অফবিট

ভারতীয় রাজনীতিতে ধীরে ধীরে অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে বামেরা

যার উত্থান আছে তার পতনও নিশ্চিত, সভ্যতার ইতিহাসে শত শত শক্তিশালী সাম্রাজ্য আজ ধ্বংসস্তূপে পরিনত হয়েছে। ঠিক তেমনি একসময় পশ্চিমবঙ্গে দাপটের সাথে রাজত্ব করা সিপিআইএম আজ শূন্য। কার্যত বামেরা লুপ্ত হয়ে ইতিহাসের পাতায় চলে যাচ্ছে। ২০২১ বিধানসভা নির্বাচনে বামেরা শূন্য আসন পায় পশ্চিমবঙ্গে। যে বামফ্রন্ট ৩৪ বছরে পশ্চিমবঙ্গের শাসন ক্ষমতায় ছিল সেই বামফ্রন্ট ক্ষমতা হারানোর মাত্র দশ বছরে শূন্যে চলে যাওয়ার ঘটনা ভারতের রাজনৈতিক ইতিহাসে সত্যিই বিরল ঘটনা। বামফ্রন্টের শাসমকালে রাজ্যে একের পর এক দুর্নীতি, নৃশংস হত্যাকান্ড, অত্যাচার ঘটেছে যার জন্য রাজ্যবাসী বামেদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে।

বামেদের আরও বড় সমস্যা হল তরুন মুখকে সামনে নিয়ে না আসা। ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে দীর্ঘদিন ধরে বাম শিবিরে তেমন কোনও নতুন প্রার্থী দেখা যায়নি যার জন্য নতুন প্রজন্ম বামপন্থী রাজনীতি থেকে আকর্ষন হারিয়েছে। প্রাক্তন বাম নেতারাই কার্যত স্বীকার করে নিচ্ছেন বামফ্রন্টের দুর্বলতা। প্রবীন বামপন্থী নেতা গুরুদাস দাশগুপ্ত স্বীকার করেছেন বামফ্রন্ট একটু পেছনের আসনে চলে গিয়েছে। তিনি জানিয়েছেন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্তরে বামপন্থা একটি কঠিন চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছে। তিনি এরজন্য পরিস্থিতি, বামেদের রক্ষনশীলতা ও নেতৃত্বের দুর্বলতাকেই দায়ী করেছেন। নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন একদা বলেছিলেন ভারতবর্ষের বামপন্থীরা প্রয়োজন অনুযায়ী চাহিদা পূরনে তৎপর হতে পারেনি, তাদের মধ্যে এমন কিছু ধ্যান ধ্যারনা রয়েছে যা বর্তমান সময়ের সাথে যায়না। অমর্ত্য সেনের এই কথা খানিকটা স্বীকার করে নিয়েছেন সিপিআই নেতা গুরুদাস দাসগুপ্ত।

পশ্চিমবঙ্গের মতো ত্রিপুরাতেও ক্ষমতা হারিয়েছে বামেরা। প্রায় আড়াই দশক ক্ষমতায় থাকার পরেও জনগনের বিশ্বাস অর্জনে বামেরা ব্যার্থ হয়েছে ত্রিপুরাতে। ত্রিপুরা রাজ্য সম্মেলনে সিপিএমের ত্রিশ পাতার পার্টি চিঠিতে বলা হয়েছে দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে ক্ষমতায় থাকার পরেও দলের সাথে সাধরন মানুষের বিচ্ছিন্নতা তৈরি হয়েছিল। দলীয় নেতা কর্মীদের একাংশের আয়ের সাথে সঙ্গতি হীন জীবনযাপনকেও ত্রিপুরাতে সিপিএমের পতনের অন্যতম কারন বলা হয়েছে অর্থাৎ সিপিএম কার্যত ত্রিপুরাতে স্বীকার করে নিয়েছে দলীয় কিছু অংশের দুর্নীতির কথা। এছাড়াও এই চিঠিতে স্বজনপোষন, দুর্নীতিকে প্রশয় দেওয়া, মানুষের সাথে খারাপ ব্যবহারের কথাও স্বীকার করা হয়েছে। আসলে ভারতে বামপন্থার পতনের সূত্রপাত হয় সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর থেকেই।

১৯২০ এর দশকে সোভিয়েত ইউনিয়নের সমর্থনে ভারতে কমিউনিস্ট দল তৈরি হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সোভিয়েত ইউনিয়নের কমিউনিজম ও আমেরিকার পুঁজিবাদী নীতির কারনে বিশ্ব দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে যায়। সেসময় বহু দেশেই কমিউনিজম ছড়িয়ে পড়ে সোভিয়েত ইউনিয়নের নেতৃত্বে। কিন্তু ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়া কমিউনিজমের সবচেয়ে বড় ধাক্কা ছিল। মুক্ত বানিজ্যের যুগে প্রায় সব দেশই পশ্চিমা বিশ্বের পুঁজিবাদী নীতিতে আকৃষ্ট হয়ে পড়ে। তাছাড়া লাওস, ভিয়েতনাম, সোভিয়েত ইউনিয়ন, উত্তর কোরিয়ার মতোন গুটি কয়েক কমিউনিস্ট দেশগুলোর দুর্দশার কারনেও কমিউনিজমের উপর থেকে মানুষের ভরসা হারিয়ে যায়। এরই প্রভাবে একটা সময় কেরালা, ত্রিপুরা, পশ্চিমবঙ্গের মতোন রাজ্যে দাপটে শাসন করা বামেরা আজ শুধু কেরালাতেই আবদ্ধ, বাকী দুই রাজ্যে তারা অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *