নিঃশ্বাসেই অজ্ঞান হয়েছিল হাসপাতালের ২৩ জন। বিরল রোগের সন্ধান এখনও পর্যন্ত করে উঠতে পারেনি বিজ্ঞানীরা
নিউজ ডেস্ক – গোটা বিশ্বের নানা ধরনের বিরল রোগ দেখতে পাওয়া যায়। মাঝে মাঝে যার কোন ওষুধ থাকে না চিকিৎসাবিজ্ঞানে। কিন্তু এমন এক ধরনের বিরল রোগে সাক্ষী হয়েছে আমেরিকা যা রীতিমতো কাঁপিয়ে দিয়েছে গোটা বিশ্বকে। যদিও সেই বিরল রোগের সন্ধান এখনও পর্যন্ত করে উঠতে পারেনি বিজ্ঞানীরা।
জানা যায় ১৯৯৪ সালের ১৯শে ফেব্রুয়ারী সন্ধায় শারীরিক অসুস্থতার কারণে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন গ্লোরিয়া রামিরেজ। এরপরই তার একাধিক পরীক্ষা নিরীক্ষা করে জানা যায় তিনি ক্যান্সারের লাস্টেজে রয়েছেন। কিন্তু এখানেই শুরু হয় বিপত্তি। তার চিকিৎসা করতে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন চিকিৎসকেরা।
চিকিৎসকদের ভাষ্যমতে, যখন মিসেস গ্লোরিয়া রামিরেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন তখন তাঁর শারীরিক অবস্থার ব্যাপক অবনতি ঘটে ছিল। এমনকি তার শ্বাসকষ্টের সমস্যাও হচ্ছিল। মূলত তার কেমোথেরাপি এবং নিয়মিত চিকিৎসার মধ্যে দিয়ে চলছিলেন তিনি। মূলত হঠাতই একদিন সন্ধ্যায় অসুস্থ হয়ে পড়ার কারণে তার পরিবারের সদস্যরা তাকে রিভারসাইড জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করেন। এরপরেই শুরু হয় তার চিকিৎসা। তবে চিকিৎসকরা বুঝতে পেরেছিলেন যে গ্লোরিয়ার নিঃশ্বাসের সঙ্গে এক ঝাঁঝালো গ্যাস নির্গত হচ্ছে। যার কারণে যখনই কোন নার্স বা চিকিৎসক তার কাছে আছে তখনই তারা অজ্ঞান হয়ে পড়ছেন। মূলত গ্লোরিয়ার রক্ত দেওয়ার জন্য যে নার্স কার কাছে গিয়েছিল তিনিও রীতিমতো অসুস্থ হয়ে পড়ে। মূলত এই করে করে হাসপাতালের প্রায় ২৩ জন চিকিৎসক ও নার্সরা অজ্ঞান হয়ে পড়ে। যার মধ্যে গুরুতর অবস্থায় রীতিমতো চিকিৎসাধীন হতে হয়েছিল ৫ জন চিকিৎসককে। ফল বসতো চিকিৎসকরা তার কাছে যেতে না পারায় হাসপাতলে ভর্তি হওয়ার মাত্র ৪৫ মিনিটের মধ্যে মৃত্যু হয়েছিল গ্লোরিয়ার।
গ্লোরিয়াস মৃত্যুর পর চিকিৎসকরা তার সব দেহ নিয়ে একাধিক রিচার্জ করেন। তবে চিকিৎসকরা হ্যাজমাট বায়ো কনটেইনমেন্ট স্যুট পড়ে নিয়েছিল। এরপরই লরেন্স লিভারমোর ন্যাশনাল লাইব্রেরীতে বেশ কয়েকজন বিজ্ঞানীরা মিলে গ্লোরিয়ার মৃতদেহ তদন্ত করে জানতে পারেন, তার বুকের চামড়ায় এক ধরনের ক্ষত হয়ে গিয়েছিল। পাশাপাশি তার রক্তের মধ্যে এক ধরনের শ্বেত শুভ্র কিছু কণা পরিলক্ষিত করা গিয়েছিল। পাশাপাশি তার শরীরের ডাইমিথাইল সালফক্সাইড যৌগটি মিলেছিল। কারণ একজন সুস্থ মানুষের শরীরে যে পরিমাণ ডাইমিথাইল সালফক্সাইড থাকার কথা ছিল গ্লোরিয়ার শরীরে সেটি তিনগুণ পরিমাণে ছিল। এটি মূলত কোন ব্যথার উপশম ঘটাতে ব্যবহার করা হয়। যেহেতু গ্লোরিয়ার শ্বাসকষ্ট হচ্ছিল সে ক্ষেত্রে তিনি এই ব্যথার ওষুধ খাচ্ছিলেন বলে অনুমান করা যাচ্ছে।
অন্যদিকে এই ওষুধের পাশাপাশি তার শরীরে ক্যান্সারের যে ট্রিটমেন্ট করা হচ্ছিল সেই ওষুধ পড়তেই বিষক্রিয়া ঘটে। এর কারণেই তার মৃত্যু হয়। তবে গ্লোরিয়ার রক্তে টাইগল নামক টেলিনল, লিডোকেন, কোডিন এবং বমি রোধের ওষুধ পাওয়া গিয়েছে। তবে প্রাথমিকভাবে এইসকল তথ্যাদি অনুমান করা গেলেও সঠিক কি কারনে নিশ্বাস থেকে এমন ঝাঁঝালো গ্যাস নির্গত হয়েছিল সেই বিষয়ে এখনো কোনো সদুত্তর খুঁজে পায়নি বিশেষজ্ঞরা। তবে গ্লোরিয়ার মতো এমন রহস্যময়ী নারীর বিষয়ে সম্প্রতি সেই সময়কার জার্নালে তাকে টক্সিক লেডি বলে আখ্যায়িত করা হয়েছিল। এই টক্সিক লেডির মৃত্যুর পর ২০শে এপ্রিল রিভারসাইডের অলিভউড মেমোরিয়াল পার্কে তাকে কবর দেওয়া হয়। রহস্যময়ী ভাবেই পৃথিবী থেকে হারিয়ে যায় গ্লোরিয়া।