বড় হতে না চাওয়ার একটি রোগ। পুরুষরা আক্রান্ত হয় বেশী
কিছু কিছু মানুষের মধ্যে দেখা যায় যে তারা তাদের আশেপাশের কোনো মানুষ কিংবা ঘটনার সাথে পুরোপুরি সম্পৃক্ত হয় না। কর্মক্ষেত্রেও স্থিতিশীল হতে পারে না, যার ফলে কিছুদিন পরপরই চাকরি পরিবর্তন করে। আর এর ফলে জীবনের একটি অংশ হয়ে ওঠে অর্থনৈতিক সঙ্কট।
যেখানে তার সমপর্যায়ের মানুষ এগিয়ে গেলেও সে তাদের থেকে একধাপ নীচে থাকে। শুধু কর্মক্ষেত্রেই নয় সংসারিক জীবন শুরু করা, পরিবার গঠন করা ইত্যাদি বিষয়েও পাত্তা দেয় না। তবে তারা সবসময় একাকীত্বে ভোগে। আর এই একাকীত্বের সমস্যা থেকে নিজেকে মুক্তি করার জন্য জড়িয়ে পরে মাদকাসক্তে। বাস্তবতার মুখোমুখি হওয়া থেকে পালাতে পারলেই যেন বাঁচে তারা।
কিন্তু কেন এই ধরনের অদ্ভুত চরিত্র দেখা দেয় মানুষের মধ্যে? এটি আসলে একটি রোগ যাকে বলা হয় পিটার প্যান সিনড্রোম। আর এই সমস্যা আক্রান্ত ব্যাক্তিরা প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পরও মুখ ফিরিয়ে রাখে জাগতিক সকল দায়িত্ব ও কর্তব্যের দিক থেকে, সমাজ সংসারের অংশ হওয়ার পরিবর্তে সেখান থেকে কি করে মুক্তি পাওয়া যাবে সেই পথের সন্ধান করে।
আর সবথেকে বড় বিষয় হল যে বড় হওয়া বা সাবালকত্ব হওয়ার ইচ্ছেটাই থাকে না তাদের মধ্যে। এই সমস্ত ব্যাক্তিরা মনে করে যে “ তীব্রভাবে যদি শুধু কামনা করা হয় তাহলেই, সত্যি হয় স্বপ্ন।”
কিন্তু স্বপ্ন সবার ক্ষেত্রে সত্যি হয় না সেটাই তারা বুঝতে চায় না। স্বপ্ন তাদেরই শুধু সত্যি হয় যারা নিজেদের স্বপ্ন দেখাতেই সীমাবদ্ধ না রাখে সেটি স্বপ্ন পূরণ করার জন্য কঠোর পরিশ্রমও করে।
এই না বোঝার ফল এসে দাঁড়ায় ভয়ানক। তারা নিজের একটি সুন্দর-সমৃদ্ধ ভবিষ্যতের সম্ভাবনাকে মেরে ফেলে। ক্যারিয়ারে নিজেদের যোগ্যতার সমতুল্য অবস্থানে কখনোও পৌঁছাতে না পারার পাশাপাশি ব্যক্তিজীবনে কোন অর্থবহ এবং টেকসই সম্পর্ক গড়ে তোলার ক্ষেত্রেও ব্যর্থতার সম্মুখীনও হতে হয় তাদেরকে।
এই সমস্যার জন্য একটি ২০ বছরের তরতাজা তরুন পরিনত হয় অসুখী, শেকড়বিহীন ৪০ বছরের মধ্যবয়স্কে, কিংবা খিটখিটে, বদমেজাজি ৬০ বছরের বৃদ্ধে।
‘পুরুষরা আক্রান্ত হয় বেশী’
ইউনিভার্সিটি অফ গ্রানাডা হতে প্রকাশিত একটি গবেষণা প্রবন্ধ অনুসারে, নারী-পুরুষ উভয়েই পিটার প্যান সিনড্রোমে আক্রান্ত হতে পারে, তবে এই রোগে নারীদের তুলনায় পুরুষদের আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা বেশি থাকে। আবার এটাও বলা যেতে পারে যে বেশিরভাগই পুরুষেরাই পিটার প্যান সিনড্রোমে আক্রান্ত হয়।
এই সমস্যা সৃষ্টি হওয়ার জন্য দায়ী করা যেতে পারে আমাদের এই পুরুষতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থাকে। কারন বর্তমান দিনেও এই সমাজে নারীদের তুলনায় পুরুষদের কাঁধেই বেশি দায়িত্বের বোঝা দেওয়া হয়ে থাকে। তবে অনেক পুরুষই প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পরও সেই চাপ সামলানোর যোগ্য হয়ে ওঠে সক্ষম হয় না, যার ফলে তাদের মধ্যে দেখা দেয় এই সমস্যা।
যেমন – একজন ৩০ বছর বয়সী পুরুষের কাছ থেকে দায়িত্বশীল আচরণ প্রত্যাশা করা হয় কিন্তু সেই ব্যক্তি হয়ত তখনও মানসিকভাবে একজন কিশোর রয়ে গেছে। সেক্ষেত্রে তার উপর দেওয়া দায়িত্বগুলো অন্য কেউ পালন করে দেবে এটা সে ভাবে, যেমনটি তার কিশোর বয়সে বড়রা করে থাকত।
অপর দিকে এই পিটার প্যান সিনড্রোমে নারীরা কম আক্রান্ত হওয়ার পিছনে বড় কারণ হতে পারে নারীদের মানসিক পরিপক্বতাও। নারীরা পুরুষদের থেকে দ্রুত মানসিকভাবে পরিণত এবং বাস্তববাদী হয়ে ওঠে, যার কারণে যেকোনো বাস্তব পরিস্থিতিতে তারাই পুরুষদের থেকে আগে সাড়া দেয়, এবং তারা নিজেদের অভিযোজিত করতে পারে পরিবর্তিত পরিস্থিতির সাথে।