মহাশিবরাত্রির আগেই জেনে নিন ভোলানাথের প্রথম ১০টি অবতারের কথা
নিউজ ডেস্কঃ ভগবান শিবকে বলা হয় এই বিশ্বসংসারের পালনকর্তা। পুরান অনুযায়ী বিভিন্ন কারনে ভগবান শিব এক এক অবতার ধারন করে অবতীর্ণ হয়েছিল। মহাদেবের ১০ টি অবতার হল –
পিপলাদ অবতার
পুরাণ অনুযায়ী, পিপলাদ রূপে মহাদেব সাধু দধিচি ও তাঁর স্ত্রী স্বর্চার সন্তান হিসেবে জন্মগ্রহণ করেছিলেন।শৈশবকালে তাঁর বাবা-মা পরলোক গমন করেছিলেন। তিনি পালিত হয়েছিলেন পিসি দধিমতির কাছে । পিপলাড় বড় হয়ে জানতে পারেন যে তাঁর বাবা-মায়ের মৃত্যু হয়েছিল শনির দশার কবলে পড়ে। ক্রোধিত হয়ে পিপলাদ শনিকে অভিশাপ দিলে স্বর্গ থেকে পতন হয় শনিদেবের। তখন দেবতারা পিপলাদের কাছে এসে শনির হয়ে অনুরোধ করলে তিনি ক্ষমা করে দেন শনিকে কিন্তু বলেন যে শনির দৃষ্টি যার ওপর পড়বে,সেই ব্যক্তি শিবের পুজো করলে কেটে যাবে শনির দশা।
নন্দী অবতার
শিলাদা নামক এক ব্রহ্মচারী ছিলেন। শিবের পরম ভক্ত ছিলেন তিনি। তিনি শিবের কাছে প্রার্থনা করেছিলেন অমর সন্তানের। তখন শিব তাঁকে সেই বর প্রদান করেন এবং নন্দী রূপ নিয়ে শিলাদার সন্তান হয়ে জন্মগ্রহণ করেন। কৈলাসের দ্বাররক্ষক হলেন নন্দী।
বীরভদ্র অবতার
বীরভদ্র এই রূপটি ছিল মহাদেবের সবচেয়ে ভয়ংকর রূপ। সতীর দেহত্যাগের করলে মহাদেব ক্রোধিত হয়ে ধারন করেছিলেন বীরভদ্রের রূপ । বীরভদ্র সতীর মৃত্যুর জন্য রাজা দক্ষকে দায়ী করে এবং রাজা দক্ষের যজ্ঞ ধ্বংস করে তাঁর মুণ্ডচ্ছেদ করেন।
ভৈরব অবতার
ভৈরব অবতারটিও মহাদেবের ভয়ংকর রূপের মধ্যে একটি। ব্রহ্মাদেবের পাঁচটি মাথা ছিল। চারটি মাথা চার দিকে আর পঞ্চম মাথাটি ছিল ওই চারটি মাথার ঠিক উপরে। ব্রহ্মাদেবের তার পাঁচটি মাথার মধ্যে চারটি মাথার মুখ থেকে শাস্ত্রবাক্য শোনা গেলেও পঞ্চম মাথার মুখটি দিয়ে শুধু নিন্দামন্দ বাক্য বলতেন। একদিন ব্রহ্মাদেব তার পঞ্চম মাথাটি দিয়ে বিনা দোষে মহাদেবকে বার বার উপহাস এবং অসম্মান করছিলেন। শিব ক্রুধ হয়ে যান। তারপরও ব্রহ্মাদেব মহাদেবকে অসম্মান করতে থাকে। এরপর মহাদেব আরও ক্রুধ হয়ে গিয়ে ধারণ করলেন বিনাশকারী ভৈরব রূপ। তারপর শিব ভৈরব রূপে ব্রহ্মার সেই পঞ্চম মাথাটি কেটে দিলেন।
অশ্বত্থামা অবতার
দ্রোণাচার্য শিবের কঠোর তপস্যা করে প্রসন্ন করেন তাঁকে এবং বর হিসেবে দ্রোণাচার্য শিবকে তাঁর পুত্র হিসেবে প্রার্থনা করেন। মহাদেব মহাবীর অশ্বত্থামার রূপ নিয়ে জন্মগ্রহণ করেন দ্রোণাচার্যের পুত্র হিসেবে।
শরভ অবতার
ভগবান বিষ্ণুর নৃসিংহ অবতার ধারন করে বধ করেন হিরণ্যকশিপু নামক অসুরকে। কিন্তু হিরণ্যকশিপুকে বধ করার পরও কিছুতেই ক্রোধ শান্ত হচ্ছিলো না ভগবান নৃসিংহদেবের। তাঁর ক্রোধ প্রহ্লাদ, মা লক্ষ্মীসহ আরো অনেক দেবতা শান্ত করার চেষ্টা করলেও ব্যর্থ হন। সেই ক্রোধে বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ড ধ্বংস হওয়ার আশঙ্কা করছিলেন দেবতা ও ঋষিগণ। এরপর পিতামহ ব্রহ্মা সহ সব দেবতা এবং ঋষিগণ ভগবান শিবের স্মরণাপন্ন হন। তাদের অনুরোধে ভগবান নৃসিংহদেবের ক্রোধ শান্ত করতে মহাদেব প্রথমে পাঠান বীরভদ্রকে । কিন্তু বীরভদ্রও তাঁর ক্রোধ শান্ত করতে ব্যর্থ হয়। এরপর দেবাদিদেব মহাদেব ধারন করেন শরভ রূপ। মহাদেবের এই শরভ রুপটি ছিল মানুষ, সিংহ এবং ঈগলের সমন্বয়।
গৃহপতি অবতার
গৃহপতির রূপ নিয়ে ভগবান শিব সাধু বিশ্বানরের সন্তান হিসেবে জন্মগ্রহণ করেন। নর্মদা নদীর তীরে বসবাসকারী এই সাধু শিবকে নিজের সন্তান হিসেবে পাওয়ার জন্য কঠোর তপস্যা শুরু করেছিলেন। সাধুর তপস্যায় সন্তুষ্ট হয়ে শিব জন্ম নেন গৃহপতির রূপ নিয়ে।
দুর্বাশা অবতার
ব্রহ্মাণ্ড পুরাণ অনুসারে, একবার কোনো এক কথাতে ব্রহ্মা এবং শিবের মধ্যে মনোমালিন্য হয়। এই সংঘাতের ফলে এত ক্রোধান্বিত হয়ে পরেছিলেন শিব যে, তাঁর ভয়ে দেবতারা পালাতে শুরু করে। এই কথাটি মাতা পার্বতী পেরে ক্ষুণ্ণ হন এবং মহাদেবের সাথে বাস করতে অক্ষমতা প্রকাশ করেন।তাঁর ক্রোধাগ্নির ফলে সৃষ্টি হওয়া বিনাশের কথা চিন্তা করে তা বর্জন করতে সম্মত হন মহাদেব। এরপর নিজের সেই তপোগ্নি ঋষি অত্রির পত্নী অনুসূয়ার গর্ভে স্থাপন করেন। মহাদেবের এই তপোগ্নির থেকে জন্ম হয় ঋষি দুর্বাসা। যেহেতু মহাদেবের ক্রোধের ফলে তাঁর জন্ম হয়েছিল, সেজন্য অত্যন্ত রাগী ছিলেন দুর্বাশা।
হনুমান অবতার :
হনুমান ছিলেন মহাদেবের ১১তম অবতার । তাঁকে রুদ্র অবতারও বলা হয় । মর্তের এক অপ্সরা ছিলেন হনুমানের মাতা অঞ্জনী। তার মুখ মুণি ঋষির পাপে বাঁদরের মত বিকৃত হয়ে যায়। তাঁর উপর অভিশাপ ছিলে যে তিনি যখনই কারোর সাথে ভালবাসার বন্ধনে আবদ্ধ হবেন তখনই তার মুখ বানরাকৃতি হয়ে যাবে। বানররাজ কেশরীর সাথে অঞ্জনী প্রেমের বন্ধনে আবদ্ধ হন এবং বিবাহ করেন। শিবের উপাসক ছিলেন সে। তার উপাসনায় মহাদেব প্রসন্ন হয়ে তাকে বর দিয়েছিলেন যে “তিনি তার গর্ভে জন্ম নেবেন এবং তাতে সে পাপ মুক্ত হবে”। একবার পুত্র লাভের আশায় রাজা দশরত যজ্ঞ করছিলেন। আর সেই যজ্ঞের প্রসাদ যেটা কৌশল্যার পাতে পড়ার কথা ছিল সেটি একটি চিল এসে আচমকাই নিয়ে উড়ে চলে যায় এবং অঞ্জনীর পাতে পড়ে। ভগবান শিবের প্রসাদ ভেবে অঞ্জনী সেটিকে খেয়ে নেয় এবং গর্ভবতী হয়। পরে মহাদেবের একাদশতম রুদ্র অবতার হনুমানের জন্ম হয় ।
যতীনাথ অবতার
ভগবান শিব আদিবাসী আহুক ও তাঁর স্ত্রীর ভক্তির পরীক্ষা নিতে যতীনাথ অবতারে অবতীর্ণ হয়েছিলেন। ভগবান শিব যতীনাথ রূপ নিয়ে অতিথি হিসেবে তাঁদের ঘরে যান। সেই সময় আহুকের তাঁকে রক্ষা করতে গিয়ে প্রাণ হারায়। তখন তাঁর স্ত্রী তাঁর স্বামীর মৃত্যুকে শোক প্রকাশ না করে গর্ব করেন। এতে মহাদেব অত্যন্ত প্রসন্ন হন এবং তাদের বর দেন পরের জন্মে নল ও দময়ন্তী হিসেবে জন্মানোর।