অফবিট

যৌনতা এবং অশ্লীলতার মতো রোমান সম্রাটরা আর কি কি করতেন বিনোদনের জন্য?

প্রাচীন রোম এমন একটি সভ্যতা যার স্থায়ীত্ব প্রায় ২ হাজার বছর থাকার পর বিলুপ্তির হয়ে গেলেও সেই সভ্যতার ভাষা,সংস্কৃতি, শিল্প, সাহিত্য, বিজ্ঞান আধুনিক যুগেও চর্চিত বিষয় হয়ে রয়েছে গেছে। এমনকি  প্রাচীন রোমে প্রচলিত থাকা সামাজিক আইনকানুনের অনেকাংশই অনুকরন করে তৈরি করা হয়েছিল বর্তমান দিনের পৃথিবীর প্রায় বেশিরভাগ স্বাধীন দেশের আইনকানুন। তাই সেই সভ্যতা নিয়ে আমাদের কৌতূহলের শেষ নেই। অনেকেরই মনের মধ্যে ওঠে নানা প্রশ্ন। সেখানকার সম্রাটদের কিভাবে জীবনযাপন করত? অবসর সময়ে কি কি করত তারা?

১. থিয়েটার

সেই সময়ে রোম সাম্রাজ্যের সাধারণ রোমান নাগরিকদের কাছে প্রশংসিত হওয়া রোমান সম্রাটের দ্বারা পরিচালিত কিছু বিনোদনের মধ্যে অন্যতম ছিল থিয়েটার এবং পারফর্মিং আর্ট।   

ওই সময় ব্যঙ্গ করা এই বিষয়টি ছিল সেখানকার অভিজাতদের প্রিয় বিষয়গুলি মধ্যে একটি। আর তারা এই ব্যঙ্গ বিষয়টাকে নিয়ে এসেছিল থিয়েটারে। ওই সময় ব্যঙ্গাত্বক বিষয়ক নাটক তৈরি করা হত এবং সেইগুলি অভিনেতা ও অভিনেত্রীদের দ্বারা মঞ্চে পরিবেশন করানো হত। তবে শুধু যে এইসব নাটকে অভিনেতা ও অভিনেত্রীরাই অভিনয় করতেন সেটা কিন্তু নয় এইসব নাটকে অভিনয়ে অংশগ্রহণ করতেন সেখানকার বেশ কিছু সম্রাটও। এইসব সম্রাটদের মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ছিলেন সম্রাট নিরো, যিনি নিষ্ঠুরতার জন্য সুপরিচিত ছিলেন।   

ওই সময় থিয়েটার সব শ্রেণীর মানুষদের পছন্দের একটি বিষয় হলেও থিয়েটারে অভিনয় করা অভিনেতা এবং অভিনেত্রীদের পতিতাদের থেকেও খারাপ দৃষ্টিতে দেখত তারা। সেই সময়ে  নৈতিকভাবে প্রশ্নবিদ্ধ বলে এই পেশাটিকে মনে করা হত। এছাড়াও অভিনয়কে একটি নিম্ন পেশা হিসেবেও গন্য করা হত। 

২. গ্ল্যাডিয়েটর গেমস ও রেস

গ্ল্যাডিয়েটর গেম খেলা সেই সময়ের সাধারণ মানুষদের মধ্যে অত্যন্ত জনপ্রিয়তা লাভ করেছিল। এই গেমটি খেলার জন্য ছিল ক্যালোসিয়ামের মতোই বেশ কিছু বিল্ডিং। এই সমস্ত জায়গায় যুদ্ধ ছাড়াও ঘোড়ার রেস খেলা হত।

ওই সময় গ্লাডিয়েরটররা বিপুল খ্যাতি অর্জন করেছিলেন সাধারণ মানুষের কাছে। অভিজাত রোমানরা বিনোদনের উপলক্ষ হিসেবে গ্লাডিয়েরটরদের যুদ্ধ উপভোগ করতেন। এই যুদ্ধে অংশগ্রহণ করত নিম্নশ্রেণির দাস এবং সৈনিকরাই। রোমান জনগণের একটি অংশ গ্লাডিয়েটরদের সাথে সম্রাট কমোডাসের প্রকাশ্যে যুদ্ধে অংশগ্রহণের ঘটনাতে ক্ষুব্ধ হয়েছিল। কারন কখনো তার যুদ্ধ সমান্তরাল এবং ন্যায্য ছিল না। তিনি তার দক্ষতা এবং শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করার জন্য আহত গ্লাডিয়েটর এবং দুর্বল হয়ে যাওয়া প্রাণীর সাথে যুদ্ধে অবতীর্ণ হতেন।

এছাড়াও ক্যালিগুলা নামের একটি সম্রাট ছিলেন যিনি ঘোড়ার রেসে বাজি ধরতেন। তবে তার বাজি ধরা ঘোড়া যদি রেসে হেরে যেত তাহলে সে খেলা শেষে তার বাজি ধরা ঘোড়াসহ চালককে হত্যা করে ত্যাগ করতেন সেই স্থান।  

৩. অত্যাধিক যৌণতা

প্রাচীন রোমে খুবই সাধারণ বিষয় ছিল নগ্নতা ও অশ্লীলতা। যৌনতা এবং অশ্লীলতার এই বিষয়গুলি রোমান সম্রাটদের মধ্যে বেশ পরিলক্ষিত হয়েছিল।

এই সমস্ত রোম সম্রাটের তালিকায় সবার উপরে নাম আসে রোম সম্রাট ক্যালিগুলার যিনি সবসময় নারী সাথে উন্মত্ত হয়ে থাকতেন। তিনি হাজার হাজার নারী দাসীকে প্রাসাদে নিয়ে আসতেন তার শয্যাসঙ্গী করার জন্য। তবে তিনি এতেও শান্ত ছিলেন না। তার নজর গিয়ে পড়ত শহরের সিনেটরদের স্ত্রী ও মেয়েদের প্রতি। শহরের সিনেটরদের স্ত্রী ও মেয়েদের জোড় করে নিজের যৌনদাসী বানাতেন।   

এমনকি কথিত আছে যে তার যৌন ক্ষুধা এতটাই ছিল যে তার যৌনাচারের শিকার হওয়ার থেকে বাদ যায়নি তার বোনও। তবে এই নিয়ে মতভেদ রয়েছে। এই দাবিগুলি অতিরঞ্জিত বলে মনে করেন ইতিহাসবিদরা।

এই তালিকায় আসে আরো একটি রোমান সম্রাটের নাম সম্রাট টাইবেরিয়াস যিনি ছিলেন একজন পেডোফাইল।  তিনি তার ভাগ্নে ক্যালিগুলাকে বাধ্য করেছিলেন একজন অপ্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ পতিতার সাথে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করতে।
এছাড়াও এই তালিকায় রয়েছে সম্রাট জুলিয়াস সিজারও,  তাকে প্রায়শই রোমান প্রজাদের মৃত্যুর সূচনাকারী ব্যক্তি হিসাবে মনে করা হত।

সম্রাট জুলিয়াস সিজার ছিলেন একজন উভকামী। দীর্ঘ সামরিক অভিযানের সময় তার পুরুষদের সাথে সম্পর্ক স্থাপন করার বিষয়টি নতুন কিছু ছিল না। এমনকি তিনি যৌন সম্পর্ক স্থাপন করেছিলেন বিথিনিয়া (বর্তমান তুরস্ক) এর রাজা নিকোমেডিসের সাথেও।  

৪. মদ পান ও ভোজনবিলাস

সেই সময়ে রোমান সম্রাটরা বেশি মত্ত থাকত ভোজনবিলাস এবং মদ পান করতে। প্রায়শই সম্রাটরা আয়োজন করতেন নৈশভোজের। নৈশভোজের খাদ্যতালিকায় থাকত বিভিন্ন পদের খাবার এবং পানীয়। ওই সময় অভিজাতরা মূলত দুটি বিশেষ ধরনের মদ পান করতেন। একটি হল ‘ক্যালডা’ এবং আরেকটি হল ‘মুলসুম’। ‘ক্যালডা’  মদটি তৈরি করা হত বিভিন্ন মশলার সংমিশ্রণে। যা শীতের রাতের নৈশভোজের জন্য সবচেয়ে উপযোগী পানীয় ছিল। এই পানীয়টি গরম গরম পরিবেষণ করা হত অতিথিদের মাঝে। 

‘মুলসুম’ ছিল রোমান সংস্কৃতি জুড়ে খুব জনপ্রিয় একটি পানীয়। এটি তৈরি করা হত মিষ্টি মধু দিয়ে। সেই সমাজে রেমানরা ওয়াইনে জল মিশিয়ে খেতেন। কারন তাদের সংস্কৃতিতে বিশুদ্ধ ওয়াইন পরিবেশন করা অসভ্যতা হিসাবে বিবেচিত হত। সেই জন্য তারা পার্টি শুরু হওয়ার আগে ওয়াইন গরম জলের সাথে মিশিয়ে পরিবেশন করতেন আর এটিই ছিল সেখানকার একটি ঐতিহ্য। সম্রাটের আয়োজিত করা নৈশভোজগুলোর খাদ্যতালিকায় থাকত ময়ূরের জিভ, ভাজা ডরমাইস ছাড়াও আরো কয়েক ডজন পদ। এত পরিমাণে খাবারের আয়োজন করা হত যে অনেক সময়ই অতিথিরা তা না খেয়ে চলে যেত।রোমান সম্রাটদের পছন্দের খাদ্যগুলির মধ্যে অন্যতম ছিল শুয়োরের মাংস। সেটিকে মধু এবং জলের সাথে মিশ্রিত ওয়াইন দ্বারা ভাজা সসেজের আকারে তারা খেতেন। তবে এখানেই শেষ নয়। রোমান সাম্রাজ্যের বৃদ্ধির পাশাপাশি শুরু করেছিল বিদেশী মশলার ব্যবসা। তারা  সৃষ্টি করেছিল একটি রন্ধনসম্পর্কীয় বিপ্লব। 

এই সাম্রাজ্যের সম্রাটরা যেভাবে জীবনযাপন করত তার থেকে একেবারে পৃথক ছিল সেখানকার সাধারণ নাগরীকদের জীবনযাপন। যেসব শখ সম্রাটরা পালন করত তা কল্পনারও বাইরের ছিল সাধারণ মানুষের কাছে। চরম অপ্রীতিকরতা, জমকালো ভোজ, ঘন ঘন থিয়েটারে দেখতে যাওয়া এই সমস্ত কিছু করা ক্ষমতার বাইরে ছিল সেখানকার বেশিরভাগ মানুষের কাছেই।

তবে এই সমস্ত বিষয়গুলি যে সকল সম্রাটের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য ছিল তা কিন্তু নয়, কারণ একটি উল্লেখযোগ্য সময় পর্যন্ত এই সাম্রাজ্য বিস্তৃত ছিল। যেমন ধরুন ২০ খ্রিস্টাব্দের সম্রাটদের কাছে সেটা স্বাভাবিক বিষয় ছিল সেটা ৮’শ শতাব্দীর সম্রাটের কাছে স্বাভাবিক বিষয় না ও হতে পারে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *