ঝড়-বৃষ্টি, প্রাকৃতিক বিপর্যয় কিছু করার ক্ষমতা নেই পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের। কিন্তু কেন? কি এমন রহস রয়েছে?
নিউজ ডেস্কঃ ভারতবর্ষে এমন অনেক মন্দির আছে যার মধ্যে রয়েছে অনেক রহস্য। আর এই রকমই একটি মন্দির হল পুরীর জগন্নাথ মন্দির যেখানে শ্রীশ্রী জগন্নাথদেব বিরাজ করেন।এই পুরি হল এমন একটি তীর্থস্থান যা হিন্দুদের প্রধান তীর্থ স্থান গুলির মধ্যে অন্যতম যার মধ্যে শ্রীশ্রী জগন্নাথ দেবের মন্দির অন্যতম।পুরীতে বেড়াতে এসেছেন আর জগন্নাথ দেবের দর্শন করেননি এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া মুশকিল। শুধুমাত্র ভারত নয় পৃথিবীর নানা দেশের নানা প্রান্ত থেকে প্রতিদিন অসংখ্য ভক্তের সমাগম ঘটে এই মন্দিরে।তবে এই মন্দিরের মধ্যে লুকিয়ে রয়েছে এমন অনেক অলৌকিক ঘটনা যা অনেকের কাছেই অজানা এবং যার ব্যাখ্যা অনেক চিন্তা ভাবনা করে সঠিক যুক্তি দিয়ে করা যায় না। পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের বেশ এমন কয়েকটি রহস্য আছে যা আপনাকে চমকে দিতে পারে।তাই জগন্নাথদেবের এই মন্দিরে কি রহস্য লুকিয়ে আছে জেনে নিন।
মানুষের চিন্তাশক্তির বাইরে এমন এক ব্যবস্থা করা হয়েছিল পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের চূড়ায় নির্মাণের সময়। কারন এই এত বড় শিল্প প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের ফলে নষ্ট হওয়াটা কোন অস্বাভাবিক কিছুই নয় তবে আশ্চর্যজনক বিষয় হল এই পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের ওপরের অংশ যেখানে রয়েছে এমন এক বিশেষ শক্তি যা ঝড়-বৃষ্টি এবং প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের সময় মন্দিরকে স্থির রাখতে সহায়তা করে।
বেশিরভাগ মন্দিরের মাথায় পতাকা থাকে ঠিক তেমনই পুরীর মন্দিরের চূড়াতেও একটি পতাকা রয়েছে তবে যেই পতাকাটি পুরীর মন্দিরের চূড়ায় রয়েছে তার একটি ব্যতিক্রমী দিক লক্ষ্য করা যায় এটি হল যে প্রতিদিন সকালে পুরীর মন্দিরের পতাকা লাগানো হয় ও সন্ধ্যেবেলা তা খুলে ফেলা হয়।তবে সবচেয়ে অবাক করার বিষয় হলো যে এই পতাকা প্রতিদিন বদল করা হয়।আর এই পতাকা বদল করতে কোন যন্ত্র বা মেশিনের সাহায্য নেওয়া হয় না।কোনরকম অবলম্বন ছাড়াই এই সুবিশাল মন্দিরের চূড়ায় খালি হাতে মন্দিরের দেওয়াল বেয়ে উঠে পতাকা পরিবর্তন করা হয়। এই নিয়মের কোন পরিবর্তন হয় না তাতে ঝড় হোক বা বৃষ্টি বা রোদ বা যেকোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগই হোক না কেন।কারন বলা হয় নাকি যে একদিন এই নিয়মের ব্যতিক্রম হলে পরবর্তী ১৮ বছর মন্দিরের পুজো বন্ধ থাকবে।
আমরা সবাই জানি যে মন্দিরে পূজা করতে যাওয়া আগে উপোস করে থাকতে হয়। তাই দেখা যায় যে পৃথিবীর মধ্যে যতগুলো মন্দির আছে বিশেষ করে হিন্দু মন্দির রয়েছে তার বেশিরভাগ মন্দিরে ভক্তরা পুজো দেওয়ার আগে উপোস করে অর্থাৎ কিছু না খেয়ে পূজা-অর্চনা করে থাকে। তবে এর ব্যতিক্রম দেখা যায় পুরীর জগন্নাথ মন্দিরে।এই মন্দিরটি এমন এক মন্দির যেখানকার পূজা-অর্চনা করার জন্য ভক্তদের উপোস করে যেতে হয় না অর্থাৎ এই মন্দিরে ভক্তরা খাওয়া দাওয়া করার পর পূজা-অর্চনা করে থাকেন।
আমরা সবাই জানি যে হাওয়া দিনের বেলায় হওয়া সমুদ্রের দিক থেকে স্থলভাগের দিকে আসে আর সন্ধ্যের সময় স্থলভাগের দিক থেকে সমুদ্রের দিকে যায় আর এই একটি নিয়ম মেনেই হাওয়া তার গতিপথে চলে। যা স্বাভাবিক নিয়ম। তবে এই নিয়মের ব্যতিক্রম ঘটতে দেখা যায় পুরীর মন্দিরের ক্ষেত্রে অর্থাৎ সকালের দিকে মন্দিরের দিক থেকে সমুদ্রের দিকে হওয়া চলে এবং সন্ধ্যায় সমুদ্রের দিক থেকে হাওয়া বয়ে আসে মন্দিরের কাছে।আর এই ব্যতিক্রমের কারন সত্যিই সবার কাছে অজানা।
এই মন্দিরের আরো একটি রহস্য হল এই মন্দিরের ভিতরে শোনা যায় না বাইরের কোন আওয়াজ। এর কারন হিসাবে বলা হয় যে জগন্নাথ দেবের বোন সুভদ্রা বলেছিলেন যে এই মন্দিরে শান্তি যেন সবসময় বিরাজ করে। তাই এই পৌরাণিক কাহিনী অনুসারে এই মন্দিরের সিংহদ্বার পার হয়ে মন্দিরের প্রবেশ করার পর বাইরের কোনো রকম আওয়াজ ভেতর থেকে শোনা যায় না এবং কাছাকাছি থাকা সমুদ্রের শব্দও শোনা যায় না।
এছাড়াও আরো এক রহস্য রয়েছে এই পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের রান্নাঘর।এই রান্নাঘর রান্না করা হয় একটি পাত্রের উপর আরেকটি পাত্র পরপর সাজিয়ে।আর এমনভাবে মোট সাতটি পাত্র একসাথে আগুনে বসানো হয়।তবে এখানে অলৌকিক ব্যাপার হল যে পাত্রটি সবচেয়ে উপরে বসানো থাকে তার রান্না সবার আগে হয় এবং যে পাত্রটি সবথেকে নিচে থাকে তার রান্না শেষ হয়।আর এই মন্দিরের প্রসাদ বেশ রহস্যজনক। সারাদেশ ছাড়াও বাইরের দেশ থেকে অসংখ্য ভ্রমণপিপাসু এবং ভক্তরা এই পুরীর জগন্নাথ মন্দিরে আসেন সারা বছর ধরে।এই মন্দিরের বিশেষত্ব হলো যে এই মন্দিরের রন্ধনশালায় সারা বছর ধরেই সমপরিমাণ প্রসাদ রান্না করা হয়।কিন্তু আপনার শুনলে হয়ত আশ্চর্য হবেন যে ওই একই পরিমাণ প্রসাদ দিয়ে কয়েক হাজার মানুষ থেকে কয়েক লক্ষ মানুষ যত মানুষই হোক না কেনো তাও কখনো প্রসাদ নষ্ট কিংবা কখন কম পরে না।
ভালো করে খেয়াল করলে দেখা যাবে যে সমুদ্রের তটে অবস্থিত পুরীর মন্দির কিন্তু যেখানে পুরীতে মন্দির রয়েছে সেখানে কোথাও নদীর চিহ্নমাত্র নেই তবে আপনার শুনলে হয়ত আশ্চর্য হবেন যে গঙ্গা নদীর গোপন প্রবাহ রয়েছে এই পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের রান্নাঘরে।
এই মন্দিরের চূড়ায় পতাকা লাগানোটি যেমন রহস্যজনক ঠিক তেমনি এই চূড়ার পতাকাটিও রহস্যজনক। সাধারণত যে দিকে হাওয়া প্রবাহিত হয় সেইদিকেই পতাকার কাপড় উড়ে তবে এর ব্যতিক্রম লক্ষ্য করা যায় পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের ক্ষেত্রে। তার কারন হল এই মন্দিরের চুড়ায় থাকা পতাকাটি সবসময় হাওয়ার বিপরীত দিকে ওড়ে। এবং তার সাথে দেখা গেছে যে কোন বিমান তো দূরের কথা কোনো পাখিও এই মন্দিরের উপর দিয়ে যেতে পারে না।আর এই অলৌকিক রহস্য আজ পর্যন্ত কেউ কোন সমাধান করতে পারেনি।
একটি গোপন অংশ রয়েছে এই পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের মধ্যে। মন্দিরের ভিতরের থাকা এই গোপন অংশে দেবতাদের জমে যাওয়া সমস্ত অলংকার ও মূল্যবান দ্রব্য বছরের পর বছর ধরে রাখা হয়। তবে এই মূল্যবান দ্রব্যসামগ্রীকে পাহারা দেওয়ায় জন্য এর পাহারাদার একটু অদ্ভুত। কারন এই বিশেষ কক্ষের রক্ষণাবেক্ষণে পাহারার কাজে যারা নিয়োজিত আছে তারা হল কয়েকটি অদ্ভুত আকারের বিষধর সাপ এবং পবিত্র আত্মা।তাই চাইলেও এখান থেকে কেউ একচুলও কিছু চুরি করতে পারবে না।
পুরীর মন্দিরের সবচেয়ে রহস্যজনক বিষয়গুলি মধ্যে একটি বিষয় হল যে পুরীর মূল মন্দিরটির ছায়া কোন দিন দেখা যায় না।তাতে সূর্যের অবস্থান যেমনই হোক না কেন।পুরীর মূল মন্দিরের ছায়া আজ পর্যন্ত কোনদিন দেখা যায়নি এবং কেন ছায়া দেখা যায়নি তার সমাধান আজ পর্যন্ত কেউ করতে পারে নি।
আরেকটি বিশেষত্ব হল পুরীর মন্দিরের যে এই মন্দিরের চূড়া থাকা একটি চক্র যা সুদর্শন চক্র নামেও পরিচিত।এই মূল মন্দিরের চূড়ায় যে সুদর্শন চক্র দেখা যায় তা যে দিক থেকে দেখা হোক না কেন মনে হবে যেন চক্রটি ঠিক যেন আপনার সম্মুখে রয়েছে অর্থাৎ সবসময় তার মুখ যেন আপনার দিকে রয়েছে। এই রহস্যময় চক্রটি সকল দর্শনার্থীদের কাছে আজও আকর্ষণীয় এবং অবাক করা একটি বিষয়।