অফবিট

নোবেল এনে দেওয়া ব্যাক্তিকে কি এমন কারনে নিষিদ্ধ করেছিল পাকিস্তান?

নিউজ ডেস্ক – নোবেল পদক পাওয়া চাট্টিখানি ব্যাপার নয়। আর সেটা যদি বিজ্ঞান বিষয়ক উপর হয় তাহলে তো কোন কথাই নেই। হাতেগোনা খুব কম সংখ্যক মানুষ রয়েছে যারা বিজ্ঞানের উপর সার্চ করে নোবেল পদক জয়লাভ করেছেন । তবে এমন একজন বিজ্ঞানী রয়েছেন তিনি বিজ্ঞানের পদার্থবিদ্যার উপর নোবেল পদক পেয়ে দেশের নাম উজ্জ্বল করার পরেও আজ নিজের দেশ থেকে উৎখাত করা হয়েছে তাকে। এই বিজ্ঞানীর নাম হল আবদুস সলাম। বিজ্ঞানীর জন্মভূমি পাকিস্তানের জং শহরে। আজ যে কারণে তিনি সকলের কাছেই দুস্কৃতির সমান সেটি হলো একমাত্র ধর্ম। ধর্মের গোড়ামির জন্যই এমন এক রত্নকে হারালো গোটা পাকিস্তান। কি সবাই অবাক হচ্ছেন তো। যে এত ভাল বিজ্ঞানী দেশের নাম জয় করার পরও কেন আজ লাঞ্ছিত। তাহলে সেই গল্প বলতে গেলে একবার চোখ রাখতে হবে পাকিস্তানের দরবারে।

জানা গিয়েছে সালাম ছিলেন প্রথম পাকিস্তানি মুসলিম, যিনি নোবেল জয় করেছিলেন। তিনি তার পরিবারের প্রতি অঙ্গীকারাবদ্ধ ছিলেন এবং জনগণের কল্যাণ চাইতেন। নোবেল পদক নেওয়ার সময় ভাষণে তিনি কোরানকে উদ্ধৃত করেছিলেন। বিজ্ঞানের ছিল আর পাঁচজন সাধারণ মানুষের মতোই। তার বাবা ছিলেন গণিতের শিক্ষক যার কারণে কোনো আনুষাঙ্গিক কাজ করতে না দিয়ে সর্বক্ষণ তাকে বিদ্যা নিয়েই থাকতে বলতো। সর্বক্ষণ পড়াশোনা নিয়ে থাকতে থাকতেই গনিত ও পদার্থবিদ্যার উপর একটা আকর্ষণ জন্ম নিয়েছিল সালামের। যার কারণে লাহোরে সরকারি কলেজে পড়ার জন্য নিজ শহর ছেড়ে গেলেন সেখানে তিনি প্রথম বৈদ্যুতিক বাতি দেখেছিলেন। সেখানেই গণিত ও পদার্থবিদ্যায় তার দক্ষতা তাকে সহপাঠীদের কাছ থেকে আলাদা করে তোলে।পরে তিনি ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের বৃত্তি পান ও সেন্ট জোনস কলেজে অল্প কয়েকজন দক্ষিণ এশীয়র মধ্যে তিনি একজন। ডক্টরেট শেষ করে তিনি আবার লাহোরে ফিরে গিয়ে গণিতের অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন।

অধ্যাপক সালাম জীবনভর ছিলেন একজন নিবেদিতপ্রাণ মুসলিম। লন্ডনে নিজের অফিসে বসেও তিনি কোরান শুনতেন। বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে ধর্ম কখনোই প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেনি। বরং অনেক ক্ষেত্রে তার কাছে এটি ছিলো একটি আরেকটির সহায়ক।

১৯৫৩ সালে পাকিস্তানে আহমদিয়াদের সমস্যা শুরু হয় মূলত। তখন লাহোরে বেশ কিছু সহিংস ঘটনা ঘটে। পাঞ্জাব সরকার তখন মাত্রা ২০ জনের কথা বললেও সহিংসতায় নিহতের সংখ্যা ছিলো অনেক বেশি। পরে ১৯৭৪ সালে আইন করে আহমদিয়াদের অমুসলিম ঘোষণা করা হয় এবং কিছু অধিকার থেকেও তাদের বঞ্চিত করা হয়। ২০১০ সালেও দুটি আহমদিয়া মসজিদে হামলার ঘটনা ঘটে যাতে ৯৪ জন নিহত হয়। ১৯৫৩ সালের এই দাঙ্গার পর তিনি পাকিস্তান ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেন এবং কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরে যান। এবং পরে লন্ডনে ইমপেরিয়াল কলেজে যোগ দেন। নিজ দেশ ত্যাগ করলেও মনেপ্রাণে তিনি ছিলেন একজন পাকিস্তানি মুসলিম। পদক জয়ের কাছে ধর্ম-বিজ্ঞান ছিল ওতপ্রোতভাবে জড়িত একটি বিষয়। ১৯৬১ সালে তিনি পাকিস্তান স্পেস প্রোগাম প্রতিষ্ঠা করেন এমনকি পাকিস্তানের পরমাণু কর্মসূচিতে তিনি যুক্ত ছিলেন। কিন্তু জুলফিকার আলী ভুট্রো আহমদিয়াদের বিরুদ্ধে আইন গঠিত হলে তিনি অফ পরমাণু কর্মসূচির বিরুদ্ধে সোচ্চার হোন। 

এরপরই দীর্ঘ গবেষণা করে মৌলিক কণার মধ্যে দুর্বল ও তড়িৎ চৌম্বকীয় মিথষ্ক্রিয়া বিষয়ক তত্ত্বে গুরুত্বপূর্ণ অবদান আবিষ্কার করার  জন্য পদার্থ বিজ্ঞান ক্যাটাগরিতে নোবেল পুরস্কার পান তিনি।

সালামের বড় ছেলে আহমেদ সালাম বলেছেন, “তার বাবা উন্নয়নশীল দেশগুলোতে শিক্ষা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উন্নয়নের কথা বলেছিলেন, যে বার্তা ৫০ বছর পরে এসেও সময়োপযোগী”। তবে দুর্ভাগ্যবশত পাকিস্তান প্রত্যাখ্যান করায় তার কবরে মুসলমানি  নিয়ম মেনে কেউ জানাজা পড়েনি। এমনকি কবরের ফলকে পদকজয়ী বিজ্ঞানী কথাটি লেখা থাকলেও মুসলমানি কথাটি হাটিয়ে দেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি হারিয়ে যাওয়া তারার মতোই তার জীবনী নিয়ে একটি ওয়েব সিরিজ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন পরিচালকরা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *