অফবিট

কম্পিউটার তৈরির ১০০ বছর আগেই কম্পিউটার প্রোগ্রামিং লিখেছিলেন যে রহস্যময়ী নারী

নিউজ ডেস্ক – কম্পিউটার ও আধুনিক বলতে গেলে ল্যাপটপ রয়েছে সকলের ঘরে ঘরে। বর্তমানে কম্পিউটার ছাড়া কোন কাজ হওয়া অসম্ভব ব্যাপার। অফিস হোক বা বারি সর্বত্রই বিচরণ করে চলেছে কম্পিউটার বা হিউম্যান ব্রেন। কমবেশি সকলেই জানেন কম্পিউটারের প্রথম জনক চার্লস ব্যাবেজ। তবে এক নারির আখ্যায়িত গণনার ভিত্তিতেই কম্পিউটারকে আবিষ্কার করেছিল চার্লস ব্যাবেজ। এক কথায় বলতে গেলে কম্পিউটার আবিষ্কারের জনক নিজেই ফ্যান ছিল ওই মহিলার। যার নাম আডা লাভলেস। 

এই ঐশ্বর্যকরী নারীর কল্পনাশক্তি বিশ্লেষণ করতে গেলে তার শৈশবের গল্প শোনা উচিত সকলেরই। ঐতিহাসিক কবি লর্ড বায়রনের ও অ্যানাবেলার কন্যা ছিলেন আডা লাভলেস।‌ ১৮১৫ সালে ১০ই ডিসেম্বর জন্ম হয়েছিল এই গণিতবিদ নারীর। তবে বরাবরই তার পিতা চেয়ে এসেছিলেন একটি পুত্র সন্তান। কিন্তু সেই আশা পূরণ না হওয়ায় কন্যাকে কোনদিনই পছন্দ করতেন না তিনি। যার কারণে মনের দুঃখে নিজের মেয়েকে নিয়ে বাপের বাড়ি চলে গিয়েছিলেন অ্যানাবেলা। তবে একসময় যে সেই মেয়ে পৃথিবী বিখ্যাত হবে সে সম্পর্কে কোন ধারনাই ছিল না লর্ড বায়রনের। মেয়ের শৈশবকালে অর্থাৎ যখন ৯ বছর বয়স ১৮২৪ সালে তখনই মারা যান এই বিখ্যাত কবি। পিতার ছায়া ছাড়াই শৈশব থেকে বড় হয়ে ওঠে আডা লাভলেস। ছোট তোকে কোনোদিনই নিজের পিতার সঙ্গে পরিচিত ছিল না আডা। তবে নিজের কুড়ি তম জন্মবার্ষিকীতে তার মা সবুজ কাপড় দিয়ে মোড়া পিতার ফটো সঙ্গে পরিচয় করিয়েছিলেন তার।কাল্পনিক জগতে বাস করা নিজের স্বামীর মত মেয়েকে তৈরি করতে চায়নি অ্যানাবেলা। যার কারণে আডাকে ইতিহাস বা সাহিত্য নিয়ে চর্চা না করতে দিয়ে তাকে শৈশব কাল থেকেই গণিত ও সংস্কৃতির উপর জোর দিয়েছিলেন তার মা। আর সেই গণিতকেই নিজের পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন আডা। 

১৮৩৩ সালে তরুণী আডার সাথে পরিচয় হয় ক্যাম্ব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যাথমেটিক্স প্রফেসর চার্লস ব্যাবেজের। ম্যাথামেটিক্স এর সূত্রেই ৪২ বছরের চার্লস ব্যাবেজ এর মত ধারার মিল খুঁজে পাওয়া যায় ১৭ বছরের আডার।  তাদের বহু মতধারারই মিল  থাকতো গণিত মাধ্যমে। ব্যাবেজের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য উদ্ভাবন ছিল অ্যানালিটিক্যাল ইঞ্জিন। এই লোহালক্কড়ের তৈরি বাষ্পচালিত যন্ত্রটির পরিকল্পনা তিনি প্রথম করেন ১৮৩৭ সালে। তাঁর পরিকল্পনায় যন্ত্রটির ছিল একটা সেন্ট্রাল প্রোসেসিং ইউনিট, যার নাম তিনি দিয়েছিলেন “মিল”, আর ছিল এক্সপান্ডেবল মেমোরি, যার নাম দিয়েছিলেন “স্টোর।” পাঞ্চ কার্ড দিয়ে ডাটা ইনপুট দিলে তাঁর যন্ত্রটি বিভিন্ন গাণিতিক অপারেশন করে দিতে পারবে ডাটাগুলোকে নিয়ে- এটাই ছিল তাঁর মূল অভিপ্রায়। তবে সেই সময় আডার সঙ্গে পরিচয় হয় উইলিয়াম কিং-নোয়েলের। ধীরে ধীরে পরিচয়ের সম্পর্ক গাঢ় হলে  ১৮৩৫ সালে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয় আডা। এছাড়াও পরবর্তীতে ১৮৩৮ সালে একজন সম্পূর্ণ নারী অর্থাৎ মা হয়ে যান তিনি। স্ত্রী ও মায়ের ভূমিকা পালন করার পাশাপাশি নিজের গণিতকে কখনোই ত্যাগ করেননি আডা। বরং চার্লস ব্যাবেজ এর সঙ্গে গাণিতিক বিষয়ে বহু পর্যবেক্ষণ করতেন। 

চার্লস ব্যাবেজের অভিনব আবিষ্কারটি সম্পর্কে এক ইতালীয় গণিতবিদকে লিখিত রূপ দিয়েছিলেন ব্যাবেজ। কিন্তু সেই লিখিত রূপটি ১৮৪৩ সালে ব্যাবেজ  ইতালি ভাষায় রূপান্তরিত করার কাজ সোপে ছিলেন আডাকে। পরবর্তীতে এই গুরুদায়িত্ব নেওয়ায় টানা ৯ মাস কাজটি করার পাশাপাশি এই তথ্যে যে সকল ভুলভ্রান্তি ছিল সেটি ঠিক করে এবং ব্যাবেজের মতধারাকে বজায় রেখে নিজস্ব কিছু মতামত দিয়ে আসল কপিটির  তিন গুণ বড় করেছিলেন আডা। যখন নিজের কাজ শেষ করেই ব্যাবেজকে কপিটি সাবমিট করে তখন আসল কবে তুলনায় রূপান্তরিত কবে দেখে আশ্চর্য হয় চার্লস। 

আডার রূপান্তরিত করা এই তথ্য দেখে চার্লস ব্যাবেজ বলেন,” একসময় তাঁদের এই যন্ত্রটা শুধু নাম্বার নিয়ে না সবকিছু নিয়েই অপারেশন করতে পারবে, শুধু তাদেরকে দিতে হবে কিছু “ফিক্সড সেট অফ রুলস।” এই যন্ত্র ব্যবহারিক বা বৈজ্ঞানিক সব ক্ষেত্রেই ব্যবহার্য হবে, বললেন অদ্ভুত রকম জটিল এবং সুন্দর সুরের সৃষ্টি করা যাবে এই যন্ত্র দিয়েই”।  পরবর্তীতে সেই মতো ধারা অনুযায়ী দুই দশক পর সৃষ্টি হয়েছে কম্পিউটারের। এই ঐশ্বরিক শক্তি অধিকারী নারী নিজেকে বিশ্লেষক ও দার্শনিক হিসেবে পরিচয় দিতেন। কিন্তু চার্লস ব্যাবেজ তার এক অভিনব নাম দিয়েছিলেন। যেটি ছিল এঞ্চান্ট্রেস অফ নাম্বার্স”, বাংলায় বললে “সংখ্যার জাদুকরী। তবে নিজের এমন অভিনব আবিষ্কার দেখে যেতে পারেননি আডা। কারণ মাত্র ৩৬ বছর বয়সে ১৮৫২সালে মারণ রোগ ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছিল বিজ্ঞান জগতের  দৈবিক কন্যা আডা লাভলেসের।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *