গেরিলা যুদ্ধের প্রবক্তা থেকে ভারতীয় নৌবাহিনীর জনক। ছত্রপতি শিবাজি সম্পর্কে যে কথাগুলো আপনি জানেন না
নিউজ ডেস্কঃ ছত্রপতি শিবাজি মহারাজ নামে পরিচিত শিবাজি ভোঁসলে এক বীর যোদ্ধা হিসেবে স্বরনীয় হয়ে রয়ে গেছে মানুষের মনে। তিনি তাঁর সাম্রাজ্যের প্রতিটি মানুষকে উদ্বুদ্ধ করেছেন যে তাঁর নিজের জন্য নয়, ভারতের জন্য লড়াই করতে। ছত্রপতি শিবাজি এক বীর যোদ্ধা হওয়ার পাশাপাশি তাঁর চিন্তাধারা, স্বভাব প্রকৃতির জন্য মানুষের মনে এক আলাদা জায়গা করে নিয়েছিলেন।
কে ছিলেন শিবাজী মহারাজ- শিবাজী ভোঁসলে অথবা ছত্রপতি শিবাজী মহারাজ কোন সালে জন্মগ্রহণ করেছিলেন তা নিয়ে রয়েছে মতভেদ। অনেকে মনে করেন যে তাঁর জন্ম হয়েছিল ১৯ ফেব্রুয়ারি, ১৬৩০ এবং মৃত্যু হয়েছিল ৩ এপ্রিল, ১৬৮০ সালে। তিনি ছিলেন মারাঠা সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা। বিজাপুরের আদিলশাহি সালতানাতের সঙ্গে যুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তিনি। এছাড়াও মুঘল সাম্রাজ্যের সাথে বেশ কয়েকবার যুদ্ধে জড়িয়ে পরেছিলেন এবং হেরেও গিয়েছিলেন তিনি। ১৬৭৪ সালে ‘ছত্রপতি’ হিসেবে মারাঠা সাম্রাজ্যের রাজার মুকুট ধারণ করেছিলেন শিবাজি। এছাড়াও তাঁকে ক্ষত্রিয় কুলাবতংস, গো-ব্রাহ্মণ প্রতিপালক ইত্যাদি উপাধি দেওয়া হয়েছিল।
ছত্রপতি শিবাজির সম্পর্কে রইল কিছু অজানা তথ্য-
ধর্মনিরপেক্ষ শাসক: সেক্যুলারিজম অর্থাৎ ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ। বর্তমানদিনে এই ধর্মনিরপেক্ষতাবাদের কথা বারবার বলা হয়, শিবাজি মহারাজ ছিলেন প্রকৃত অর্থেই একজন সেক্যুলার বা ধর্মনিরপেক্ষ শাসক। তিনি মুসলিমদের সাথে শান্তিপূর্ণ সম্পর্ক রেখে চলতেন। তাঁর রয়াল আর্মিতে দেড় লক্ষ সেনার মধ্যে মুসলিমের সংখ্যা ছিল ৬৬ হাজার । অত্যন্ত ধার্মিক মানুষ ছিলেন ।
ভারতীয় নৌবাহিনীর জনক: প্রথম নৌবাহিনী থাকার প্রয়োজনীয়তা শিবাজিই অনুভব করেছিলেন। এই কারনে উপকূল অঞ্চলে তৈরি করে দুর্গ, গড়ে তোলেন আলাদা নৌবাহিনী । এর উদ্দেশ্য ছিল, মহারাষ্ট্রের কঙ্কনের দিককে রক্ষা করা। বিজয়দুর্গ থেকে শুরু করে সিন্ধুদুর্গ-সহ অতীতের তৈরি করা কয়েকটি জায়গায় আজও রয়ে গিয়েছে।
মহিলাদের যথেষ্ট সম্মান করতেন:
শিবাজি মহারাজ কখনোই কোনওরকমভাবে মহিলাদের উপর হেনস্থা বা হিংসার মতো ঘটনা সহ্য করতেন না। কঠোর হাতে তা দমনের পক্ষপাতী ছিলেন। অনেকের মনে করতেন যে , তার মা জিজামাতার প্রতি অগাধ শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা থেকেই তিনি শিখেছিলেন মহিলাদের সম্মান করতে। সেনাদের উপর নির্দেশ ছিল যে যেন কোনও মহিলার ওপর কোনরকম অত্যাচার করা না হয়, এবং এই নির্দেশ কেউ অমান্য করলেই, তার কঠোর শাস্তি হত।
অবরুদ্ধ পানহালা থেকে যেভাবে পালিয়েছিলেন: সিদ্দি জৌহরের সেনারা শিবাজিকে পানহালার দুর্গে আটক করে রেখেছিলেন । তাদের চোখকে ফাঁকি দিতে তিনি কাজে লাগিয়েছিলেন বারবের শিবা নহভিকে। কারন শিবাজির মতোই অনেকটা দেখতে ছিল বারবের। এই কারনেই দুটো পালকির ব্যবস্থা করেছিলেন। এই দুটো পালকির মধ্যে একটা ছিলেন বারবের। আরেকটিতে ছিলেন শিবাজি।তবে যেই পালকিতে বারবের ছিল সেই পালকিকেই ফলো করেছিলেন সিদ্দির সেনারা। এই সুযোগে শিবাজি দুর্গ থেকে পালিয়ে যান ।
অনুগত আর্মির স্থপতি ও শিবাজি: শিবাজির আগে যুদ্ধ করেছিলেন তার বাবাও সাধারণ নাগরিক এবং কৃষকদের নিয়েই। যারা শুষ্ক মরশুমে, রাজার জন্য লড়াই করতেন। প্রথম ডেডিকেটেড আর্মি শিবাজিই তৈরি করেন। এই জন্য তাঁদের সারা বছর প্রশিক্ষণ দেওয়ার পাশাপাশি প্রতি মাসে দেওয়া হত বেতন ।
আফজল খানের পরাজয়: শিবাজি নিজে আফজল খানের সাথে দেখা করার জন্য চেয়েছিলেন সময় । সাক্ষাৎকারের জন্য একটি শর্ত আরোপ করেছিলেন আফজল খানের সেনাপতি আদিল শাহ। শর্ত অনুসারে, একটি তরোয়াল আর ফুল ছাড়া কিছু রাখা যাবে না সাথে। সেই অনুসারে আয়োজন হয়। তবে আশঙ্কা করেছিলেন শিবাজি যে তাঁর ওপর হামলা হতে পারে। সেই কারণে, তিনি পোশাকের নীচে বর্ম পরেছিলেন এবং বাঘনখ লুকিয়ে রেখেছিলেন তার বাঁ-হাতের মধ্যে। আফজল খানের তরোয়াল তার খুব একটা ক্ষতি না করতে পারলেও তার কাছে থাকা বাঘনখে বিদ্ধ হয়েছিলেন আফজল খান।
গেরিলা যুদ্ধের প্রবক্তা: পাহাড়ি ইঁদুর বলা হত শিবাজিকে। এর কারণ ছিল তিনি হাতের তালুর মতো চিনতেন নিজের ভূমির ভূগোলটা । এর পাশাপাশি তিনি গেরিলাযুদ্ধের প্রবক্তাও ছিলেন।
আগ্রা থেকে পালানো: শত্রুদের চোখকে ফাঁকি দিয়ে পালানোটাকে শিবাজি এক শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছিলেন। যখন ঔরঙ্গজেবের তাকে আগ্রা গৃহবন্দি করে রেখেছিলেন সেখান থেকেও তিনি সে ভাবেই পালিয়েছিলেন। সেখানে আফগান সেনাদের সাথে লড়াই ছাড়া অন্য কোনো রাস্তা ছিল না। কিন্তু তিনি এরই মধ্যে বানিয়ে ফেলেছিলেন একটি পরিকল্পনা। শিবাজি আগ্রার মন্দিরে নিয়মিত মিষ্টি ও ফল পাঠানোর জন্য অনুমতি আদায় করেন। মিষ্টি যেত বড় বড় বাক্স ভরে। ঠিক এইভাবেই একদিন একটি মিষ্টির বাক্সের মধ্যে ঢুকে, বেরিয়ে যান দুর্গ থেকে।
দয়ালু রাজা: শিবাজিকে বলা হত ‘জনতা রাজা’। কারন অত্যন্ত দয়ালু ছিলেন তিনি। তিনি এতটাই দয়ালু প্রকৃতির ছিলেন যে তাঁর কাছে শত্রুপক্ষ আত্মসমর্পণ করতে চাইলে, তাদের উপরেও দয়াই দেখাতেন।