পলিথিন, কাগজ নাকি কাপড়- কীসের তৈরি ব্যাগ ব্যবহার করবেন?- প্রথম খণ্ড
আমরা সবাই জানি যে প্লাস্টিকের তৈরি ব্যাগ আমাদের পরিবেশের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকারক যার কারনে প্লাস্টিক পণ্যের ব্যবহার হ্রাসের উদ্দেশ্যে বিশ্বের অনেক দেশেই নিষিদ্ধ করা হয়েছে পলিথিন ব্যাগ ব্যবহার। তা সত্ত্বেও পলিথিনের ব্যবহার কমেনি। তাহলে যদি পরিবেশের উপর থেকে পলিথিনের ক্ষতিকারক প্রভাব হ্রাস করতে হয় তাহলে এর পরিবর্তে কি ব্যবহার করা যেতে পারে? এই প্রশ্ন বহু বার ওঠে। অনেকে এর জন্য প্লাস্টিকের ব্যাগের পরিবর্তে ব্যবহার করা শুরু করেছে কাপড়, সুতা কিংবা কাগজের তৈরি ব্যাগ। তবে সত্যিই কি প্লাস্টিকের চেয়ে অধিক পরিবেশবান্ধব কাগজের বা কাপড়ের তৈরি এই ব্যাগগুলো?
বিশেষজ্ঞদের মতে অনুযায়ী, চারটি বিষয়ের ওপর ভিত্তি করে এই প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যেতে পারে। সেগুলো হলো-
১. উৎপাদনের সময় কত শক্তি ব্যবহার করতে হচ্ছে ব্যাগ তৈরি করার জন্য?
২. কতটা টেকসই ব্যাগ? (অর্থাৎ একবার একটি ব্যাগ ব্যবহার করার পর সেটিকে কতবার পুনরায় ব্যবহার করা যেতে পারে?)
৩. কত সহজ রিসাইকেল করা সম্ভব?
৪. ব্যাগটি ফেলে দেওয়ার পর সেটি কত দ্রুত পঁচে যায় কিংবা পরিবেশের সাথে মিশে যায়?
কোন ধরনের ব্যাগ ব্যবহার করা উচিত আর কোন ধরনের নয় এই তুলনা করার আগে জেনে নেওয়া যাক যে এই ব্যাগগুলি সম্পর্কে কিছু তথ্য।
প্লাস্টিক ব্যাগ
গোটা বিশ্ব জুড়ে শপিং ব্যাগ হিসেবে দৈনন্দিন জীবনে যেটি সবেথেকে বেশী আমরা ব্যবহার করে থাকি সেটা হল পলিথিন ব্যাগ। আমরা জানি যে এক পদার্থ দিয়ে তৈরি করা হয় না সকল পলিথিন ব্যাগগুলি। আর এই ব্যবহৃত হওয়া বিভিন্ন ধরনের পদার্থের উপর নির্ভর করে যে পরিবেশের উপর ঠিক কতটা ক্ষতিকারক এই প্লাস্টিক। কারণ পরিবেশে সকল প্লাস্টিকের ক্ষতির মাত্রাও সমান নয়। এগুলো ভিন্ন ভিন্ন উপাদান দিয়ে তৈরি হয়, যেমন- উচ্চ-ঘনত্বের পলিথিন (HDPE), নিম্ন-ঘনত্বের পলিথিন (LDPE) ইত্যাদি। যার কারণে এদের আকার এবং আকৃতির মধ্যে তারতম্য দেখা যায়।
সুপারমার্কেট তথা দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহৃত হওয়া প্লাস্টিকের ব্যাগগুলোর অধিকাংশই তৈরি হয় উচ্চ-ঘনত্বের পলিথিন (HDPE) দিয়ে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পরিবেশ সংস্থার ২০১১ সালের এক গবেষণা তথ্য অনুসারে, এইচডিপিই ব্যাগে কার্বন ফুটপ্রিন্ট কম পরিমাণে থাকে। কিন্তু প্রশ্ন হল যে এই কার্বন ফুটপ্রিন্ট আসলে কি? কার্বন ফুটপ্রিন্ট বলতে এখানে বোঝানো হয়েছে যে কাগজের ব্যাগ বা কাপড়ের তৈরি শপিং ব্যাগ উৎপাদনের জন্য যে পরিমানে কাঁচামালের প্রয়োজন হয় তার তুলনায় এই ধরনের প্লাস্টিকের ব্যাগের উৎপাদন কম কাঁচামাল নির্ভর এবং উৎপাদন খরচও তুলনামূলক কম পাশাপাশি যখন এগুলোকে পুনঃব্যবহার করা হয় তখন এতে কার্বন ফুটপ্রিন্ট এর পরিমাণে আরও হ্রাস পায়।
নিশ্চয় এখন মনের মধ্যে প্রশ্ন উঠছে যে তাহলে পরিবেশের জন্য প্লাস্টিকের ব্যাগ তো ক্ষতিকারক নয়, সেক্ষেত্রে কি যত ইচ্ছা এগুলো ব্যবহার করা যেতে পারে? না বিষয়টি ঠিক সেরকম নয়। গবেষণাপত্র গুলোর ফলাফল তৈরি করা হয়েছে শুধুমাত্র কার্বন ফুটপ্রিন্টের ওপর নির্ভর করে। কার্বন ফুটপ্রিন্টের বিষয়টি ছাড়া অন্য সকল ক্ষেত্রের পরীক্ষা থেকে জানা গিয়েছে যে খুব কম স্কোর থাকে এই ধরনের প্লাস্টিক ব্যাগের। উৎপাদনের সময় এইগুলোতে ব্যবহৃত হওয়া জলের পরিমাণ, বায়ুমণ্ডলীয় অম্লতা বৃদ্ধি এবং জলাশয়ের ইউট্রোফিকেশনের মাত্রা থাকে খুব হতাশাজনক। যার ফলে ভয়াবহ প্রভাব পড়ে মানবজীবন তথা প্রাকৃতিক পরিবেশের উপর। এই ধরনের প্লাস্টিক প্রভাব বিস্তার করতে পারে মানুষের স্বাস্থ্য, সংবেদনশীল বাস্তুসংস্থান, বন এবং জলাধারের অম্লকরণে উপর। এছাড়াও অধিক জলাশয়ের ইউট্রোফিকেশনের কারণে জলাশয়ে বৃদ্ধি পায় শৈবাল এবং হ্রাস পেতে পারে অক্সিজেনের পরিমাণ।
উৎপাদনের পরে এই ধরনের ব্যাগে গড় কার্বন ফুটপ্রিন্টের স্তর গুলোর মান খারাপ হতে শুরু করে। সেই জন্য সর্বোচ্চ কতবার একটি ব্যাগকে পুনরায় ব্যবহার করা যেতে পারে সেই বিষয়ে আমাদের জেনে নেওয়াটা উচিৎ।
যেসমস্ত ব্যাগ নন-ওভেন পলিপ্রোপিলিন থেকে তৈরি হয় পরিবেশের উপরে সেগুলির প্রভাব কিছুটা ভিন্ন। পলিপ্রোপিলিন প্লাস্টিক দিয়ে তৈরি একটি পলিমার পুনর্ব্যবহারযোগ্য, তবে অন্যান্য পণ্য এতে বহন করার সময় এগুলো গলে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। পরিবেশগত প্রভাবের দিকের কথা চিন্তা করলে প্রচলিত প্লাস্টিকের তৈরি ব্যাগগুলো প্রায় ১০-১১ বার পুনরায় ব্যবহার করা দরকার। তবে এগুলো উৎপাদন করার পর সরবরাহ করা কিংবা বর্জ্য নিষ্কাশনের সময় যদি পরিবেশগত মান মেনে চলা না হয়, সেক্ষেত্রে পুনরায় ব্যবহারযোগ্য বিকল্পগুলোর চেয়ে এদের স্থায়িত্বের স্কোর সত্যিই বেশ কমে যায়।