অফবিট

শিকাগোকে সারা পৃথিবীর কসাইখানা কেন বলা হয় জানেন?

নিউজ ডেস্কঃ ‘গ্রেট শিকাগো ফায়ার’ এই ঘটনাটির কথা মনে পরলেই যেন এখনও শিউরে উঠে শরীর।উনিশ শতকে ঘটা এই  বিপর্যয় এক স্মরণীয় ইতিহাস হয়ে রয়েছে গেছে পুরো বিশ্বের কাছে।আর এর পর থেকে শিকাগোর ইউনিয়ন স্টকইয়ার্ডস এক শতাব্দীর ও বেশী সময় ধরে পুরো পৃথিবীতে কসাইখানা হিসেবে পরিচিত ছিল।কিন্তু কেন  “কসাইখানা” উপাধি দেওয়া হয়েছিল এই শহরটিকে?  

প্রায় ১৪৭ বছর আগে অর্থাৎ  ১৮৭১ সালের ৮ অক্টোবর, রবিবার রাতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরে  এক ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে।যেই আগুন মঙ্গলবার অর্থাৎ ১০ অক্টোবরের সকাল পর্যন্ত নেভাতে সকল চেষ্টাই ব্যর্থ হয়।গোটা শিকাগো শহর সেই বিধ্বংসী অগ্নিকান্ডে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। সব ধরনের অগ্নি নির্বাপন ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছিল।

এই আগুন লাগার কারণ নিয়ে রয়েছে বিভিন্ন মতামত।অনেকে মনে করেন যে এই অগ্নিকান্ডের সূচনা হয়েছিল  শহরের এক সম্ভ্রান্ত পরিবার ক্যাথরিন ও’ ল্যারির গোয়াল ঘর থেকে। বলা হয়  যে , ৮ অক্টোবর রাতে গরুর দুধ সংগ্রহের জন্য ও’ ল্যারি তার গোয়াল ঘরে যান। ওই সময় ও’ ল্যারিকে গোয়ালের একটি গরু লাথি মারে যার ফলে তার সাথে থাকা তেলের প্রদীপটি উল্টে যায়।আর এর থেকেই সূত্রপাত হয় এই ভয়ানক অগ্নিকান্ডের বলে অনুমান করা হয়।এছাড়াও আবার অনেকে বলেন যে , প্রদীপে উল্টে যাওয়ার এই দুর্ঘটনাটা আসলে ঘটেছিল এক জুয়ার আড্ডায়।

আবার অনেকে বলেন যে, এই আগুন লেগেছিল আকাশ থেকে উড়ে আসা জ্বলন্ত উল্কাপিন্ডের কারণে। তবে এই বিষয়টিকে বিশেষজ্ঞরা উড়িয়ে দেন।কারন তাদের মতে পৃথিবীতে  জ্বলন্ত উল্কাপিন্ড পড়ার  সঙ্গে সঙ্গে জলীয় বাষ্প আর মাটির সংস্পর্শে আসতে থাকলে তার তাপমাত্রা কমতে থাকে। এই জন্য উল্কাপিন্ডের কারণে এত বড় অগ্নিকান্ড ঘটা শিকাগো শহরে ঘটা অসম্ভব। তবে অনেক অনুসন্ধান করেও  এখনই পর্যন্ত এই ভয়াবহ আগুন লাগাবার আসল কারণ জানা সম্ভব হয় নি।এই ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে শহরের প্রায় ৯ বর্গ কিলোমিটার এলাকা পুড়ে ছাই হয়ে যায়।

প্রচণ্ড  গরম এবং  তাপমাত্রাও হু হু করে বাড়ছিল। জুলাই মাস থেকে অক্টোবর মাসে আগুন লাগার সময় পর্যন্ত  বৃষ্টিপাতের পরিমান ছিল খুবই কম এই অঞ্চলে। স্থানীয় আবহাওয়া দপ্তরের পুরনো রেকর্ড থেকে জানা যায় যে, ওই  সময়ে বৃষ্টিপাত হয়েছিল মাত্র ৩ সেমি। বৃষ্টিপাতের অভাবে কারনে শুষ্ক ও রুক্ষ হয়ে উঠেছিল  চারপাশের পরিবেশ।যার কারনে দ্রুত আগুন ছড়িয়ে পড়েছিল।

উনবিংশ শতকে সবুজের সমারোহ ছিল শিকাগো শহর। বৃষ্টিপাতের অভাবে কারনে শুষ্ক আবহাওয়া গাছগুলো শুষ্ক ও বিবর্ণ হতে থাকে।যার কারনে  দ্রুত আগুন ছড়িয়ে পড়েছিল। তার উপরে আবার ওই শহরের  সে সময় বেশিরভাগ বাড়িই ছিল কাঠের তৈরি।

বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা দরিদ্র অধিবাসীরা এই শহরের এক বিশাল অংশে বাস করতো। তারা ওই কাঠের বাড়ি তৈরি করে তাতে বসবাস করতো।তবে এই বাড়ির সুরক্ষা ব্যবস্থা ছিল না বললেই চলে। অগ্নিকাণ্ডের পরের মাসে অর্থাৎ সেপ্টেম্বর মাসে প্রকাশিত সে সময়ের শিকাগোর জনপ্রিয় পত্রিকা ‘শিকাগো ট্রিবিউনে’ উঠে আসে বিষয়টি বিস্তারিতভাবে।

এই ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছিল শিকাগো শহর।চারদিক ছেয়ে গিয়েছিল কালো ধোঁয়া আর ছাইয়ে। কত পরিমাণ ক্ষতি হয়েছিল তা নির্ধারণ করা বেশ কঠিন হয়ে পড়ে।তবে  এই ঘটনার কয়েক মাস পর শিকাগোর স্থানীয় প্রশাসন থেকে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয় যাতে আনুমানিক ১৯০ মিলিয়ন মার্কিন ডলা  ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ দেখানো হয়।

৩০০ এরও বেশি মানুষ মারা গিয়েছিল। যার মধ্যে ১২০টি লাশ উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছিল। এবং  ১,০০০ এর বেশি বসতবাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, দোকানপাট, হোটেল, সরকারি-বেসরকারি অফিস সম্পূর্ণ পুড়ে যায়।সে সময় ওই শহরের বাসিন্দা ছিল ৩ লাখ। তাদের মধ্যে এক লাখ মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়ে।এছাড়াও  পুড়ে ছাই হয়ে যায় অনেক গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র। সেইসমস্ত গুরুত্বপূর্ণ নথিগুলি মধ্যে ছিল তৎকালীন মার্কিন প্রেসেডেন্ট আব্রাহাম লিঙ্কনের কিছু গুরুত্বপূর্ণ চিঠি এবং শিকাগোর জনপ্রিয় আলোকচিত্রী আলেকজান্ডার হেসলারের তোলা লিঙ্কনের বেশ কিছু দুষ্প্রাপ্য ছবির নেগেটিভ, যা সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে যায় ওই অগ্নিকান্ডে।

এই ঘটনার জন্য শিকাগোকে বলা হয় “পৃথিবীতে কসাইখানা” ।  

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *