অফবিট

নীল ষষ্ঠী কেন পালন করা হয়?

আর এই ব্রত পালনের নিয়মই বা কি?

চৈত্র মাস শেষের দিনের আগের দিন নীল ষষ্ঠী পুজো পালন করা হয়। এই দিন প্রায় প্রত্যেক মায়েরায় উপোস করে শিবের মাথায় জল ঢালেন তাদের সন্তানের মঙ্গল কামনায়। 

কিন্তু এই নীল ষষ্ঠীর আসল কারণ কি তা কি জানেন? 

আসুন জেনে নেওয়া যাক-

এই নীল ষষ্ঠী পূজো নিয়ে অনেক লোক কথা শোনা যায়। যেমন- শিবের অপর নাম নীলকণ্ঠ বা নীল। অনেকে মনে করেন, শিবের সঙ্গে নীলচণ্ডিকা বা নীলাবতী পরমেশ্বরীর বিয়ে উপলক্ষ্যে লৌকিক আচার-অনুষ্ঠান সংঘটিত হয় এদিন।

শোনা যায় দক্ষযজ্ঞে দেহত্যাগের পর সতী পুনরায় নীলধ্বজ রাজার  গৃহে আবির্ভূত হন। এরপর রাজা তাকে নিজের মেয়ের মতো করে বড়ো করে তোলেন এবং ফের শিবের সঙ্গে বিয়ে দেন। কিন্তু, বাসর ঘরে

মক্ষিপারূপ ধরে মৃত্যুবরণ করেন তিনি। তা দেখে শোকে রাজা রানী ও প্রাণ বিসর্জন দেন। তাই অনেকেই মনে করেন শিব ও নীলাবতীর বিবাহের স্মারক হলো

‘নীল পুজো’। 

এছাড়াও নীল ষষ্ঠীর সাথে জড়িয়ে আছে আরো একটি লোককথা। 

পুরাকালে এক বামুন আর বামুনী ছিলেন। যারা অতি ভক্তি ভরে নানা ব্রত পালন করলেও তাদের সন্তান বেশিদিন বাঁচত না। 

একদিন তারা মনের দুঃখে গঙ্গার ঘাটের উপর বসে কাঁদছিলেন। এই দেখে মা ষষ্ঠী, বুড়ি বামনীর বেশ ধরে এসে তাদের জিজ্ঞাসা করেন, “তোরা কাঁদছিস কেন?”  

বামুনী তার দুঃখের কথা জানালে, মা ষষ্ঠী প্রশ্ন করেন, “তোরা কি নীল ষষ্ঠী করেছিস?” বামনী উত্তর দেয়, “সে কী মা? কই ও ব্রতের কথা তো আমরা জানি না।”  

তখন মা তাদের বলেন, “সমস্ত চৈত্র মাস সন্ন্যাস করে শিব পুজো করবে, তারপর সংক্রান্তির আগের দিন, সমস্ত দিন উপোষ করে সন্ধে নাগাদ নীলাবতীর পুজো করে  নীলকন্ঠ শিবের ঘরে বাতি জ্বেলে দিয়ে, মা ষষ্ঠীকে প্রণাম করে তবে জল খাবে। ওই দিনকে ষষ্ঠীর দিন বলে। যারা নীলষষ্ঠী করে তাঁদের ছেলে মেয়ে কখনও অল্প বয়সে মরে না।” একথা বলেই বামনী বেশে মা ষষ্ঠী অদৃশ্য হয়ে যায়।

এরপর বামুন ও বামনী  ভক্তি ভরে নীলষষ্ঠীর পুজো করেন। এরপর থেকে তাদের ছেলেমেয়ের কোনও অঘটন ঘটেনি। তারা সুস্থ ভাবে বেঁচে থাকে। এভাবেই শুরু হয় নীলষষ্ঠীর পুজো। 

ব্রতের নিয়ম:

নীলষষ্ঠীর দিন সারা দিন উপোস করে সন্ধ্যাবেলা শিবের মাথায় জল ঢালতে হয়। এরপর শিবের মাথায় বেলপাতা, ফুল ও ফল ছুঁয়ে রাখতে হয়। অপরাজিতা বা আকন্দ ফুলের মালা পড়িয়ে, সন্তানের নামে একটি মোমবাতি জ্বালিয়ে প্রার্থনা করতে হয়।

মনে রাখা জরুরি উপোস ভাঙ্গার পরও এদিন ফল, সাবু ইত্যাদি ছাড়া ময়দার তৈরি খাবারই খেতে হয়।

সন্দক লবণ দিয়ে খাবার খেতে হয়। মনে করা হয় ব্রতের দিন নিষ্ঠা ভাবে উপোস করে কিছু নিয়ম মানলে ভক্তের মনবাঞ্ছা পূরণ করেন দেবাদিদেব মহাদেব।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *