যেভাবে আবিস্কার হয়েছিল ভিটামিন সি- প্রথম খণ্ড
ভিটামিন সি হল এমন একটি উপাদান যা আমাদের শরীরে নানাধরনের কাজ যেমন স্কার্ভি প্রতিরোধ, এন্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করা, টিস্যু ক্ষয় রোধ, স্নায়ুকোষের উৎপত্তি, এনজাইমের ক্রিয়ায় সহায় ইত্যাদি করতে কার্যকারী ভূমিকা পালন করে। তাই ভিটামিন সি হল আমাদের শরীরের জন্য অতি প্রয়োজনীয় উপাদানগুলির মধ্যে অন্যতম একটি।
কিন্তু এই ভিটামিন আবিষ্কার কবে হয়েছিল এবং কে আবিষ্কার করেছিলেন? আর এর উৎসই বা কি? এই দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে এই ভিটামিন আবিষ্কারের পেছনে? কি সেই আবিষ্কার ইতিহাস?
ভিটামিন সি ১৯১২ সালে আবিষ্কৃত হয় যার আবিষ্কারের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে রয়েছে অ্যালবার্ট জেন্ট গিয়র্গি নামক এক ব্যক্তির নাম। এটি প্রথম ভিটামিন যেটি রাসায়নিকভাবে প্রস্তুত করা হয়।
কয়েক শতাব্দী পূর্বের কথা সেই সময় জাহাজে কর্মরত নাবিকদের মধ্যে দেখা দিয়েছিল মুখে ঘা, ত্বকের রক্তক্ষরণ, ক্ষতস্থানের ধীরগতিতে নিরাময়সহ মতো নানা উপসর্গ। যার কারণে মৃত্যু ঘটেছিল অনেকেরই। মধ্যযুগীয় ইউরোপীয় ধর্মযুদ্ধের ইতিহাসে নাবিকদের এ রোগে ভোগার ও মৃত্যুর হার ছিল ব্যাপক। এই রোগে প্রায় ২ মিলিয়ন নাবিক কুলম্বের আটলান্টিক সমুদ্রযাত্রা ও স্টিম ইঞ্জিন উৎপত্তির মাঝামাঝি সময়ে আক্রান্ত হয়েছিল। এমনকি এই রোগের হাত থেকে কেউই রেহাই পেয়ে ছিল না, এমনকি বিশ্ববিখ্যাত পর্যটক ভাস্কো- ডা-গামা, ম্যাগালান,জর্জ অ্যানসন প্রমুখরাও।
এ রোগের কারণ কি ছিল? মূলত নাবিকদের খাদ্য তালিকায় ভিটামিন সি এর সরবরাহ কম ছিল যার কারণে তারা স্কার্ভিতে আক্রান্ত হত। ব্রিটিশ মেডিকেল কমিউনিটি ১৭৫৩ সালে এ রোগকে স্বীকৃতি দিয়েছিল, বিশদভাবে খাদ্যতালিকাগত ঘাটতির সাথে সম্পর্ক যুক্ত রোগ হিসেবে।
ব্রিটিশ চিকিৎসক উইলিয়াম স্টার্ক ১৭৬৯ সালে শুরু করেছিলেন খাদ্য ও পুষ্টি নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা। তিনি ৩১ দিন ব্যাপী রুটি ও জল খাওয়ার পর অন্যান্য খাদ্য তার তালিকায় একে একে যুক্ত করেছিলেন। তার খাদ্যতালিকা মাংস ও স্টার্চপূর্ণ আর সবজি ও সাইট্রাসযুক্ত ফল বর্জিত ছিল। ৭ মাস পর সম্ভবত তিনি স্কার্ভি রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরন করেছিলেন।
ব্রিটিশ চিকিৎসক উইলিয়াম স্টার্কের পরীক্ষা করার ১২ বছর আগে জেমস লিন্ড নামক স্কটল্যান্ডের এই চিকিৎসক পর্যবেক্ষণ করেছিলেন সাইট্রাযুক্ত ফলের প্রতিরোধমূলক শক্তি। ওই সময় জেমস লিন্ড নিয়োজিত ছিলেন জাহাজে সার্জন হিসেবে। তিনি লক্ষ্য করেছিলেন যে, যেসকল আক্রান্ত ব্যক্তি সাইট্রাযুক্ত ফল গ্রহণ করেছিল তারা দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠছিল। পরবর্তী সময়ে তিনি একটি গ্রন্থ লেখেন যেখানে লেবু রস ব্রিটিশ নাবিকদের গ্রহণ করার বিষয়ে বাধ্যবাধকতা নিয়ে সুপারিশ করেছিলেন।
১৯৭৫ সালের দিকে, এ প্রচারের ফলে শুরু হয়েছিল ব্রিটিশ নাবিকদের লেবুর শরবত ইস্যুকরণ এবং হ্রাস পেয়েছিল এ রোগের প্রাদুর্ভাব। তবে সেই সময় পর্যন্ত ‘ভিটামিন ‘সি’ এর অস্তিত্ব সম্পর্কে কেউই জানত না। অন্যদিকে ভিটামিন ‘সি’ এর অস্তিত্ব অ্যাক্সেল হোলস্ট ও আল্ফ্রেড ফ্রহ্লিচ নামক এই দুই বিজ্ঞানী পূর্বেই অনুমান করলেও তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারেননি প্রতিনিধির অভাবের কারনে।
এবার প্রশ্ন হল যে সাইট্রাযুক্ত ফলের সেই গুপ্ত রহস্য ভিটামিন সি আবিষ্কৃত হলো কীভাবে? এর আবিষ্কারক হলেন হাঙ্গেরিয়ান গবেষক অ্যালবার্ট জেন্ট গিয়র্গি। তিনি জন্মগ্রহন করেছিলেন এক বিজ্ঞানী পরিবারেই। তিনি ছোট বয়স থেকেই বিজ্ঞানে প্রতি আগ্রহী ছিলেন।
