অফবিট

নিজের দেশকে রক্ষা করতে কাককেও ট্রেনিং দিয়েছিল মার্কিনরা

নিজের দেশকে রক্ষা করতে বা কোন যুদ্ধ জয় করতে অনেক বিকৃত পথ অবলম্বন করতে হয় সেনাপ্রধান কিংবা কোন দেশের সরকারকে। যেমন কথাই বলে যুদ্ধ এবং প্রেমে সমস্ত কিছুই চলে। সেরকমই যদি একজন সিআইএ এজেন্ট যদি কাক হয় তো ক্ষতি কি ! বিষয়টা আশ্চর্য লাগলেও বাস্তবে সত্য। এই ঘটনাটা আনুমানিক আজ থেকে কয়েক বছর পূর্বে তখন চলছিল আমেরিকা এবং রাশিয়ার স্নায়ু যুদ্ধ।

সেই সময় আমেরিকা এবং রাশিয়ার মধ্যে চলছিল রেষারেষির যুদ্ধ। সামরিক, রাজনৈতিক এবং প্রযুক্তিগত দিক দিয়ে একে অপরকে দিচ্ছিল টক্কর। এমন পরিস্থিতিতে যে কোন পন্থা অবলম্বন করে অন্য দেশকে নিজেকে দেখানোটাই ছিল তাদের কাছে মূল ধর্ম। সেই কারণে মানুষের পাশাপাশি এবার জন্তুদেরকেও গোয়েন্দা বানাতে শুরু করেছিল সিআইএ আধিকারিকেরা। যদিও কাককে এজেন্ট বানানোর আগে তাদের সঙ্গে ছিল একোস্টিক বিড়াল’। তারা বিড়ালের শরীরে লিসেনিং ডিভাইস বসিয়ে সেটাকে পর্যাপ্ত ট্রেনিং দিয়ে ছেড়ে দিতো, যাতে কোনো গোপন মিটিংস্থলে গিয়ে বসে চুপচাপ জিভ দিয়ে নিজের পা চাটতে চাটতে সবার কথা শোনা যেতে পারে। বিড়ালের মতই কাককেও তারা একইভাবে ট্রেনিং দিয়েছিল।

যদিও কাককে ট্রেনিং দিতে সিআইএ আধিকারিকেরা হায়ার করেছিল হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির দুই অ্যানিমেল সাইকোলজিস্টকে – বি এফ স্কিনার এবং বব বেইলি। দুইজনেই এনিমেল বিহেভিয়ারিস্ট। এই দুজনের মধ্যে অবশ্য স্কিনার ক্যারিয়ার বেশ সমৃদ্ধ। ২য় বিশ্বযুদ্ধের সময় তিনি ‘পিজন মিসাইল’ প্রজেক্টের তত্ত্বাবধানে ছিলেন।

তিনি এই পিজিয়ান মিসাইল প্রজেক্টটির মাধ্যমে পায়রাদের খুব ভালোভাবেই প্রশিক্ষণ দিতেন। এই পদ্ধতিতে একটি মিসাইলের মধ্যে খোপ তৈরি করে সেখানে রাখা হতো পায়রাদের। এরপর একটি নির্দিষ্ট বিন্দুতে পায়রারা নিজেদের ঠোট দিয়ে ঠোকরাতে থাকলে লক্ষ্যে পৌঁছে যেত সেই মিসাইল। এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে অতি সহজেই লক্ষ্য স্থির করা যেত। সাধারণ মিসাইলে যেকোনো কারণে সিগন্যাল জ্যামিং হতে পারে এবং সেই মিসাইলটি নিজের লক্ষে পৌঁছাতে নাও পারে। তবে পায়রা মিসাইলের ক্ষেত্রে এই ত্রুটিটি হতো না। যদিও এই প্রক্রিয়া বেশি দিন কার্যকর করা সম্ভব হয়নি কারণ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত পায়রারা খুব তাড়াতাড়ি মরে যেত। আর অন্য পায়রা এনে তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য পর্যাপ্ত পায়রাও পাওয়া সম্ভব হচ্ছিল না।

পরবর্তীতে এই দুই বিজ্ঞানী একটি কাককে লিসেনিং ডিভাইস হিসেবে ব্যবহার করা শেখালেন। তারা ওই কাকটিকে শেখালেন কিভাবে অন্য একটি বিল্ডিংয়ের জানলার কাছে লিসেনিং ডিভাইস রেখে আসতে হয়। এছাড়াও কিভাবে জানালার কাছে ঠোকা মেরে ক্যামেরার মাধ্যমে কিছু ফটো সংগ্রহ করা যায়। পাশাপাশি আরও কিছু নতুন পদ্ধতি কাককে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে শিখিয়েছিলেন এই বিজ্ঞানীরা।

শুধুমাত্র লিসেনিং ডিভাইস নয় একজন স্পাই হিসেবেও কাজ করেছে এই কাকেরা। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় যে, যদি কোন শত্রু পক্ষ হাতে অস্ত্র নিয়ে ঝোপের মধ্যে বসে থাকে তাহলে সেই কাক তার মালিককে সংকেত পাঠাতো। যেমন কাকের গায়ে একটি সিগন্যাল ডিটেক্টর চিপ লাগানো থাকতো। কাক যেখানে যেখানে উড়ে যেত সেই অনুযায়ী সিগনাল পেত তার মালিক। তবে কাক উড়তে উড়তে এরকম কোন শত্রুপক্ষকে জঙ্গলে ভেতরে দেখলে, সেই সংলগ্ন একটি গাছে গিয়ে বসে পড়তো। সিগন্যাল ডিভাইসও সেখানে গিয়ে বন্ধ হয়ে যেত। যার ফলে কাকের মালিক তথা সিআইএ বুঝে যেত কোথায় অবস্থান করছে শত্রু পক্ষ। দীর্ঘদিন ধরে সিআইএ-র হয়ে কাজ করে গিয়েছিল এই কাকেরা। পরবর্তীতে অবশ্য ১৯৭০ সালে এসআই কাকের বিষয়টিকে সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল।

তবে স্পাই কাকের বিষয়টি বন্ধ করতেই প্রশিক্ষণ দাতা এক বিজ্ঞানী বেইলি নিজের মতামত প্রকাশ করে জানিয়েছিলেন, কাক হোক কিংবা পেঁচা এরা কোন ধূর্ত প্রাণী নয়। বিভিন্ন সাহিত্যে পেঁচকে বুদ্ধি সম্পন্ন প্রাণী হিসেবে চিহ্নিত করলেও বাস্তবে সেটা নয়। কাকের কিছু ধূর্ততা থাকলেও বেশ কিছু ইঞ্জিনিয়ারিং দক্ষতার প্রয়োজন ছিল যেটা এই প্রোগ্রামে অত্যন্ত জরুরী ছিল। তবে কাকেরা সম্পূর্ণ একটা মিশন কমপ্লিট করতে সক্ষম। আবার কারও মতে তারা এতটাই ধূর্ত এবং বুদ্ধিসম্পন্ন যে বড় ডেস্ক এবং ছোট ডেস্কের মধ্যে তারা পার্থক্যটা বোঝে। তবে কাককে সঠিকভাবে ট্রেনিং দিলে তারা একটি ওয়ার্ডড্রপ থেকে ড্রয়ার খুলে ফাইল বের করেও আনতেও পারবে। সেক্ষেত্রে যথাযথ সময় ব্যয় করে তাদের ট্রেনিং দেওয়া আবশ্যক।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *