অফবিট

আবারও যুদ্ধের প্রস্তুতি! বেলুনকে কেন্দ্র করে উত্তর কোরিয়া ও দক্ষিন কোরিয়ার মধ্যে যুদ্ধকালীন পরিস্থিতি

ভারত পাকিস্তানের মধ্যে যেমন বিতর্ক রয়েছে তেমনই দক্ষিন এশিয়ার দুটি দেশ দক্ষিন কোরিয়া ও উত্তর কোরিয়া পরস্পরের শত্রু। ১৯৫০ এর দশকে কোরিয়ান যুদ্ধের পরেই দুই দেশ আলাদা হয়ে যায়। সেই থেকে সত্তরের বছরের বেশী সময় ধরে দুই দেশের মধ্যে বৈরিভাব বিরাজ করছে। আলাদা হয়ে যাওয়ার পর উত্তর কোরিয়া সোভিয়েত ইউনিয়নের ব্লকে চলে যায় এবং দক্ষিন কোরিয়া পশ্চিমা ব্লকে যায়। সময়ের সাথে দক্ষিন কোরিয়া বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী অর্থনীতির দেশ হিসাবে আত্মপ্রকাশ করে কিন্তু উত্তর কোরিয়া বিশ্বের সবচেয়ে গরীব দেশ গুলোর একটিতে পরিনত হয়। উত্তর কোরিয়াতে কোনওরকম স্বাধীনতা নেই, ইন্টারনেট নেই, গনতন্ত্র নেই। উত্তর কোরিয়াতে স্বৈরাচারী শাসক কিম জং উনের উপর কথা বলার সাহস কারও নেই। দেশটিতে সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলার অর্থ মৃত্যুকে আমন্ত্রন জানানো। পুরো বিশ্বের থেকে বিচ্ছিন্ন উত্তর কোরিয়া পরমানু অস্ত্র পরীক্ষা, মিসাইল পরীক্ষার মাধ্যমে প্রায়ই শিরোনামে আসে। 

সম্প্রতি এই দুই দেশের মধ্যে বেলুন যুদ্ধ শুরু হয়েছে। গত ২৭মে উত্তর কোরিয়া গোয়েন্দা স্যাটেলাইট পাঠানোর চেষ্টা করে মহাকাশে কিন্তু এই মিশন ব্যর্থ হয়। উত্তর কোরিয়ার রকেট মাঝ আকাশেই বিস্ফোরিত হয়ে যায় এবং সমস্ত টুকরো, অবশেষে দক্ষিন কোরিয়াতে গিয়ে পড়ে। দক্ষিন কোরিয়ার সরকার এই বিষয়ে একটি বৈঠকও করে। গত মে মাস থেকেই উত্তর কোরিয়া কোরিয়ান উপদ্বীপে একের পর এক উত্তেজনাকর পরিস্থিতি তৈরি করছে। প্রথমে উত্তর কোরিয়া কোরিয়ান উপদ্বীপের বেশীর ভাগ অংশের জিপিএস জ্যাম করা শুরু করে, এরপর দেশটি দশটি স্বল্প পাল্লার ব্যালেস্টিক মিসাইল পরীক্ষা করে এবং জাপান সমুদ্রে ১৮ মাল্টিপল রকেট লঞ্চারও পরীক্ষা করে। উত্তর কোরিয়া জানিয়েছে তাদের পশ্চিম উপকূলের কাছ দিয়ে যাওয়া জাহাজ তাদের জন্য হুমকী স্বরূপ। পরিস্থিতি আরও খারাপ হয় বেলুন পাঠানোকে কেন্দ্র করে। উত্তর কোরিয়া সম্প্রতি ২০০০ এর বেশী বেলুন দক্ষিন কোরিয়াতে পাঠিয়েছে। এসব বেলুনে সিগারেটের টুকরো, প্লাস্টিক সহ মানব বর্জ্য পদার্থ ভর্তি ছিল। দক্ষিন কোরিয়ার সরকার জানিয়েছে কিম জং উন পাগল হয়ে গেছে, যদি পিয়ংইয়ং ক্ষমা না চায় তবে তারাও এর বদলা নেবে। তবে উত্তর কোরিয়ার আগে দক্ষিন কোরিয়াই বেলুন পাঠানো প্রথম শুরু করেছিল অতীতে। দক্ষিন কোরিয়া এর আগে বহুবার বেলুন পাঠিয়েছে উত্তর কোরিয়াতে তবে সেসব বেলুনে বর্জ্য পদার্থ ছিলনা। উত্তর কোরিয়া জানিয়েছে গত ১০ মে দক্ষিন কোরিয়াতে দুই লাখ মুক্ত উত্তর কোরিয়া লিফলেট, দক্ষিন কোরিয়ান মিউজিকের ইউএসবি যুক্ত বেলুন তাদের দিকে এসেছে তার জবাবেই তারাও বেলুন পাঠিয়েছে। 

তবে উত্তর কোরিয়ার এরকম ঘটনার প্রতিবাদে আবারও দক্ষিন কোরিয়া কিম জং উন বিরোধী লিফলেট ভর্তি, দক্ষিন কোরিয়ান মিউজিকের চীপ ভর্তি প্রচুর বেলুন পাঠিয়েছে উত্তর কোরিয়ায়। উত্তর কোরিয়া জানিয়েছে তারা বেলুন পাঠানো বন্ধ করেছে কিন্তু দক্ষিন কোরিয়া থেকে আরও বেলুন এলে তারা পুনরায় বেলুন পাঠানো শুরু করবে। এছাড়া দক্ষিন কোরিয়া ডিএমজেডয়ে উত্তর কোরিয়ার দিকে প্রচুর লাউডস্পিকার ইনস্টল করে তাতে দক্ষিন কোরিয়ান মিউজিক, কিম জং উন বিরোধী খবর প্রচার শুরু করেছে। ডিএমজেড বা ডিমিলিটারি জোন উভয়দেশের মধ্যে একটি তিন কিলোমিটার লম্বা অঞ্চল যা ১৯৫৩ সালে উভয়দেশের সম্মতিতে তৈরি করা হয়। দক্ষিন কোরিয়া অতীতেও এখানে লাউডস্পিকার চালাতো। ২০১৮ সালে দুই কোরিয়ার মধ্যে শান্তি চুক্তির কারনে এখানে লাউড স্পিকার বন্ধ করে দক্ষিন কোরিয়া কিন্তু উত্তর কোরিয়ার এরকম আচরনে পুনরায় লাউড স্পিকার বাজানো শুরু করেছে দক্ষিন কোরিয়া। উত্তর কোরিয়া রাশিয়া ও চীনের থেকে পূর্ন সমর্থন পায়৷ এই বেলুন যুদ্ধকে কেন্দ্র করে পুনরায় কোরিয়ান উপদ্বীপে একটি যুদ্ধের পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *