অফবিট

বিদেশে ঘুরতে যেতে বেশী পছন্দ করেন তাদের ক্ষেত্রে এই রোগটি বেশী দেখা যায়। অজানা কিছু মানসিক রোগ

শরীর থাকলেই অসুখ হবে। তবে সব মানুষের যে একই রকম অসুখ হবে তার কোন মানে নেই। সেরকমই বেশ কয়েকটি অদ্ভুত মানসিক রোগের কথা এই প্রতিবেদনা আলোচনা করা হয়েছে। যা শুনলে অবাক হবে যে কোন মানুষ। তবে অনেকেই মানসিক রোগকে রোগ হিসাবে মানতে চান না। কিন্তু চিকিৎসকদের মতে মানসিক রোগ হচ্ছে সবচেয়ে ভয়ংকর ও গুরুতর একটি অসুখ।

I) প্যারিস সিন্ড্রোম:- যারা মূলত বিদেশে ঘুরতে যেতে বেশি পছন্দ করেন তাদের ক্ষেত্রে এই রোগটি বেশি দেখা যায়। বিশেষ করে জাপানিদের মধ্যে বেশি লক্ষণ করা যায়। কারণ জাপানিরা স্বভাব চরিত্রের দিক থেকে খুবই ভদ্র এবং নম্র প্রকৃতির। তাই তারা নিজেদের দেশ থেকে যখন প্যারিসে ঘুরতে যায় তখন প্যারিসের সৌন্দর্যকে দেখে তাদের খুব দ্রুত মেন্টাল ব্রেক ডাউন হয়ে যায়। তাই জাপানিরা বেশী দিন প্যারিসে থাকতে পারে না। সেই দিক থেকে বিচার করতে গেলে ফরাসিরা খুব কঠোর এবং রুঢ় স্বভাবের হয়। তাদের খুব একটা মেন্টাল ব্রেক ডাউন হয় না। তবে আচমকা বিদেশে ঘুরতে গিয়ে এভাবে মানসিক স্থিতির পরিবর্তনকে এককথায় কালচার শকড বলে। যেহেতু প্যারিসে গেলেই মানুষের মধ্যে এই ধরনের রোগ বেশি দেখা যায় তাই এই রোগের নামকরণ করা হয়েছে প্যারিসের নাম দিয়ে।

II) স্টেন্ডহাল সিন্ড্রোম:- পৃথিবীতে এমন কিছু মানুষ রয়েছে যারা আর্ট বা কোন ভাস্কর্যরকে খুবই ভালোবাসে। তবে কিছু কিছু মানুষ এমনও রয়েছে যারা খুব সুন্দর আর্ট কিংবা ভাস্কর্য দেখলে সহ্য করতে পারে না তারা অসুস্থ হয়ে যায়। তাদের মাথা ঝিমঝিম করে আবার অনেক ক্ষেত্রে হার্টবিট বেড়ে যায় এবং হ্যালোসিনেশন পর্যন্ত হয়ে থাকে। এই ধরনের রোগকে স্টেন্ডহাল সিন্ড্রোম বলে।

III) ডায়োজেনেস সিন্ড্রোম:- কিছু মানুষ মনে করেন যে পৃথিবীতে যা কিছু রয়েছে সবই মূল্যহীন। সেই মানুষটা একপর্যায়ে এমন পরিস্থিতিতে পৌঁছে যায় যে নিজের অস্তিত্বকেও মূল্যহীন মনে হতে থাকে। অনেক সময় বয়স্কদের ক্ষেত্রে এই রোগের লক্ষণ দেখা যায়। কিন্তু গ্রিক দার্শনিক ডায়োজেনেসের ক্ষেত্রে যৌবনকালীন সময়ে এই রোগটি দেখা গিয়েছিল। তিনি একটি ব্যারেল বা পিপার ভেতরে বসবাস করতেন। এবং মনে করতেন যে পৃথিবীতে অস্তিত্বহীন হয়ে রয়েছেন তিনি। যেহেতু খুব অল্প বয়সে গ্রীক দার্শনিকের এই রোগ ধরা পরেছিল তাই তার নামানুসারে রোগের নাম করা হয়েছিল ডায়োজেনেস সিন্ড্রোম। 

