অফবিট

ছেলেদের রক্তমাখা ভাত খেতে বাধ্য করা হয়। সিপিআইএমের লাল সন্ত্রাসের হাড় হিম করা নিদর্শন সাঁই বাড়ির হত্যাকাণ্ড

কমিউনিজম বা বামপন্থী রাজনীতি যেদেশে গেছে সেই দেশের জন্যই অভিশাপের কারন হয়েছে। সোভিয়েত ইউনিয়নের হাত ধরে ভারতে কমিউনিস্ট দল গঠন হয়েছিল ১৯২০ এর দশকে। তবে কমিউনিস্ট দল কখনওই ভারতের রাজনীতির মূলকেন্দ্রে আসতে পারেনি। ১৯৬৪ সালে সিপিআই বা কমিউনিস্ট পার্টি অফ ইন্ডিয়া ভেঙে গিয়ে কমিউনিস্ট পার্টি অফ ইন্ডিয়া মার্ক্সবাদী বা সিপিআইএমের গঠন হয়। বর্তমানে শুধুমাত্র কেরালাতে সিপিআইএমের সরকার থাকলেও একটা সময় পশ্চিমবঙ্গ ও ত্রিপুরাও বামেদের ঘাঁটি ছিল। বাম শাসনে প্রতিটি রাজ্যেই অসংখ্য দূর্নীতি, কেলেঙ্কারির লক্ষ্য করা গেছে। পশ্চিমবঙ্গে সিপিআইএমের কারনে এমনই একটি নৃশংস, পাশবিক ঘটনা ঘটেছিল যা প্রমানকরে লাল সন্ত্রাস কতটা ভয়াবহ ছিল। পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলায় সাঁইবাড়ির নৃশংস হত্যাকান্ড ১৯৭০ এর দশকে পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল।

আজ থেকে ৫৪ বছর আগে ১৯৭০ সালের ১৭ মার্চ বর্ধমানের বীরহাটা এলাকায় প্রতাপেশ্বর শিবতলার পাশে সাঁইবাড়িতে যে নারকীয় ঘটনা ঘটেছিল তা জানলে আজও মানুষের গা শিউরে উঠবে। বর্ধমানের সাঁইবাড়ির সদস্যরা সেসময় ভারতের জাতীয় কংগ্রেসকে সমর্থন করতো। ১৭ মার্চ সকালে প্রত্যেকদিনের মতোই গোটা পরিবার একসাথে বসে জলখাবার খাচ্ছিল। নবকুমার সাঁই, তার স্ত্রী রেখারানি সাঁই সহ তার আরও তিন ভাই বিজয় সাঁই, মলয় সাঁই ও প্রনব সাঁইও ঘটনাস্থলেই উপস্থিত ছিল। এছাড়া তাদের মা মৃগনয়না সাঁই, বোন স্বর্নলতা, বোনের বর অমলাকান্ত ও তাদের ছয়মাসের ছোট ছেলে অমৃত কুমারও সেখানে ছিল। হঠাৎই সিপিআইএমের একদল বাড়িতে ঢুকে প্রথমেই প্রনব সাঁইকে হত্যা করে। প্রনব সাঁই সেসময় জলখাবার খাচ্ছিল, সেই অবস্থাতেই তাকে পেছন থেকে ছুরিকাঘাত করা হয়। বাইরে থাকা সিপিআইএমের কীছু গুন্ডা সাঁই বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেয় যাতে কেউ পালাতে না পারে। মলয় সাঁই কোনওরকমে পালিয়ে যায় প্রতিবেশীর বাড়িতে। সিপিআইএমের সন্ত্রাসীরা সেখানে তাকে নৃশংস ভাবে হত্যা করে। নবকুমার সাঁই এর চোখ কেটে উপড়ে নেওয়া হয় এবং সেখানে অ্যাসিড ঢেলে দেয় লাল সন্ত্রাসীরা, এরপর তাকেও হত্যা করা হয়। বাড়িতে উপস্থিত থাকা সাঁই বাড়ির প্রত্যেক পুরুষ মহিলাকে ব্যাপক আঘাত করা হয়। স্বর্নলতা সাঁইয়ের ছয় মাসের বাচ্চা ছেলেকেও আগুনে পুড়িয়ে মারার চেষ্টা করেছিল কমিউনিস্টরা। এমনকী সেসময় সেখানে থাকা নবকুমার সাঁইয়ের মেয়ের গৃহশিক্ষক জিতেন রায়কেও রান্নাঘরে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। সিপিআইএমের অত্যাচার থেকে রেহাই পায়নি বৃদ্ধা মৃগনয়না সাঁইও, তাকে তার ছেলেদের রক্তমাখা ভাত খেতে বাধ্য করা হয়। মৃগনয়না দেবী পরবর্তীকালে মানসিক ভারসাম্যহীন অবস্থায় মারা যান।
এই নৃশংস ঘটনার সাথে জড়িত ছিল সিপিআইএমের শীর্ষস্থানীয় নেতৃত্ব বিনয় কোঙার, অমল হালদার, অনিল বোস, নিরুপম সেনের মতো লোক। এরা কখনও সাজা পায়নি। তৎকালীন বামফ্রন্ট সরকার এই ঘটনার সমস্ত নথিপ্রমান নষ্ট করে দিয়েছিল বলে অভিযোগ ওঠে। এমনকী অভিযুক্তদের হয়ে লড়া উকিল ভবদীশ রায়কেও হত্যা করে লাল সন্ত্রাসীরা কারন ভবদীশ রায় মামলা লড়তে অসম্মত হয়েছিল। এই ঘটনা ভারতীয় রাজনীতিতে এতটাই আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল যে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী নিজে এসেছিল বর্ধমানে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *