদের সংখ্যা এসে দাঁড়িয়েছে ৩০০র কাছাকাছি। সেখানে হয়তো কোনো অনাথ বন্যপ্রাণীর কষ্টটা বুঝতে পারে দ্বারা। তাই তাদের দূরে ঠেলে না দিয়ে বুকে আগলে নিয়েই দিনযাপন করছে। এমনকি তারা মাঝেমধ্যে বন্য পশুদের দত্তক নিয়ে থাকে বড় করে তোলার জন্য। তবে তাদের ছোট থেকে বড় করার পর পশুরা যদি কোনো সময় বনে ফিরে যেতে চায় তাহলে তারা তাদের আটকায় না। পরম আদর যত্নে তাদের ফিরিয়ে দেয়। এমনকি তারা যেহেতু বন্য পশু শিকার করে তাদের ক্ষুধা মেটায় সেই ক্ষেত্রে তারা যে পশুটিকে দত্তক নেয় তারা তাদের মনে রাখে। যার কারণে শিকার করার সময় ওই দত্তক নেওয়া পশুটি সামনে চলে আসলেও তাকে ছেড়ে দেয়। 

সম্প্রতি পুগলিস সেই আদিবাসীদের গ্রামে গিয়ে ঘুরে এসেছে। সেখানকার সকল দৃশ্য দেখে  তিনি জানান,”অ্যাওয়া পরিবারের শিশুরা প্রাণীদের সঙ্গেই বড় হয়ে ওঠে। অ্যাওয়া বাবা ও মা প্রাণীদের মতো দত্তক নেন। নিজেদের শিশুদের সঙ্গেই পুশে বড় করে। আর এই প্রাণীও বাবা ও মায়ের কাজটা ভালো করে করে দেয়। যেমন বাদামের খোসা ছাড়িয়ে দেওয়া, গাছ থেকে ফল পেড়ে দেওয়া, ঘুমিয়ে গেলে একটু পাহারা দেওয়া ইত্যাদি। এই সকল সম্প্রদায়ের বাসিন্দাদের প্রকৃতির কাছাকাছি থাকে তা বলা যাবে না। তারা প্রকৃতির অংশ এটা বলতে হয়। 

 একদা এক সময় ইউরোপীয়রা উপনিবেশ স্থাপন করতে এসে নির্বিচারে অ্যাওয়া সম্প্রদায়ের মানুষদের হত্যা করেছে। পাশাপাশি এখানকার বাসিন্দাদের বিভিন্ন জলবসন্ত, হাম ও বিভিন্ন ফ্লুতে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে। যার কারণে সংখ্যালঘুতে পরিণত হয়েছে অ্যাওয়াই সম্প্রদায়ের মানুষেরা। এমনকি উপনিবেশের আমলে অ্যাওয়াদের দাস বানিয়ে তাদের দিয়ে রাবার আর আখ চাষে কাজ করিয়েছে  ইউরোপীয়রা।  

বাইরের জগতের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক না থাকায় বর্তমানে এক আদিবাসী গোলকের মধ্যে আবদ্ধ হয়ে আছে বাসিন্দারা। যার কারণে তাদের অভিযোগ, সম্প্রতি কোন দল অরণ্য পুড়িয়ে দেওয়ার কারণে তাদের দাবি বনের ভেতর ঢুকলো কেবল পুড়িয়ে দেওয়া গাছপালার গন্ধ আর ধোঁয়া দেখতে পাই। আগুনের তাপ আমাদের জনজীবনেও এসে লাগছে। আর এজন্য আমরা সরকারের সহযোগিতা চাই। কারণ বন একমাত্র খাদ্যের উৎস তাদের কাছে। তাই বন না থাকলে তাদের অস্তিত্ব টিকে থাকা অসম্ভব।

 এমন নগ্ন আদিবাসী জীবন নিয়ে খুব ভালোই রয়েছে অ্যাওয়ার বাসিন্দারা। তবে তাদের নগ্ন দেখে পুলগিস তাদের কিছু জামাকাপড় দান করেছে মূলত টি-শার্ট দিয়েছেন। তাদের খুব পছন্দের হয় এই টি-শার্টটি। কিন্তু আদিবাসীরা এটি জানেনা যে টি-শার্ট কিভাবে তৈরি করা হয়। কারণ তাদের জীবন আমাজনে গভীর জঙ্গলকে ঘিরে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *