অফবিট

ভূতের সঙ্গে বিয়ে দেওয়া হয় যে দেশে

দাম্পত্য জীবন হল যে কোন মানুষের ক্ষেত্রে একটা নতুন অধ্যায়। অনেকের আবার এই বিয়েকে ঘিরে নানান স্বপ্ন থাকে। আজকালকার দিনে তো অনেকে ডেস্টিনেশন ওয়েডিং করে। সম্প্রতি এক সমীক্ষায় দেখা গেছে অ্যারেঞ্জ ম্যারেজ থেকে লাভ ম্যারেজই বেশি হচ্ছে। অর্থাৎ এক কথায় বলা যায় যে যে কোনও মানুষ নিজের বিয়ে এবং বিবাহিত জীবন নিয়ে যথেষ্ট আবেগ প্রবণ এবং স্বপ্ন বিলাসী। তবে পূর্বে কেনিয়ায় বিয়ের দেওয়া হয় ভূতের সঙ্গে। বিষয়টা আজকালকার দিনে বড়ই অদ্ভুত। তবে পূর্ব কেনিয়ার নিয়ম অনুসারে কোন ব্যক্তির বিশেষ করে মহিলাদের ক্ষেত্রে সম্মতি থাকুক কিংবা না থাকুক তাদের পরম্পরা অনুযায়ী ভূতের সঙ্গে বিয়ে দেওয়া হতো। তাহলে একবার চোখ বুলিয়ে নেওয়া যাক এই পৌরাণিক রীতি কেমন ছিল এবং কিভাবে পালন করা হতো।

ইতিহাসের পাতা উল্টালে দেখা যাবে যে পূর্ব কেনিয়ায় কাম্বা সম্প্রদায়ের লোকজনেরা সদ্য মৃত্যু হওয়া পুরুষদের সঙ্গে তাদের গোষ্ঠীর নারীদের বিবাহ দিতেন। সেক্ষেত্রে অনেক সময় দেখা যেত মহিলাদের মধ্যে এই বিবাহ করার ইচ্ছা থাকত না। কিন্তু কাম্বা সম্প্রদায়ের বয়েস জ্যেষ্ঠদের এই ধারণা ছিল যে দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা এই প্রথাকে মেনে চললে জীবনের শৃঙ্খলা বজায় থাকবে।

কেনিয়ার এই সম্প্রদায়ের বাসিন্দারা এতটাই জীবনের শৃঙ্খলা পরায়ন ছিল যে তারা যুগ যুগ ধরে এই প্রথা লালন করে আসছিলেন। তাদের ভাষায় এই প্রথার নাম ছিল কুঙ্গামিয়া ইসিতোয়া। অর্থাৎ মৃত ব্যক্তির নাম সংরক্ষণ করা। এই পদ্ধতিটা ছিল অনেকটা এরকম যেকোনো পরিবারের পুরুষ সদস্যের মৃত্যু হলে প্রথমে তার দেহটিকে কবরস্থ করা হতো। এরপর তার ফটো সাজিয়ে তাতে মালা পরিয়ে আয়োজন করা হতো বিয়ের। তাদের গোষ্ঠীর মধ্যে থেকেই কোন এক মহিলার সঙ্গে দেওয়া হতো বিয়ে। এই পদ্ধতির মাধ্যমেই গোষ্ঠীর সদস্যরা বিশেষ করে মৃত ব্যক্তির পরিবারের সদস্যরা মনে করত যে এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তাদের মৃত ছেলের উত্তরাধিকারীকে রক্ষা করা হচ্ছে। এছাড়াও আত্মা হয়ে পরিবারের আশেপাশে বেঁচে আছে তাদের ছেলে।

ভূতের সঙ্গে বিয়ে হওয়া এই মেয়েদের জীবন ছিল অন্য ধরনের। কারণ এই সকল প্রথা বেশি প্রচলন ছিলো ধনী পরিবারগুলির মধ্যে। অর্থাৎ মোটা অর্থের বিনিময়ে গরিব পরিবারের মেয়েকে নিজের ছেলের সঙ্গে বিয়ে দিয়ে ঘরে তুলতেন তারা। এরপর আর পাঁচটা সাধারণ নববধূর মত বিবাহিত মেয়েরাও বাপের বাড়ি ছেড়ে মৃত ব্যক্তির স্ত্রী হয়ে শ্বশুর বাড়িতে আসতো। সেখানেই কাটতো তার জীবন। তারা বিবাহিত হলেও নিজেদের স্বামীকে কোনদিন চোখে দেখতে পেতেন না কারণ আত্মার সঙ্গে বিয়ে হতো তাদের। এই সমস্ত মহিলাদের অন্য কোন পুরুষ বিয়ের প্রস্তাব ও দিতেন না কারণ সকলেই জানতো ওই মহিলা বিবাহিত। এছাড়া যখন বংশ বৃদ্ধির সময় আসত তখন বিবাহিত মহিলার শ্বশুর বাড়ির লোকজনই অর্থ দিয়ে পুরুষ লোক ভাড়া করতেন যাদের শুক্রাণুর সহায়তায় বৃদ্ধি পাবে তাদের বংশ।

অনেক ঐতিহাসিক বই ঘাটলে প্রমাণ পাওয়া যাবে যে পূর্বে রীতি অনুযায়ী এই প্রথার প্রচলন ছিল। তবে বর্তমান দিনে এই সকল প্রথার আর কোনো প্রচলন দেখা যায় না। এমন অনেক মহিলা ছিলেন যারা মৃত স্বামীকে বিয়ে করেছিলেন তাদের বলা হত ভূতের স্ত্রী। আর পাঁচ জন স্ত্রীর মতোই মৃত স্বামীর পরিবারের সদস্য হতো এবং তার সম্পত্তির ভাগীদারও হতো ওই সকল মহিলারা। যদিও এই বিষয়ে শ্বশুর বাড়ির লোক কোনদিনই আপত্তি জানাতো না। কারণ তারাও মনে করত যে তাদের ছেলের স্ত্রী হওয়ার জন্য তাদেরও এই বাড়িতে সমান অধিকার রয়েছে এবং তারা সেই অধিকার ঘরের বউকে দিত।

স্কুপার ওয়েবসাইটের একটি রিপোর্টের তথ্য মতেঃ- প্রথমে ধনী ব্যক্তিরা মোটা অর্থ যৌতুক হিসেবে প্রদান করত মহিলাদের পরিবারকে। এরপরে অর্থের বিনিময়ে তারা ভূতের সঙ্গে বিয়ে দিত নিজের মেয়ের। সমাজের সামনে পদ্ধতিটি সম্মানজনক হলেও পরবর্তীতে বংশপ্রতির জন্য গোপনে অর্থ দিয়ে নিয়ে আসা হতো এক পুরুষকে। তারপর যখন ওই মহিলা গর্ভবতী হয়ে যেতেন তখন তার শ্বশুর বাড়ির লোক এবং সমাজের লোকজন মনে করতেন মৃত ছেলেরই উত্তরাধিকার ওই সন্তান।

যদিও আজকের দিনে কেনিয়ার বহু মানুষ এই প্রথার উচ্চারণ করেন না। এছাড়াও অনেকের দাবিতে কোনদিন এরকম প্রথা ছিল না কাম্বা সম্প্রদায়ে। তবে আজও কিছু কিছু বিধবা মহিলা বলেন যে তাদের বিয়ে হয়েছে মৃত স্বামীর সঙ্গে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *