ফিচার আর্টিকেল

প্রাপ্ত তথ্য অনুসারে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে প্রাচীন ডাইনোসর হল ‘নিয়াসাসরাস’- চতুর্থ খণ্ড

ট্রায়াসিক যুগ। বলা হয় এই যুগে পৃথিবীর বুকে বিচরণ করত পৃথিবীর বুক থেকে হারিয়ে যাওয়া প্রাণী ডাইনোসররা। তাদের জীবাশ্ম থেকে পাওয়া তাদের সম্পর্কে নানা তথ্য। কে রকম ছিল এই  যুগের ডাইনোসররা?

ইওড্রোমেস

‘ইওড্রোমেস’ এই প্রজাতির ডাইনোসর ২৩১-২২৯ মিলিয়ন বছর পূর্বে আর্জেন্টিনায়
বিচরণ করত। এই ডাইনোসরের সময়কাল ছিল শেষ ট্রায়াসিক এবং মাংসাশী জাতের প্রাণী ছিল এই প্রজাতিটি।

১৯৯৬ খ্রিস্টাব্দে এটি আবিষ্কৃত হলেও ২০১১ পর্যন্ত এর নামকরণ এবং গবেষণা স্থগিত ছিল। প্রাথমিকভাবে মনে করা হয়েছিল যে এটি ইওর‍্যাপ্টরদের প্রজাতি, তবে পরবর্তীতে নিশ্চিত হওয়া যায় যে এটি একটি নতুন ডাইনোসর। এর আকার ছিল  বেশ ছোট, দৈর্ঘ্য ছিল ৩.৯ ফুট (১.২ মিটার), নাক থেকে লেজ পর্যন্ত এবং ওজন ছিল ৫ কেজি। এরা ছিল থেরোপডদের অন্যতম প্রথম সদস্য যারা বিখ্যাত ডাইনোসর টি-রেক্সের আদিপুরুষ। 

ইওর‍্যাপ্টর

‘ইওর‍্যাপ্টর’ এই প্রজাতির ডাইনোসর ২৩১-২২৮ মিলিয়ন বছর পূর্বে উত্তর-পশ্চিম আর্জেন্টিনায় বিচরণ করত। এই ডাইনোসরের সময়কাল ছিল শেষ ট্রায়াসিক এবং  সর্বভূক প্রাণী ছিল এই প্রজাতিটি।

১৯৯১ সালে প্রথম এর জীবাশ্ম আবিষ্কৃত হয়েছিল। তবে এখনও পর্যন্ত সম্পূর্ণ জীবাশ্ম পাওয়া সম্ভব হয়নি। এদের দু’ধরনেরই দাঁত ছিল মাংসাশী এবং তৃণভোজী। এই প্রজাতিটি খাদ্য ও শিকারের প্রাপ্যতার উপর একেক পরিবেশে খাপ খাইয়ে নেওয়ার ক্ষমতা ছিল।

অ্যালওয়াকেরিয়া

‘অ্যালওয়াকেরিয়া’ এই প্রজাতির ডাইনোসর ২২৮ মিলিয়ন বছর পূর্বে ভারতে
বিচরণ করত। এই ডাইনোসরের সময়কাল ছিল শেষ ট্রায়াসিক এবং সর্বভূক প্রাণী ছিল এই প্রজাতিটি।

প্রাক সরিসচিয়ান ডাইনোসর ছিল এরা। এদের দৈর্ঘ্য ছিল দেড় ফুট (৫০ সে.মি.) এবং ওজন ছিল মাত্র দুই কেজি।

প্লেটিওসরাস

‘প্লেটিওসরাস’ এই প্রজাতির ডাইনোসর ২১০ মিলিয়ন বছর পূর্বে ফ্রান্স, জার্মানি, সুইজারল্যান্ডে বিচরণ করত।  এই ডাইনোসরের সময়কাল ছিল শেষ ট্রায়াসিক এবং তৃণভোজী প্রাণী ছিল এই প্রজাতিটি।

এই ডাইনোসরের প্রজাতিটি সরোপড গোত্রের  অন্তর্ভুক্ত ছিল। এরা চার পায়ে হাঁটত এবং এদের পাঁচ আঙুল বিশিষ্ট হাত পা ছিল। এরা বড় বৃদ্ধাঙ্গুল বিশিষ্ট ছিল, যা দ্বারায় তারা আত্মরক্ষা এবং খাদ্য সংগ্রহ করত। এদের দৈর্ঘ্য ছিল ৭ মিটার। যোহান ফ্রিয়েডরিখ এঙ্গেলহার্ট ১৮৩৪ সালে এর জীবাশ্ম আবিষ্কার করেছিলেন। আবিষ্কারের ঠিক তিন বছর পর  হারমান ভন মেয়ার এটি ব্যাখ্যা করেন এবং নামকরণ করেন। জার্মানি থেকে প্রাপ্ত জীবাশ্ম থেকে অনুমান করা যায় যে খুব সম্ভবত এরা  দল বেঁধে বাসবাস করত।

সেলোফাইসিস

‘সেলোফাইসিস’ ২২৫-১৯০ মিলিয়ন বছর পূর্বে দক্ষিণ আফ্রিকা, যুক্তরাষ্ট্র, জিম্বাবুয়ে বিচরণ করত। এই প্রাণীটির সময়কাল ছিল শেষ ট্রায়াসিক এবং মাংসাশী জাতের প্রাণী ছিল এই প্রজাতিটি।

এদের দ্রুততা এবং তৎপরতা ছিল শিকার ধরার মূল অস্ত্র। এরা শিকার ধরার জন্য ব্যবহার করত তাদের ধারালো দাঁত এবং থাবা। এদের দৈর্ঘ্য ৩ মিটার এবং ওজন ১৫ কেজি ছিল। তবে এদের মাথার দৈর্ঘ্য বেশ বড় ছিল, প্রায় ২৭ সেন্টিমিটার।

লিলিয়েন্সটেরনাস

‘লিলিয়েন্সটেরনাস’ ২০৫-২০২ মিলিয়ন বছর পূর্বে ফ্রান্স, জার্মানিতে বিচরণ করত। এই প্রাণীটির সময়কাল ছিল শেষ ট্রায়াসিক এবং মাংসাশী জাতের প্রাণী ছিল এই প্রজাতিটি।

ডাইনোসরের এই প্রজাতিটি থেরোপড গোত্রের অন্তর্গত ছিল। এদের দৈর্ঘ্য ৫ মিটার এবং ওজন ছিল ১৩০-২০০ কেজি। এরা দ্বিপদী ছিল। হিউয়েন ১৯৩৪ সালে এর নামকরণ করেছিলেন।

থেকডোন্টোসরাস

‘থেকডোন্টোসরাস’ এই প্রজাতির ডাইনোসর  ২২৭-২০৫ মিলিয়ন বছর পূর্বে যুক্তরাজ্যে বিচরণ করত। এই ডাইনোসরের সময়কাল ছিল শেষ ট্রায়াসিক। সর্বভূক প্রাণী ছিল এই প্রজাতিটি।

সরোপড গোত্রের অন্তর্গত ছিল। এদের দৈর্ঘ্য ছিল ২.৫ মিটার।

রিওজাসরাস

‘রিওজাসরাস’ এই প্রজাতির ডাইনোসর ২২১-২১০ মিলিয়ন বছর পূর্বে আর্জেন্টিনায় বিচরণ করত। এই ডাইনোসরের সময়কাল ছিল শেষ ট্রায়াসিক। তৃণভোজী/সর্বভূক প্রাণী ছিল এই প্রজাতিটি।

ডাইনোসরের এই প্রজাতিটিও সরোপড গোত্রের অন্তর্গত ছিল। এদের দৈর্ঘ্য ছিল ৫.১৫ মিটার। বোনাপার্ট ১৯৬৯ সালে এর নামকরণ করেছিলেন। এখন পর্যন্ত এদের জীবাশ্ম প্রায় কুড়ি রকমের পাওয়া গিয়েছে।

মেলানোসরাস

‘মেলানোসরাস’ এই প্রজাতির ডাইনোসর ২২৭-২২১ মিলিয়ন বছর পূর্বে দক্ষিণ আফ্রিকায় বিচরণ করত। এই ডাইনোসরের সময়কাল ছিল শেষ ট্রায়াসিক। সর্বভূক প্রাণী ছিল এই প্রজাতিটি।

ডাইনোসরের এই প্রজাতিটিও সরোপড গোত্রের অন্তর্গত ছিল। এদের দৈর্ঘ্য ছিল ১২ মিটার। সিডনী এইচ হাটন ১৯২৪ সালে এর নামকরণ করেছিলেন।

মুসরাস

‘মুসরাস’ এই প্রজাতির ডাইনোসর ২২১-২১০ মিলিয়ন বছর পূর্বে আর্জেন্টিনায় বিচরণ করত। এই ডাইনোসরের সময়কাল ছিল শেষ ট্রায়াসিক এবং  তৃণভোজী প্রাণী ছিল এই প্রজাতিটি।

সরোপড গোত্রের অন্তর্গত ছিল এই প্রজাতির ডাইনোসর। এদের দৈর্ঘ্য ছিল ৩ মিটার। এদের জীবাশ্ম আবিষ্কৃত হয়েছিল ১৯৭০ খ্রিস্টাব্দের মাঝামাঝি সময়ে। এরপর হোসে বোনাপার্ট এবং মার্টিন ভিন্স ১৯৭৯ সালে এর নামকরণ করেছিলেন। 

কলোরাডিসরাস

‘কলোরাডিসরাস’ এই প্রজাতির ডাইনোসর ২২১-২১০ মিলিয়ন বছর পূর্বে আর্জেন্টিনায় বিচরণ করত।  এই ডাইনোসরের সময়কাল ছিল শেষ ট্রায়াসিক। সর্বভূক প্রাণী ছিল এই প্রজাতিটি।

সরোপড গোত্রের অন্তর্গত ছিল এই প্রজাতির ডাইনোসর। এদের দৈর্ঘ্য ছিল ৪ মিটার। এর প্রজাতির নাম ছিল ব্রেভিস। বোনাপার্ট ১৯৭৮ সালে এর নামকরণ করেছিলেন।

অ্যাসাইলোসরাস

‘অ্যাসাইলোসরাস’ এই প্রজাতির ডাইনোসর ২০৮-২০১ মিলিয়ন বছর পূর্বে ইংল্যান্ডে বিচরণ করত। এই ডাইনোসরের সময়কাল ছিল শেষ ট্রায়াসিক এবং তৃণভোজী প্রাণী ছিল এই প্রজাতিটি।

সরিসচিয়া গোত্রের অন্তর্গত এই ডাইনোসরের দৈর্ঘ্য ছিল ২ মিটার এবং ওজন ছিল ২৫ কেজি। পিটার গালটন ২০০৭ সালে এর নামকরণ করেছিলেন।

প্রোকম্পোসোগন্যাথাস

‘প্রোকম্পোসোগন্যাথাস’  ২২১-২১০ মিলিয়ন বছর পূর্বে জার্মানিতে বিচরণ করত।  এই প্রাণীটির সময়কাল ছিল শেষ ট্রায়াসিক এবং মাংসাশী জাতের প্রাণী ছিল এই প্রজাতিটি।

ডাইনোসরের এই প্রজাতিটি ক্ষুদ্র থেরোপড গোত্রের অন্তর্গত ছিল যাদের দৈর্ঘ্য ছিল মাত্র ১ মিটার। এদের সাথে মিল পাওয়া গিয়েছিল ওর্নিথোলেস্টেসের। ফ্রান্স ১৯১৩ সালে এর নামকরণ করেছিলেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *