আজ দুইদশক পরেও বাম আমলে ঘটে যাওয়া ছোট আঙারিয়ার বিভৎস হত্যাকান্ডের স্মৃতি ভোলা যায়নি
সোভিয়েত ইউনিয়নের হাত ধরে কমিউনিজম ভারতে প্রবেশ করে ১৯২০ এর দশকে। এর পরবর্তী বেশ কিছু দশক কমিউনিস্টরা চুপ থাকলেও ১৯৬০ এর দশক থেকে ভারতের বিভিন্ন প্রদেশে নকশাল আন্দোলনকে কেন্দ্র করে উগ্র বামপন্থা ছড়িয়ে পড়ে। নকশালপন্থীরা, মাওবাদীরা উগ্র বামপন্থার নামে বহু নিরীহ মামুষকে নির্বিচারে হত্যা করেছে। ভারতে বামপন্থী রাজনীতিতে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে পশ্চিমবঙ্গ। দীর্ঘ ৩৪ বছর বাংলায় বামফ্রন্টের শাসনে রাজ্যবাসী বহু দুর্নীতি, নৃশংসতার সাক্ষী থাকে। যে পশ্চিমবঙ্গ একটা সময় ভারতের অন্যতম গুরুত্বপূর্ন অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক কেন্দ্র ছিল সেই পশ্চিমবঙ্গই বাম শাসনে ভারতের বাকী রাজ্যগুলোর থেকে অনেক পিছিয়ে পড়ে। আজ বাংলার রাজনীতিতে সিপিআইএমের কোনও অস্তিত্ব না থাকলেও আজও রাজ্যের মানুষ অতীতে সিপিআইএমের অত্যাচারের কথা ভোলেনি। বামফ্রন্ট শাসনে ছোট আঙারিয়া হত্যাকান্ডের কথা আজও হাড়হিম করে দেয়। দুই দশক আগের ওই নারকীয় অত্যাচারের ঘটনা আজও বঙ্গবাসীর মানসপটে রয়ে গেছে।
২০০১ সালে ছোট আঙারিয়া হত্যাকান্ডের ঘটনায় তোলপাড় হয়ে উঠেছিল রাজ্য রাজনীতি। সেসময় পশ্চিমবঙ্গে বিশেষ করে পশ্চিম মেদিনীপুরে বামেদের ব্যাপক প্রভাব ছিল। বিরোধী দল হিসাবে তৃনমূল আত্মপ্রকাশের চেষ্টা করলেও বামেদের কারনে মেদিনীপুরে ঘর ছাড়া হয় বহু তৃনমূল কর্মী। পশ্চিম মেদিনীপুরের গড়বেতার ছোট আঙারিয়া গ্রামে সেবছর স্থানীয় বাম নেতাদের আশ্বাসে কিছু তৃনমূল কর্মী বাড়ি ফিরে আসে। ২০০১ সালের ৪ জানুয়ারি ছোট আঙারিয়াতে বক্তার মন্ডলের ঘরে উপস্থিত ছিল কিছু তৃনমূল কর্মী। হঠাৎই রাতের বেলায় একদল দুর্বৃত্ত বক্তার মন্ডলের বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেয়। এমনকী দুর্বৃত্তরা বক্তার মন্ডলের বাড়ি ঘিরে দাঁড়িয়েও ছিল যাতে কেউ পালাতে না পারে। বলা হয় যারাই বাড়ি থেকে বেরিয়ে পালাতে গিয়েছিল তাদের উপর গুলি চালানো হয়েছিল, ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করা হয়েছিল। ভয়াবহ এই ঘটনায় পাঁচজন তৃনমূল কর্মীর মৃত্যু হয়, আরও পাঁচজনের দেহ লোপাট করে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে দুর্বৃত্তদের বিরুদ্ধে।
বিভৎস এইঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগ ওঠে পশ্চিম মেদিনীপুরের গড়বেতার তৎকালীন প্রতাপী বাম নেতা সুকুর আলি ও তপন ঘোষের বিরুদ্ধে। এছাড়াও গড়বেতার দোর্দণ্ডপ্রতাপ সিপিআইএম নেতা সুশান্ত ঘোষ ও দীপক সরকারের বিরুদ্ধে এই ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগ ছিল। বক্তার মন্ডল কোনওরকমে প্রানে বেঁচে গিয়েছিলেন এবং তিনিই ছিলেন এই ঘটনার প্রধান সাক্ষী। তৃনমূল কর্মীদের মুন্ডুচ্ছেদ করা, লাল বাতি যুক্ত গাড়ি করে মৃতদেহ লোপাট করে দেওয়ার অভিযোগও উঠেছিল সিপিআইএমের বিরুদ্ধে।
২০০১ সালে সিবিআই এই ঘটনায় মূল অভিযুক্ত তেরো জনের মধ্যে আটজনকে গ্রেফতার করেছিল কিন্তু আদালতে বক্তার মন্ডলের বিপরীত সাক্ষ্যের জন্য তারা ছাড়া পেয়ে যায়। সিপিআইএম কর্মীদের বিরুদ্ধে বক্তার মন্ডল সহ সাক্ষীদের ভয় দেখিয়ে বয়ান পরিবর্তনের অভিযোগ উঠেছিল। এই ঘটনার দীর্ঘ সাত বছর পালিয়ে থাকার পর সুকুর আলি ও তপন ঘোষকে ২০০৭ সালে গ্রেফতার করা হয়। ২০১১ সালে পুনরায় সিবিআই এই ঘটনার তদন্ত শুরু করলে ২০১৩ সালে কোর্টে বক্তার মন্ডল এবার সঠিক সাক্ষ্য দেয়, তিনি স্বীকার করেন তাকে চাপ দিয়ে ভুল সাক্ষ্য দিতে বাধ্য করা হয়েছিল।