অফবিট

কানাডায় ভারত ও রাশিয়ার জাতীয় পতাকা পোড়াল খালিস্তানিরা। খনিজ তেল না ক্রয় কারনেই কি এই সিধান্ত?

কানাডায় খালিস্তানিরা তাদের প্রতিবাদ কর্মসূচিতে ভারতের পাশপাশি এবার রাশিয়ার জাতীয় পতাকাও জ্বালানো শুরু করেছে। ১৯৮৪ সালের ১-১০ জুন তৎকালীন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর নেতৃত্বে অপারেশন ব্লুস্টার সংঘটিত হয়। তার প্রতিবাদে খালিস্তানিরা কানাডায় প্রথমে ইন্দিরা গান্ধীর গুলিবিদ্ধ প্রতিকৃতি তৈরি করে বিক্ষোভ করে এবং তারপর ভারতের জাতীয় পতাকা পোড়ায়। খালিস্তানিরা এর আগেও ভারতের জাতীয় পতাকা পুড়িয়েছে, তবে এবার ভারতের পতাকা পোড়ানোর পাশপাশি রাশিয়ার জাতীয় পতাকা ও ভারতীয় সংবিধান পুড়িয়ে দেয় খালিস্তানিরা। অর্থাৎ খালিস্তানিরা এবার ভারতের পাশপাশি রাশিয়াকেও তাদের নিশানায় নেওয়া শুরু করেছে। কিছু দিন আগে আমেরিকা অভিযোগ করেছিল ভারতের ইনটেলিজেন্স সংস্থা র এর এজেন্ট আমেরিকাতে গুরপ্রীত সিং পান্নুকে হত্যার চেষ্টা করছিলো। এই ঘটনা পুরোপুরি অস্বীকার করেছে ভারত সরকার। তবে রাশিয়া এই ঘটনায় পুরোপুরি ভারতকে সমর্থন করে। রাশিয়া জানিয়েছিলো ভারতের লোকসভা নির্বাচনকে প্রভাবিত করতে আমেরিকা এমন বক্তব্য দিয়েছে। পরবর্তীকালে একাধিক আন্তর্জাতিক মিডিয়ার প্রশ্নে আমেরিকা রাশিয়ার বক্তব্যের বিরোধীতা করে জানায় তাদের এমন কোনও উদ্দেশ্য নেই। এই কারনে খালিস্তানিরা রাশিয়াকেও তাদের শত্রু মনে করেছে। কানাডায় এসব খালিস্তানি কার্যক্রমের বিরুদ্ধে কোনওরকম ব্যবস্থা নেয়না কানাডা সরকার কারন কানাডা সরকারের মতে এটা মত প্রকাশের স্বাধীনতা। 

গতবছর কানাডায় খালিস্তানি নেতা হরদীপ সিং নিজ্জার হত্যাকাণ্ডে কানাডা সরকার ভারতের জড়িত থাকার অভিযোগ করেছিল। পাঞ্জাবে জলন্ধরে জন্মানো হরদীপ সিং নিজ্জার ১৯৯৭ সালেই কানাডা চলে যায়। ২০০৭ সালে পাঞ্জাবে সিনেমা বোম্বিংএ ৬ জনের মৃত্যু হয় ও ৪০ জন আহত হয় এবং ২০০৯ সালে শিখ নেতা রুলডা সিংকে হত্যা করা হয়। এসব ঘটনায় হরদীপ সিং নিজ্জার যুক্ত ছিল। এই জন্য ভারত সরকার হরদীপ সিং নিজ্জারকে সন্ত্রাসী ঘোষনা করে। এসব জানা সত্বেও খালিস্তানি টাইগার ফোর্স বা কেটিএফ নামক একটি নিষিদ্ধ সন্ত্রসী সংগঠনের মাস্টারমাইন্ড হরদীপ সিং নিজ্জারকে কানাডা তাদের নাগরিকত্ব দিয়েছিল। নিজ্জার কানাডার ব্রিটিশ কলম্বিয়া প্রদেশে থাকতো। গত জুন মাসে ভ্যাঙ্কুভাররে একটি শিখ ধর্মীয় কেন্দ্রের বাইরে দুজন অজানা ব্যক্তি গাড়িতে থাকা নিজ্জারকে গুলি করে হত্যা করে। কানাডা এই ঘটনায় ভারতকে অভিযুক্ত করলেও ভারতের জড়িত থাকার কোনও প্রমান দিতে পারেনি, যার জন্য সেসময় বিশ্বজুড়ে কানাডা সরকারের সমালোচনা হয়। তারপর থেকেই ভারত ও কানাডা উভয় দেশের কুটনৈতিক সম্পর্ক অবনতি হয়। কানাডা বর্তমানে খালিস্তানিদের অভয়ারন্য, কানাডা সরকার এদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেয়না। 

কানাডা একটি তালিকা তৈরি করেছে যাতে সেসব দেশের নাম তালিকাভুক্ত করেছে যারা তাদের গনতন্ত্রের জন্য সবচেয়ে বড় হুমকী। এই তালিকায় সবার প্রথমে রয়েছে চীনের নাম এরপর রয়েছে রাশিয়া। তবে সম্প্রতি কানাডা ভারতকে রাশিয়ার জায়গায় দ্বিতীয় স্থানে রেখেছে এই তালিকায়। অর্থাৎ কানাডা সরকারের মনে হয়েছে চীন, ভারত ও রাশিয়া তাদের গনতন্ত্রের জন্য প্রধান হুমকী। হঠাৎ করেই কানাডা ভারতের বিরুদ্ধাচারন করা শুরু করেনি, এর পেছনে রয়েছে একটি ভূ-রাজনৈতিক সমীকরন। ২০২২ সালে রাশিয়া, ইউক্রেনের যুদ্ধ যখন শুরু হয় তখন রাশিয়ান তেল বিক্রির উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে ইউরোপীয়ান দেশগুলো। কানাডা খনিজ তেলের একটি বড় রপ্তানিকারক দেশ। এই পরিস্থিতির সুযোগে কানাডা ভাবে তারা তেল বিক্রির মাধ্যমে ভূ-রাজনীতিতে তাদের অবস্থান মজবুত করবে। কানাডা সেসময় ঘোষনা করে তারা এত বেশী তেল রপ্তানি করবে যে বিশ্বে রাশিয়ান তেলের অভাব বোধ হবেনা৷ বিশেষ করে কানাডা ভেবেছিল ভারত তাদের থেকে তেল কিনবে। কিন্তু কানাডার এই লক্ষ্য পূরন হয়নি। আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও ভারত রাশিয়া থেকে বিপুল পরিমানে খনিজ তেল অনেক কম দামে কেনে৷ ভারত অবশ্য কানাডা থেকেও তেল কিনেছে তবে তা রাশিয়ান তেলের তুলনায় খুবই কম। এই জন্য ২০২৩ সালে আন্তজার্তিক মিডিয়াতে প্রকাশ পয়েছিল কানাডা তেল রপ্তানিকে ঘিরে তার লক্ষ্য পূরনে ব্যর্থ হয়েছে। এইজন্য কানাডা ভারত ও রাশিয়া উভয়দেশের উপরেই ক্ষুব্ধ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *