প্রায় ২৫০ বছর পর আবারও সাধুদের প্রতিবাদের সাক্ষী থাকলো পশ্চিমবঙ্গ সহ গোটা দেশ
ব্রিটিশ শাসনে ভারতবর্ষে প্রথম বিদ্রোহের আগুন জ্বলে ওঠে ১৭৭০ এর দশকে। ১৭৭১ সালে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সাথে সংঘর্ষে ১৫০ জন ফকির সন্ন্যাসীর মৃত্যু হয়। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে পূর্ববঙ্গে বা অধুনা বাংলাদেশের নাটোর, রংপুরে ব্রিটিশ বিরোধী ব্যাপক আন্দোলন তৈরি হয়। সেসময় ভারতবর্ষে হিন্দু ধর্মের দশনামী নাগা সন্ন্যাসীরাও ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বিরুদ্ধে দুটি আন্দোলন শুরু করে। তৎকালীন ভারতে ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে এই তিনটি বিদ্রোহ সন্ন্যাসী বিদ্রোহ বলা হয়। সেই ঘটনার ২৫৩ বছর আবারও ভারতে যেন সন্ন্যাসী বিদ্রোহের পটভূমি তৈরি হল। অতীতের মতো এবারও সন্ন্যাসী বিদ্রোহ ২.০ এর পটভূমি বাংলা। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিতর্কিত মন্তব্যের প্রতিবাদে হিন্দু সাধু সন্তরা গতকাল কলকাতায় বিশাল পদযাত্রা করে।
সম্প্রতি লোকসভা নির্বাচন উপলক্ষে জনসভায় বেলেডাঙার ভারত সেবাশ্রম সংঘের সন্ন্যাসী কার্তিক মহারাজের বিরুদ্ধে মুখ্যমন্ত্রী বুথে তৃনমূল এজেন্টকে বসতে না দেওয়ার অভিযোগ করেন। এমনকী মুর্শিদাবাদের শক্তিপুরে কার্তিক মহারাজের বিরুদ্ধে দাঙ্গারও অভিযোগ করেন তিনি। এরপরেই মুখ্যমন্ত্রীর এসব বিতর্কিত মন্তব্যের সমালোচনা শুরু হয় গোটা দেশ জুড়ে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী স্বয়ং ভারতের সাধু, সন্তদের বিরুদ্ধে এরকম মন্তব্যের কড়া সমালোচনা করেছেন। কিছু দিন আগেই তৃনমূল বিধায়ক মুর্শিদাবাদের এক সভা থেকে হিন্দুদের ভাগীরথীতে ফেলে দেওয়ার হুমকী দিয়েছিল। সেই ঘটনাকে কেন্দ্র করে দেশব্যাপী তৃনমূল কংগ্রেসের আগে থেকেই সমালোচনা করা হচ্ছিল, এবার মুখ্যমন্ত্রীর এসব বিতর্ক যেন আগুনে ঘি ঢালে। মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে ইতিমধ্যেই ভারত সেবাশ্রম সংঘ আইনি পদক্ষেপ নিয়েছে। বেলেডাঙার ভারত সেবাশ্রম সংঘে হামলার আশঙ্কায় আগেই কলকাতা হাইকোর্টে নিরাপত্তা দাবী করেছেন কার্তিক মহারাজ।
পশ্চিমবঙ্গ সহ দেশের বিভিন্ন হিন্দু সাধু সম্প্রদায়ও মুখ্যমন্ত্রীর এমন মন্তব্যের বিরুদ্ধে আগেথেকেই ঘোষনা করেছিল ২৪ মে কলকাতায় বিশাল পদযাত্রা করবে। সেই মতো গতকাল সকাল থেকেই গড়িয়ার ভারত সেবাশ্রম সংঘ, ক্যামাক স্ট্রিটের ইস্কন মন্দির, গোলপার্ক ও নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মঠ, গড়িয়াহাটের মহানির্বান মঠ, যাদবপুরের রামঠাকুর আশ্রম, নাকতলার শ্রীগুরু সংঘ আশ্রম, বাবা লোকনাথ আশ্রম, মতুয়া মহাসংঘ, বিজয়গড় মন্দির, বিজয় শ্রীমঠ সহ আরও বহু হিন্দু সংগঠনের হাজার হাজার সাধু সন্ন্যাসীরা গেরুয়া বস্ত্র পরিধান করে মহানগরে এসে উপস্থিত হন। তপ্ত রাস্তায় খালি পায়ে মহানগরের রাস্তায় শঙ্খধ্বনি সহযোগে কার্তিক মহারাজের নেতৃত্বে বাগবাজারে সারদা মায়ের বাড়ি থেকে খালি পায়ে পদযাত্রা শুরু হয়ে গিরিশ অ্যাভিনিউ, বাগবাজার স্ট্রিট, শ্যামবাজার এবং বিধান সরনি হয়ে উপস্থিত হয় সিমলা স্ট্রিটে স্বামী বিবেকানন্দের বাড়ির সামনে।
মুখ্যমন্ত্রীর কার্তিক মহারাজের বিরুদ্ধে বিতর্কিত মন্তব্য ছাড়াও, সম্প্রতি দুষ্কৃতিদের দ্বারা রামকৃষ্ণ মিশনের জমি অধিগ্রহনও ছিল এই পদযাত্রার আরও একটি কারন। সাধু সন্ন্যাসীদের এই পদযাত্রাকে অসংখ্য মানুষ সম্মান জানান। রাজ্যের অন্যান্য বেশ কিছু জায়গাতেও গতকাল সাধু সন্ন্যাসীরা আজ মিছিল করেন। বিতর্কিত মন্তব্যের জন্য মুখ্যমন্ত্রীকে ক্ষমা চাওয়ার দাবী করে সাধুরা।