IV) অটোফ্যাজিয়া সিন্ড্রোম:-  কোন মানুষ খুবই বিষন্ন হয়ে গেলে এবং তার সিজোফ্রেনিয়া দেখা দিলে তার অটোফ্যাজিয়া সিনড্রোম হওয়ার চান্স বেশি। তবে যদি কোন মানুষ এই মানসিক রোগে আক্রান্ত হয়ে যায় সে ক্ষেত্রে তারা উদ্ভট আচরণ করতে থাকে। এমনকি তারা এতটাই বিকারগ্রস্ত হয়ে যায় যে অনেক সময় নিজেরাই নিজেদের শরীরের কোন অংশ কামড়ে ধরে আবার কোন অংশ খেয়েও ফেলে। এক কথায় যাদের এই মানসিক সমস্যাটি রয়েছে তারা ক্রমাগত নিজের শরীরকে ব্যথা দিতে থাকে।

V) জেরুজালেম সিন্ড্রোম:- এই মানুষের রোগ বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ধার্মিক মানুষের মধ্যে দেখা যায়। এই রোগে আক্রান্ত হলে যে কোন ব্যক্তি দেখতে পায় যে যীশু তার ঘরে উপস্থিত রয়েছেন এবং তাকে জেরুজালেমে যাওয়ার জন্য নির্দেশ দিচ্ছেন। অনেকেরই জেরুজালেমের যাওয়ার এই অদম্য ইচ্ছাই পরবর্তীতে মানসিক রোগে পরিণত হয়েছে। 

VI) অনিওম্যানিয়া সিন্ড্রোম:- প্রত্যেকটি মানুষের ভিন্ন ধরনের ইচ্ছা থাকতেই পারে। কিন্তু কোন ইচ্ছাকেই এতটা গুরুত্ব দেওয়া উচিত না যে সেটা মানুষের উপর ভারী হয়ে যায়। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় যে অনেক মহিলারাই কেনাকাটা করতে পছন্দ করেন। কিন্তু কিছু কিছু মহিলার ক্ষেত্রে এমনও দেখা গেছে যে তারা এতটাই কেনাকাটা করতে পছন্দ করেন যে যতক্ষণ না টাকা সম্পূর্ণরূপে শেষ হচ্ছেন ততক্ষণ শপিং করা থামান না। এটাও এক ধরনের মানসিক রোগ যাকে বৈজ্ঞানিক ভাষায় অনিওম্যানিয়া সিন্ড্রোম বলে।

VII) কটার্ড’স সিনড্রোম:- এটি এক ধরনের মানসিক তথা স্নায়বিক রোগ। এই রোগে আক্রান্ত মানুষ নিজেকে মৃত আবার কখনো অমর বলে মনে করেন।

VIII) ক্যাপগ্রাস ডেলুশন:- এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরা সব সময় মনে করেন যে তাদের পরিবারের সদস্যরা কোন এক কারণ বসত একই রকম দেখতে হয়ে গেছে। বিশেষ করে সে তার স্ত্রীকে বেশি সন্দেহ করে। কারণ ওই ব্যক্তির মনে হয় অন্য কোন মানুষ তার স্ত্রীর রূপ ধরে এসে তার সঙ্গে সহবাসের চেষ্টা করছে। এই ভেবে নেওয়া রোগটাকেই ক্যাপগ্রাস ডেলুশন বলে। 

IX) অ্যামপিউটি আইডেন্টিটি ডিজঅর্ডার:- এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি অনেক সময় মনে করেন যে তার নিজের শরীরের কোন একটি অঙ্গ ছাড়া তারা ভালোভাবেই জীবন যাপন করতে পারবেন। সে কারণে এরা নিজেরাই নিজেদের অঙ্গ ছেদ করার চেষ্টা করেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *