ইভেন্ট

প্রতিদিন রাত বারোটা থেকে ১ টা পর্যন্ত, সপরিবারে স্নান করার জন্য মা নাকি মন্দির ছেড়ে চলে যান! ভারতবর্ষের কোথায় হয়?

৫০০ বছরের প্রাচীন নারনা কালীবাড়ি। এই মন্দিরে প্রতিদিন মা কালী সপরিবারে স্নান করেন। ব্রিটিশ আমলের বহু আগে, নবাব-বাদশাহদের সময় এই নারনা কালী মন্দির প্রতিষ্ঠিত হয়। যখন এই কালীবাড়ি তৈরি হয় সেই সময় চারিদিক ঘন জঙ্গলে পরিপূর্ণ ছিল। কথিত আছে, গ্রামের এক ব্যক্তি পুকুরের স্নান করতে নেমে একটি ঘট খুঁজে পেয়েছিলেন। পরে স্বপ্নাদেশ পেয়ে সেই ঘট প্রতিষ্ঠা করে মায়ের মন্দির তৈরি করেন।

সেই সময়‌ই মা কালীর মাটির মূর্তি তৈরি করেই পুজো শুরু হয়। বর্তমানে অবশ্য মাটির বদলে পাথরের মূর্তি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। অন্যান্য কালী মূর্তির থেকে নারনা কালী একটু আলাদা। দেবী দুর্গার রূপে পুজিত হন নারনা কালীবাড়ির মা কালী। একই সঙ্গে লক্ষ্মী, গণেশ, সরস্বতী, কার্তিক, জয়া-বিজয়া, রামচন্দ্র ব্রহ্মা-বিষ্ণু-মহেশ্বর ও যমরাজ‌ও আছেন। লোকমুখে কথিত আছে, গভীর রাতে স্নান করেন মা নারনা কালী। প্রতিদিন রাত বারোটা থেকে ১ টা পর্যন্ত, এই এক ঘণ্টা সপরিবারে স্নান করার জন্য মা নাকি মন্দির ছেড়ে চলে যান। 

মন্দিরের পূর্ব দিকে রয়েছে পুকুর। গ্রামের প্রবীণ ব্যক্তিরা অনেকই বলেন, তাঁরা মা নারনা কালীর রাত্রিকালীন স্নানের বিষয়টি উপলব্ধি করেছেন।

স্থানীয়দের কথা অনুযায়ী, রাত বারোটা থেকে একটা পর্যন্ত মন্দির চত্বর থেকে ভেসে আসে নুপুরের শব্দ। এলাকাবাসীদের দাবি, মা মন্দির থেকে হেঁটে যাওয়ার কারণেই ওই সময় নুপুরের শব্দ হয়। এই মন্দিরের সেবায়েত সুশান্ত সরখেল জানান, প্রথমে মা স্নানে যান। তারপর মায়ের সঙ্গে থাকা অন্যান্য দেবতারাও স্নান করেন। প্রতি বছর দীপাবলীর পরের দিন গোধূলি লগ্নে নারনা কালীবাড়ির বাৎসরিক পুজো অনুষ্ঠিত হয়। আবার গুড ফ্রাইডের দিন থেকে কয়েকদিন বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন হয়।

নিয়ম মেনে সারা বছর‌ই দু’বেলা পুজো হয়। দুপুরের পুজো শেষে মা কালীকে ভোগ নিবেদন করা হয়। সন্ধ্যের  সময় হয় আরতি। বংশ পরম্পরায় এই মন্দিরের পুরোহিতের দায়িত্ব পালন করছে সরখেল পরিবার। এই কালী প্রতিমাকে এতটাই জাগ্রত মনে করা হয় যে এক সময় গ্রামে অন্য কোনও দেবতার পুজো হত না। এমনকি মা কালী ছাড়া অন্য কোন‌ও দেবতার ছবি দেওয়া ক্যালেন্ডার বাড়িতে রাখা নিষিদ্ধ ছিল।পুরোহিত অমিতাভ সরখেল জানান, সেই সময় এই কালীবাড়ি ঘন জঙ্গলে ঘেরা ছিল।

মন্দির সংলগ্ন মাঠে তন্ত্র সাধনা করতেন সাধকেরা। সেই সময় মন্দিরের আশেপাশে বাঘের উপদ্রব‌ও ছিল। সন্ধ্যের সময় মায়ের আরতি করতে পুরোহিত সরখেলরা মন্দিরে পর্যন্ত আসতে ভয় পেতেন। তাই সন্ধ্যের সময় মায়ের পুজোর দায়িত্ব পালন করতো সাহসী চক্রবর্তীরা। সেই থেকে নারনা কালী মায়ের অংশীদারিত্ব পান চক্রবর্তীরা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *