ফিচার আর্টিকেল

প্রাপ্ত তথ্য অনুসারে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে প্রাচীন ডাইনোসর হল ‘নিয়াসাসরাস’- তৃতীয় খণ্ড

ট্রায়াসিক যুগ। বলা হয় এই যুগে পৃথিবীর বুকে বিচরণ করত পৃথিবীর বুক থেকে হারিয়ে যাওয়া প্রাণী ডাইনোসররা। তাদের জীবাশ্ম থেকে পাওয়া তাদের সম্পর্কে নানা তথ্য। কে রকম ছিল এই  যুগের ডাইনোসররা?

নিয়াসাসরাস

‘নিয়াসাসরাস’ ২৪৩ মিলিয়ন বছর পূর্বে তানজানিয়ায় বিচরণ করত। এই প্রাণীটির সময়কাল ছিল মধ্য ট্রায়াসিক। তবে কি খাদ্যাভ্যাস ছিল তা অজানাই রয়ে গিয়েছে।

প্রাপ্ত তথ্য অনুসারে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে প্রাচীন ডাইনোসর হল ‘নিয়াসাসরাস’। ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দে এর  জীবাশ্ম খুঁজে পাওয়া গেলেও তার উপর গভীরভাবে গবেষণা ২০১২ সালের আগে করা হয়েছিল না। তবে এর সম্পর্কে বেশি কিছু তথ্য জানা সম্ভব হয়নি কারন জীবাশ্মের পরিমাণ কম ছিল। বিজ্ঞানীরা প্রাপ্ত হাড়ের ওপর ভিত্তি করে অনুমান করেছেন যে এই ডাইনোসরের এর দৈর্ঘ্য ৬.৫ থেকে ১০ ফুট (২-৩ মিটার) এবং এর মধ্যে লেজও রয়েছে। বিজ্ঞানীরা ধারণা অনুসারে, নিয়াসাসরাস দ্বিপদী ছিল এবং হাতের ওপরের দিকে অস্থিময় ঝুঁটি ছিল যাকে ডেলটোপেক্টোরাল ক্রেস্ট বলা হয়। আর এর দ্বারাই প্রামানিত হয় যে এটি একটি ডাইনোসর। কারন এই ক্রেস্ট  সকল ডাইনোসরেরই রয়েছে। তবে খুলি আবিষ্কৃত না হওয়া জন্যে খাদ্যাভ্যাস সম্পর্কে সুনিশ্চিত কোন তথ্য পাওয়া সম্ভব হয় নি।   

শিন্ডেসরাস

‘শিন্ডেসরাস’  ২৩৫-২১০ মিলিয়ন বছর পূর্বে দক্ষিণ-পশ্চিম যুক্তরাষ্ট্রে বিচরণ করত।  এই প্রাণীটির সময়কাল ছিলশেষ ট্রায়াসিক এবং মাংসাশী জাতের প্রাণী ছিল এই ডাইনোসরটি।

হেরেরাসরিডস গোত্রের অন্তর্ভুক্ত ছিল এই ডাইনোসরের প্রজাতিটি। এখনও পর্যন্ত আবিষ্কৃত হওয়া প্রাচীনতম ডাইনোসরের তালিকায় রয়েছে এদের নাম। এরা আকৃতিগত দিক থেকে বেশ ছোট ছিল অন্যান্য ডাইনোসরের তুলনায় এবং এদের দৈর্ঘ্য ছিল লম্বায় সাড়ে ছয় থেকে সাড়ে সাত ফুট (২-২.৩ মিটার)। এরা দ্বিপদী ছিল এবং এর জীবাশ্ম ১৯৮৪ সালে আবিষ্কৃত হয়েছিল। ‘শিন্ডেসরাস’ এই নামকরণটি ভারী অদ্ভূত, যার অর্থ হল ভৌতিক সরীসৃপ।

স্টরিকোসরাস

‘স্টরিকোসরাস’ ২৩৩ মিলিয়ন বছর পূর্বে ব্রাজিলে বিচরণ করত। এই প্রাণীটির সময়কাল ছিল শেষ ট্রায়াসিক এবং মাংসাশী জাতের প্রাণী ছিল এই ডাইনোসরটি।

ডাইনোসরের এই প্রজাতিটিও হেরেরাসরিডস গোত্রের  অন্তর্ভুক্ত ছিল। এদের  দৈর্ঘ্য ছিল সাড়ে সাত ফুট (২.২৫ মিটার), ওজন ছিল ৩০ কেজি এবং  লেজের  দৈর্ঘ্য ছিল ৩১ ইঞ্চি। এরা খুব দ্রুত দৌড়ানোর পাশাপাশি ভাল শিকারী ছিল। বেশিরভাগ স্টরিকোসরাসের জীবাশ্ম অসম্পূর্ণ, শিরদাঁড়া, পা এবং নিম্ন চোয়ালবিশিষ্ট।

স্যাটার্নালিয়া টিউপিনিকিম

‘স্যাটার্নালিয়া টিউপিনিকিম’   ২৩৩ মিলিয়ন বছর পূর্বে ব্রাজিল এবং জিম্বাবুয়ে
বিচরণ করত। এই প্রাণীটির সময়কাল ছিল শেষ ট্রায়াসিক এবং মাংসাশী জাতের প্রাণী ছিল এই ডাইনোসরটি।

এই ডাইনোসরের প্রজাতিটি কোন শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত ছিল তা বিন্যাস অসম্ভব ছিল কারন এরা সরোপড এবং থেরোপডদের মিশ্রণ ছিল। এদের দৈর্ঘ্যে পাঁচ ফুট (১.৫ মিটার) ছিল। এই  দ্বিপদী প্রাণীটি লম্বা গলাবিশিষ্ট ছিল। এদের জীবাশ্ম বেশীরভাগ সান্টা মারিয়াতে পাওয়া গেলেও কিছু উর্বস্থী জিম্বাবুয়েতে পাওয়া যায়। এর থেকে বোঝা যায় যে এককালে দক্ষিণ আমেরিকা ও আফ্রিকা  সংযুক্ত ছিল।

হেরেরাসরাস

‘হেরেরাসরাস’ এই প্রজাতির ডাইনোসর   ২৩১ মিলিয়ন বছর পূর্বে উত্তর-পশ্চিম আর্জেন্টিনায় বিচরণ করত। এই ডাইনোসরের সময়কাল ছিল শেষ ট্রায়াসিক এবং মাংসাশী জাতের প্রাণী ছিল এই ডাইনোসরটি।  

এই ডাইনোসরের প্রজাতিটিও  হেরেরাসরিডস গোত্রের  অন্তর্ভুক্ত ছিল। এর সর্বপ্রথম জীবাশ্ম ১৯৫৯ সালে আবিষ্কৃত হয়েছিল। তবে এই ডাইনোসরের প্রজাতিটি কোন শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত ছিল ১৯৯৮ খ্রিস্টাব্দে সম্পূর্ণ নমুনা আবিষ্কৃত হওয়ার পূর্বে তা নির্ণয় করা সম্ভব হয়নি। বর্তমানে এই প্রজাতির ডাইনোসরকে থেরোপড শ্রেণীভুক্ত করা হয়েছে  যারা আধুনিক পাখির সরাসরি পূর্বপুরুষ। এদের আকার প্রাথমিক ডাইনোসরদের তুলনায় বেশ বড় ছিল। এদের দৈর্ঘ্য ছিল  ২০ ফুট (৬ মিটার) এবং ওজন ছিল ৩৫০ কেজি । এদের নিতম্ব এবং পায়ের হাড়ের গঠনের বেশ পার্থক্য ছিল পরবর্তী ডাইনোসরদের তুলনায়।

সানজুয়ানসরাস

‘সানজুয়ানসরাস’ এই প্রজাতির ডাইনোসর  ২৩১ মিলিয়ন বছর পূর্বে  উত্তর-পশ্চিম আর্জেন্টিনায় বিচরণ করত। এই ডাইনোসরের সময়কাল ছিল শেষ ট্রায়াসিক এবং মাংসাশী জাতের প্রাণী ছিল এই প্রজাতিটি।

এদেরকে হেরেরাসরাসের নিকটাত্মীয় বলা যায়। এদের জীবাশ্ম  সান জুয়ানে ১৯৯৪ খ্রিস্টাব্দে আবিষ্কৃত হয়েছিল। এরপর  ২০১০ সালে অস্কার এলকোবার এবং রিকার্ডো মার্টিনেজ আবিষ্কৃত স্থানের নামানুসারে এই ডাইনোসরটির নামকরণ করেছিলেন। সানজুয়ানসরাসের জীবাশ্মও অসম্পূর্ণ অবস্থাতেই পাওয়া যায়। প্রায় হেরেরাসরাসের মতো এদের শারীরিক গঠন হলেও এদের  নিতম্বের হাড় এবং টিবিয়া স্টরিকোসরাসের অনুরূপ ছিল।

প্যানফেগিয়া

‘প্যানফেগিয়া’ এই প্রজাতির ডাইনোসর  ২৩৩ মিলিয়ন বছর পূর্বে  উত্তর-পশ্চিম আর্জেন্টিনায় বিচরণ করত।  এই ডাইনোসরের সময়কাল ছিল শেষ ট্রায়াসিক। এদের কি খাদ্যাভ্যাস ছিল তা অজানাই রয়ে গিয়েছে তবে মনে করা হয় যে এরা সর্বভূক ছিল। 

২০০৬ খ্রিস্টাব্দে এদের জীবাশ্ম আবিষ্কার করেছিলেন আর্জেন্টাইন জীবাশ্মবিদ রিকার্ডো মার্টিনেজ। এদের সাথে  স্যাটার্নালিয়ার  মিল রয়েছে। গ্রীক শব্দ ‘প্যান’ এবং ‘ফেগেইন’  এই দুটি শব্দকে প্যানফেগিয়া এই শব্দটি এসেছে  গ্রীক শব্দ ‘প্যান’ এবং ‘ফেগেইন’  থেকে। এই ‘প্যান’ শব্দটির অর্থ হল সর্ব এবং ‘ফেগেইন’ যার অর্থ হল খাদক।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *