যেভাবে আবিস্কার হয়েছিল ভিটামিন সি- দ্বিতীয় খণ্ড
বুডাস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হলেও ১ম বিশ্বযুদ্ধের ভয়াবহ প্রকোপে তার লেখাপড়ার ব্যাঘাত ঘটে। তবে থেমে যাননি। যুদ্ধবিরোধী গিয়র্গী যুদ্ধ এড়ানোর জন্য নিজেই নিজেকে আঘাত করেন এবং ১৯১৭ সালে লেখাপড়া শেষ করার জন্য নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরে আসেন। বিজ্ঞানের প্রতি তার এতই আগ্রহ ছিল যে, তিনি যুদ্ধ এড়াতে রিভলবার দিয়ে নিজ বাহুতে গুলি করেন। তিনি মূলত বৈজ্ঞানিক পেশা শুরু করেন কোষের বিভিন্ন খাদ্য উপাদান গ্রহণ ও দহনের মাধ্যমে সংঘটিত বিভিন্ন রাসায়নিক পরিবর্তন পরীক্ষার মাধ্যমে।
তিনি ভর্তি হয়েছিলেন বুডাস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে। তবে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ভয়াবহ প্রকোপে ব্যাঘাত ঘটেছিল তার লেখাপড়ায়। কিন্তু তার বিজ্ঞানের প্রতি আগ্রহ তাকে থেমে যেতে দেয়নি। তাই তিনি যুদ্ধ এড়ানোর জন্য নিজেই নিজেকে আঘাত করেছিলেন। এরপর ১৯১৭ সালে নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরে গিয়েছিলেন তার লেখাপড়া শেষ করার জন্য। তিনি বিজ্ঞানের প্রতি এতটায় আগ্রহী ছিলেন যে তিনি যুদ্ধ এড়ানোর জন্য নিজ বাহুতে রিভলবার দিয়ে নিজেই গুলি করেছিলেন। কোষের বিভিন্ন খাদ্য উপাদান গ্রহণ ও দহনের মাধ্যমে সংঘটিত বিভিন্ন রাসায়নিক পরিবর্তন পরীক্ষার মাধ্যমে তার বৈজ্ঞানিক পেশার সূচনা হয়েছিল।
ওই সময় অ্যাড্রেনাল গ্রন্থি থেকে তিনি আবিষ্কার করেছিলনে একটি অণু যেটি হাইড্রোজেনের বাহক ও ৬টি কার্বনের ধারক এবং চিনি ও এসিডের মতো বৈশিষ্ট্য দেখায়। তিনি ‘হেক্সইউরনিক এসিড’ নামে নামকরণ করেছিলেন এর। অন্যদিকে তিনি ১৯২০ সালে উদ্ভিদের শ্বসন ও শক্তি উৎপাদন নিয়ে কাজ করতে গিয়ে আবিষ্কার করেছিলেন সাইট্রাস রস ব্যবহারের মাধ্যমে উদ্ভিদের বাদামীকরণ বিলম্বিত করা সম্ভব। তিনি মনে করেছিলেন যে সাইট্রাস রসে হেক্সইউরনিক এসিড অবস্থান করে। এর থেকে সুগম হয় পরবর্তীতে সাইট্রাস রসে থাকা এই এসিড পৃথকীকরণের পথ।
১৯৩০ সালে জেগ্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে মেডিসিনাল কেমিস্ট্রির অধ্যাপক হিসেবে গিয়র্গি কাজ শুরু করেছিলেন। ওই অবস্থায় তিনি জে. এল.স্মারবেলির সাথে উক্ত এসিডের পরীক্ষা-নিরীক্ষার কাজ করেন। এই পরীক্ষা করা হয়েছিল দুই শ্রেণির গিনিপিগ দিয়ে-
একটি হল শুধুমাত্র সেদ্ধ করা খাবার গ্রহণ করে এমন প্রাণী এবং অপরটি হল হেক্সইউরনিক এসিডযুক্ত খাবার গ্রহণ করে এমন প্রাণী।
১ম গ্রুপ মারা গিয়েছিল স্কার্ভি উপসর্গের জন্য। পরবর্তীতে তারা ‘অ্যাসকরবিক এসিড’ নামে নামকরণ করেছিলেন এই এসিডের । এবার শুরু হল অ্যাসকরবিক এসিডের উৎস অনুসন্ধানের পালা।
জেন্ট ১৯৩৩ সালে শুরু করে ছিলেন অ্যাসকরবিক এসিডের প্রাকৃতিক উৎসের অনুসন্ধানের কাজ। অ্যাসকরবিক এসিড কমলা ও লেবুর রসে উচ্চমাত্রায় থাকলেও খুবই জটিল ছিল এর বিশোধন প্রক্রিয়া। তাহলে বিশোধন করা কীভাবে হলো? পরবর্তীতে এই সমস্যার সমাধান হয়েছিল একটি মজার ঘটনার মাধ্যমে। একদিন রাতে তাকে খাবারে তার স্ত্রী পাপড়িকা পরিবেশন করেছিলেন। সেই সময় তার হঠাৎ মাথায় আসে যে পাপড়িকার উপর কখনো পরীক্ষা চালানো হয়নি। এরপর তিনি পরীক্ষা করার জন্য এটিকে ল্যাবরেটরিতে নিয়ে যান। তার এই পরীক্ষার ফলস্বরূপ তিনি এতে ভিটামিন ‘সি’ এর নিদর্শন পেয়েছিলেন।
কয়েক সপ্তাহ পর ৩ পাউন্ড বিশুদ্ধ অ্যাসকরবিক এসিড তিনি প্রস্তত করতে সক্ষম হয়েছিলেন। এরপর ভিটামিন সি ঘাটতি যুক্ত গিনিপিগদের খাওয়ানোর মাধ্যমে তিনি বুঝতে পেরেছিলেন যে এটি ভিটামিন সি এর সমতুল্য। তার কাজের জন্য ১৯৩৭ সালে চিকিৎসাবিদ্যায় এবং ওয়াল্টার নরম্যান হাওরথ রসায়নে নোবেল পুরষ্কার দ্বারা সম্মানিত করা হয়েছিল তাকে।
তার আবিষ্কার করার তালিকায় কি শুধুমাত্র ভিটামিন ‘সি’ শনাক্তকরণের ছিল? না তিনি বিজ্ঞানের প্রতি অত্যন্ত আগ্রহী ছিলেন যার ফলে ভিটামিন ‘সি’ আবিষ্কারে পর থেমে যায়নি। পরবর্তীকালে তিনি অ্যাকটিন, মায়োসিস, প্রোটিন, জৈব যৌগ নিয়ে কাজ করেন। ক্রেবস চক্র গবেষণার ভিত্তি গড়ে তুলেছিলেন তার কাজ। এছাড়াও কোষ বিভাজন ও ক্যান্সারের কারণসমূহ নিয়ে অনুসন্ধান করার কাজও তিনি করেছিলেন। তার জৈবিক দহন বিষয়ক কাজের স্বীকৃতি দিয়েছিল দ্যা আমেরিকান কেমিক্যাল সোসাইটি ও দ্যা হাঙ্গেরিয়ান কেমিক্যাল সোসাইটি। অবশেষে ২২ অক্টোবর ১৯৮৬ সালে মৃত্যুবরণ করেছিলেন এই মহান বৈজ্ঞানিক অ্যালবার্ট জেন্ট গিয়র্গি।
তিনি কি ভিটামিন ‘সি’ আবিষ্কারের জন্য শুধুমাত্র নোবেল পুরষ্কার অর্জন করেছিলেন? না তিনি এর জন্য নোবেল পুরষ্কার পাওয়ার পাশাপাশি ভিটামিন সি শনাক্তকরণের জন্য ১২ মে, ২০০২ সালে (মৃত্যুর পর) একটি অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তাকে ইন্টারন্যাশনাল হিস্টোরিক কেমিক্যাল ল্যান্ডমার্ক’ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছিল। জেন্ট গিয়র্গি মানবজাতির উদ্দেশ্যে বলেছিলেন-
“জীবন একটি বিস্ময়কর ব্যাপার। আমি আশা করি একদিন মানুষ জীবনের প্রকৃতি ও নীতি সম্পর্কে আরও সূক্ষ্ম অন্তঃর্দৃষ্টি অর্জন করবে এবং সেগুলোকে আরো যথাযথ শব্দে প্রকাশ করবে। প্রকৃতির রহস্যকে বিজ্ঞানের ভাষায় প্রকাশ করা মানুষের মহান প্রচেষ্টাগুলোর মধ্যে অন্যতম।”