অফবিট

এক দশক আগে বাম শাসনের শেষ দিকে নেতাইয়ের গনহত্যা কান্ডে সিপিএম কী সত্যিই যুক্ত ছিল!

একটা সময় পশ্চিমবঙ্গে দাপটের সাথে রাজত্ব করা বামফ্রন্ট যেন আজ অতীতের ছায়ামাত্র। ২০১১ সাল থেকে বামফ্রন্টের জনপ্রিয়তা কমতে কমতে বর্তমানে একেবারে তলানিতে এসে পৌছেছে। সুদীর্ঘ ৩৪ বছর রাজ্যে ক্ষমতায় থাকা সিপিআইএমের রীতিমতো শূন্যেতে পৌঁছে যাওয়া বলে দিচ্ছে মানুষ বাম দলগুলোকে কতটা অপচ্ছন্দ করছে। ১৯২০ এর দশকে ভারতে প্রথম কমিউনিস্ট দল তৈরি হওয়ার পর থেকে কেরালা, ত্রিপুরা ও পশ্চিমবঙ্গে সরকার গঠন করতে পেরেছিল বামদল গুলি। তবে বর্তমানে একমাত্র কেরালাতেই বামেদের অস্তিত্ব আছে, যদিও সেটাও বেশীদিন থাকবেনা বলে মত রাজনৈতিক মহলের। দীর্ঘ ৩৪ বছরের বাম শাসনে রাজ্যে সাঁইবাড়ির গনহত্যা, মরিচঝাঁপি গনহত্যা, নানুর গনহত্যা, ছোট আঙ্গারিয়া গনহত্যা, ২১ জুলাই, নন্দীগ্রামে গনহত্যা, রক্তাক্ত সিঙ্গুর আন্দোলনের মতো একাধিক অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে, এর পাশাপাশি ব্যাপক দুর্নীতিও হয়। যার জন্য রাজ্যের রাজনীতিতে বামেদের এক প্রকার মুছে দিয়েছে সাধারন মানুষ। নেতাই গনহত্যা সিপিআইএমের কফিনে শেষ পেড়েকটি মারে।

২০১১ সালে সিপিআইএমের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছিল জঙ্গল হলের বিভিন্ন জায়গায় তারা ক্যাম্পে করে সশস্ত্র কর্মীদের মোতায়েন করেছিল মাওবাদীদের মোকাবিলায়। ঝাড়গ্রামের বিনপুর ১ ব্লকের লালগড় পঞ্চায়েতের নেতাই গ্রামে বাম নেতা রথীন দন্ডপাঠের বাড়িতেও সিপিএমের একটি ক্যাম্প থাকার অভিযোগ ওঠে সেসময়। বলা হয় এই ক্যাম্পে থাকা লোকেদের কারন নেতাইয়ের সাধারন মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিল। নেতাইয়ে মহিলাদের বিরক্ত করা থেকে শুরু করে স্থানীয় যুবকদের অস্ত্র প্রশিক্ষন দেওয়া, এমনকী মহিলাদের ক্যাম্পে গিয়ে রান্না করে দিত হত বলেও অভিযোগ শোনা যায় ওই ক্যাম্পে থাকা লোকেদের বিরুদ্ধে। এসবের বিরুদ্ধেই স্থানীয় মানুষজন প্রতিবাদ শুরু করে, তারা ক্যাম্পের মানুষদের কোনওরকম কাজ করবেনা বলে জানিয়ে দেয়। গ্রামবাসীদের প্রতিরোধ দমন করতে ২০১১ সালের ৭ জানুয়ারি রথীন দন্ডপাঠের বাড়ি থেকে নির্বিচারে গুলি চালানোর অভিযোগ ওঠে। এই ঘটনায় নয়জন নিরীহ গ্রামবাসীর মৃত্যু হয় এবং ২৮ জন গুলিবিদ্ধ হন। ইতিহাসে এই ঘটনা নেতাইয়ের গনহত্যা নামে পরিচিত। এই নারকীয় ঘটনায় অভিযুক্ত ২০ জন সিপিআইএম কর্মী সমর্থকদের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করে সিবিআই।

২০১৪ সালের ২৮ এপ্রিল হায়দ্রাবাদ থেকে নেতাই গন হত্যাকান্ডে অভিযুক্ত পাঁচজনকে গ্রেফতার করা হয়। এই ঘটনায় মূল অভিযুক্ত তপন দে, অনুজ পান্ডে, ডালিম পান্ডে আট বছর পর জামিন পায়। এছাড়াও অনেক অভিযুক্তই জামিন পেয়ে গেছে। সিপিএম যদিও এই ঘটনায় তাদের যোগ থাকার অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে নেতাইয়ের সেই নিহত ব্যক্তিদের বাড়ি লোকেরা ঘটনার এক দশক পরেও সেই ভয়াবহ স্মৃতি আজও ভুলতে পারেনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *