বাংলাদেশীদের উপর পাকিস্তানের নৃশংস হামলা ভারতকে বাধ্য করেছিল মুক্তিযোদ্ধাদের পাশে দাঁড়াতে। আরও যা যা করেছিল সেই সময় দেশ
নিউজ ডেস্কঃ 1971 সালটি ভারতকে রাজনীতি, ক্রিকেট এবং যুদ্ধে সব দিক থেকেই এনে দিয়েছিল বেশ কয়েকটি ‘বড় জয়’। রাজ্য স্তরে স্থানীয় নানা সমস্যার সঙ্গে লড়াইয়ের মাঝেও জাতীয় স্তরে এই জয়গুলো স্বস্তি এনে দিয়েছিল সকলের মনেই।
তবে, এর মধ্যে সবচেয়ে গুরত্বপূর্ণ ছিলো নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের মুক্তি আন্দোলন। ভয়ংকর এই সময়ের পর কেটে গেছে বহু বছর। কিন্তু আজ ও মুক্তিযুদ্ধের প্রতিটা স্মৃতি টাটকা হয়ে রয়েছে এপার বাংলা ও ওপর বাংলার অসংখ্য মানুষের মনে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলন হলেও পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারত ও বাংলাদেশের যৌথ প্রচেষ্টায় পাওয়া এই জয় ভারতের মতো নব্য প্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ নির্ধারণের ক্ষেত্রে নেহাত কম গুরুত্বপূর্ণ নয়।
১৯৪৭ সালে ভারত ভঙ্গের পর উপমহাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়ঙ্কর সময় বলা চলে ১৯৭১ কে। সম্প্রতি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ৫০ তম বার্ষিকী উদযাপন করছি আমরা। আজ থেকে ৫০ বছর আগে অগুনতি বাংলাদেশির কৃচ্ছসাধন এবং পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারতের সিদ্ধান্তমূলক সামরিক বিজয়ের মাধ্যমে অভ্যুদয় হয় স্বাধীন বাংলাদেশের। তবে, আজ এত বছর পরেও মনে থেকে যায় প্রতিহিংসাপরায়ণ পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর হাতে অগণিত নিরপরাধ শিশু, পুরুষের হত্যা এবং নারীর অসম্মান।
দেশ ভাগের প্রথম দিন থেকেই পূর্ব এবং পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যেকার অস্থিরতা প্রকাশ পেয়েছিল। সংখ্যাগরিষ্ঠের ভাষা বাংলা হওয়া সত্ত্বেও মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ পূর্ব পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা বাংলা হিসেবে মেনে নিতে অস্বীকার করলে তাকে ১৯৪৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে হেনস্থার শিকার ও হতে হয়। অবশেষে ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি ছাত্র হত্যার খবরে ধৈর্যের বাঁধ ভাঙ্গে বাংলাদেশী ( তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান) তরুণদের। ভাষা আন্দোলনের আগুন জ্বলে ওঠে চারদিকে। ‘একুশে’ হিসাবে অমর হওয়া এই বিশেষ দিন এখন জাতিসংঘ কর্তৃক আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসাবে পালিত হয় সারা বিশ্ব জুড়ে। ১৯৫৪ সালে প্রাদেশিক পরিষদের প্রথম নির্বাচনে, আওয়ামী ( আওয়ামী মুসলিম) লীগ নেতৃত্বাধীন যুক্তফ্রন্ট মুসলিম লীগকে ব্যাপকভাবে পরাজিত করে। ফ্রন্টের লাহোর অধিবেশনে ২১-দফা ইশতেহার প্রকাশ করে দাবি করা হয় পূর্ব পাকিস্তানের জন্য স্বায়ত্তশাসন।
এবং ধীরে ধীরে এই দাবিই পরিণত হয় অর্থনৈতিক উন্নয়নে সমতার এক কঠোর দাবিতে। পূর্ব পাকিস্তানের মানুষ ছাত্রদের নেতৃত্বে গর্জে ওঠে সর্বস্তরের বৈষম্যের বিরুদ্ধে।পূর্ব পাকিস্তানে রপ্তানি দ্বারা অর্জিত বৈদেশিক মুদ্রা পশ্চিম পাকিস্তানের উন্নয়নে ব্যবহৃত হতো। যাবতীয় উন্নয়নমূলক কাজ সবই এক ভাবে পশ্চিমে হওয়ায় স্বাভাবিক ভাবেই পিছিয়ে পড়ছিল পূর্ব। অবস্থা সংশোধনের জন্য তরুণ রেহমান সোবহানের মতো বাঙালি অর্থনীতিবিদরা একটি কোর্স সংশোধনের ওপর জোর দিতে আরম্ভ করেন সেই সময়। ১৯৬৬ সালের মার্চ মাসে শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ছয় দফা কর্মসূচি পেশ করে লাহোর রেজোলিউশন অর্থাৎ প্রকৃত অর্থে পাকিস্তানের একটি ফেডারেশন তৈরীর দাবি করেছিল। তাদের মূল দাবি ছিল”ফেডারেল সরকারের শুধুমাত্র দুটি বিষয় নিয়ে কাজ করা উচিত: প্রতিরক্ষা এবং পররাষ্ট্র বিষয়ক, এবং অন্যান্য সমস্ত অবশিষ্ট বিষয়গুলি ফেডারেশন রাজ্যগুলির নিজের নিজের দায়িত্ব হবে।”
গোটা ১৯৬০-এর দশকে, পূর্ব পাকিস্তান ভাষা আন্দোলন, ছয় দফা প্রস্তাব এবং আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা নিয়ে এক প্রচন্ড অস্থিরতার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছিল। পরবর্তীতে ১৯৬৮ সালের প্রথম দিকে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারতের সাথে ষড়যন্ত্র করার অভিযোগ আনা হয় শেখ মুজিব এবং অন্যান্যদের বিরুদ্ধে। ব্যাপক বিক্ষোভের পরে, এক বছরের মাথায় শেষ পর্যন্ত প্রত্যাহার করা হয় অভিযোগগুলো।
এদিকে, পশ্চিমও শান্ত ছিল না মোটেই। ভারতের সাথে ১৯৬৫ সালের যুদ্ধের পর অর্থনৈতিক দিক থেকে নানা সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছিল পাকিস্তানকে। টালমাটাল রাজনৈতিক পরিস্থিতির মাঝেই জুলফিকার আলী ভুট্টো প্রেসিডেন্ট ফিল্ড মার্শাল আইয়ুব খানের সাথে সম্পর্কে ইতি টেনে পাকিস্তান পিপলস পার্টি নামে একটি নতুন দল গঠন করেন যা ছাত্র ও সমাজের কর্মী শ্রেণীকে আকর্ষিত করতে সক্ষম হয়েছিল। এর মধ্যেই অবশ্য রাষ্ট্রপতি আইয়ুব খান তার শাসনকালে পাকিস্তানে এক দশকে ঘটা উন্নয়ন উদযাপনের জন্য ১৯৬৮ সালের অক্টোবরে কাকুলে প্যারেডে নিজের কৃতিত্বের কথা তুলে ধরেন।
১৯৬৮ সাল পাকিস্তানের কেটেছে খুবই টালমাটাল অবস্থার মধ্যে দিয়ে। আইয়ুব খানের বিরুদ্ধে বিশাল ছাত্র আন্দোলনে তেতে উঠেছিল গোটা দেশ সেই সঙ্গে ছিলো তীব্র ভারত বিদ্বেষ। শাসক দলের বিরুদ্ধে আন্দোলনের সময় বাস পুড়িয়ে দেওয়া ও ধর্মঘট ডাকা এক নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনাতে পরিণত হয়।
পরবর্তী বেশ কিছু মাস পাকিস্তানের শাসক দল ও বিরোধী দল উভয়ের জন্যই ছিলো বেশ উত্তাল এক সময়। ১৯৬৯ সালের ২৪ মার্চ আইয়ুব খান পদত্যাগ করে জেনারেল ইয়াহিয়া খানের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরিত করতে বাধ্য হন। ১৯৭০ এ ইয়াহিয়া সাধারণ নির্বাচনে রাজি হলে দেখা যায় আওয়ামী লীগ পূর্ব পাকিস্তানের ১৬২ টি আসনের মধ্যে ১৬০টিতে জয়লাভ করে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা এনেছে। ভুট্টোর পিপিপি অপরদিকে পশ্চিমে ১৩৮ টি আসনের মধ্যে ৮১ টি আসনে জয়লাভ করে। ভুট্টো সরাসরি ফলাফল গ্রহণ করতে অস্বীকার করেন এবং ইয়াহিয়া খানকে তিনি উৎসাহিত করেন পূর্বে মুজিবের সরকার গঠনের দাবিকে প্রত্যাখ্যান করার জন্য। গন্ডগোলের আশঙ্কায় মুজিবর ৭ ই মার্চের রমনায় তার ভাষণে জনগণকে প্রতিরোধের জন্য প্রস্তুত থাকতে বলেন। সেই সময় পূর্ব পাকিস্তানে প্রশাসনের অস্তিত্ব প্রায় বন্ধ হয়ে গেছিলো বললেই চলে। দুই দলের মধ্যে কয়েক দফা ফলহীন আলোচনার পর শেষ পর্যন্ত ২৫ মার্চ রাতে সেনাবাহিনীর ক্র্যাকডাউন শুরু হয়।
ভারত ও পাকিস্তানের মাঝের সম্পর্কেরও ক্রমশ অবনতি ঘটতে শুরু করে এই সময়।জানুয়ারির দেশের দিকে শুরু হয় দুই দেশের কূটনীতিকদের নিজ নিজ দেশে ফেরত পাঠানো। এর মধ্যেই ৩০ জানুয়ারী, গঙ্গা নামের একটি ইন্ডিয়ান এয়ারলাইন্স ফকারকে , শ্রীনগর থেকে জম্মু যাওয়ার পথে লাহোরে হাইজ্যাক করে তাতে বিস্ফোরন ঘটানো হয়। দুই দেশের সম্পর্ক এমনই তলানিতে গিয়ে ঠেকে যে কূটনীতিবিদরাও নানা ঝামেলার সম্মুখীন হতে আরম্ভ করে।
উভয় দেশের সরকারের কাছেই স্পষ্ট হয়ে এসেছিলো যে শীঘ্রই একটা বড়োসড় ঝামেলা লাগতে চলেছে।পরিস্থিতি তেতে রয়েছে বুঝে হাইকমিশন এবং কনস্যুলেটগুলোও নিজেদের কর্মী কমাতে শুরু করে দিয়েছিল। কলকাতায় কিছু পশ্চিম পাকিস্তানি অফিসার ছাড়া, পূর্ব পাকিস্তানের সমস্ত ডেপুটি হাইকমিশনের কর্মীরা বাংলাদেশের প্রতি তাদের আনুগত্য ঘোষণা করে। অথচ, তাদের সকল কর্মকর্তাকে ভারত জোরপূর্বক গৃহবন্দী করেছে এমন দাবি করে পাকিস্তান উল্টে ঢাকায় ভারতীয় কর্মকর্তাদের গৃহবন্দী করতে আরম্ভ করে। সুইস মধ্যস্থতায় কয়েক সপ্তাহ ধরে দীর্ঘ আলোচনার পর, ভারতীয় কর্মকর্তা এবং তাদের পরিবারকে ঢাকা থেকে ভারতে বিমানপথে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয় তার বদলে কলকাতা থেকে পশ্চিম পাকিস্তানি সদস্যদের পুনরায় ফেরার ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়। এরপরেই এমন এক পারমিটের ব্যবস্থা করা হয় যাতে এক দেশ থেকে কোনো একজন কর্মকর্তা প্রস্থান করলে অপর দেশ থেকে যাতে আরেকজন কর্মকর্তা প্রস্তাবের অনুমতি পায়।
পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর হাতে ঘটা গণহত্যা সম্পর্কে জানতে গোটা বিশ্বের খুব একটা বেশি সময় লাগেনি। পূর্ব পাকিস্তানে আমেরিকার পাঠানো ট্যাংক ও যুদ্ধ বিমান ব্যবহার করে পাকিস্তানী সেনাবাহিনী কিভাবে আওয়ামী লীগের সদস্য, বুদ্ধিজীবী এবং হিন্দুদের নির্মূল করার লীলা খেলায় মেতে উঠেছে তা ঢাকায় মার্কিন কনসালট্যান্ট জেনারেল আর্চার কেন্ট এর রিপোর্ট থেকে জানা যায়। সরকারের কাছ থেকে কোনো সাড়া না পেয়ে, ব্লাড এবং তার কুড়ি জন সহকর্মী পুনরায় গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের উপর নৃশংসতা ও আক্রমণকে উপেক্ষা করার অভিযোগ এনে মার্কিন সরকারকে টেলিগ্রাম পাঠায়।
এই ঝামেলার মধ্যে পাকিস্তান সরাসরি কখনোই চিন বা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কারোর কাছ থেকেই সাহায্য না পেলেও সত্যি বলতে সেই সময় আমেরিকার চাইলে বাংলাদেশে পাকিস্তানের এই গনহত্যা রোধ করতে পারতো। গ্যারি বাস এবং শ্রীনাথ রাঘবনের মতো লেখকদের গবেষণা থেকেও উঠে এসেছে ঠিক এই কথাই। নিক্সন এবং কিসিঞ্জারের মধ্যে হাওয়া কোথা থেকেও একথা স্পষ্ট যে ভারতীয় এবং সর্বোপরি ইন্দিরা গান্ধীর প্রতি তাদের ছিলো এক তীব্র বিতৃষ্ণা। ভারতীয়দের তারা মোটেই নিজেদের সমকক্ষ ভাবতো না।
এদিকে বেইজিং ও ওয়াশিংটনের বাধা না পেয়ে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর হত্যাকাণ্ড নির্বিচারে অব্যাহত ছিল পূর্ব পাকিস্তানে। নিমেষের মধ্যে তারা উজাড় করে ফেলত গোটা গ্রাম। নারী পুরুষ শিশু বাদ যেত না কেউ। অগণিত পুরুষকে ঠান্ডা রক্তে গুলি করে খুন করা হয়েছিল; লঙ্ঘিত হয়েছিলো হাজার নারীর সম্মান। সেইসঙ্গে মুসলিম চিন্তা ধারাকে সংক্রামিত করছে এই অভিযোগে পশ্চিম পাকিস্তানি সেনার হাতে নিহত হন অসংখ্য হিন্দু। লক্ষ লক্ষ উদ্বাস্তু প্রাণ বাঁচাতে ছুটে আসে ভারতে। এই অকথ্য অত্যাচার এর মাঝেই দাঁতে দাঁত চেপে লড়াই করে নিজেদের অধিকার ছিনিয়ে নিতে গঠিত হয় মুক্তিযোদ্ধাদের এক বিরাট বাহিনী।
পাকিস্তানের সসস্ত্র বাঙালি অফিসারদের মধ্যে থেকে বেছে নেওয়া কমান্ডারদের অধীনে মুক্তিযোদ্ধাদের ৯ টি সেক্টরে দলবদ্ধ করা হয়। মুক্তিযোদ্ধাদের বেশির ভাগই ছিল কৃষক ও ছাত্র। তবু, ভারতের কাছ থেকে গোলা বারুদ এবং প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত হয়ে স্বাধীন ভাবে লড়াই করেই দীর্ঘ প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত পাকিস্তানী সেনাকে হারিয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ছিনিয়ে নিতে সক্ষম হয় মুক্তি বাহিনী।
অনেকের ধারণা ভারত প্রথম থেকেই হয়তো পাকিস্তানকে ভাঙার চেষ্টা করে এসেছে। তবে, এটা একেবারেই বাস্তব নয়। পূর্ব পাকিস্তান সীমান্তে নকশাল আন্দোলন ভারতের চিন্তা বাড়িয়েছিল ঠিকই তবে পাকিস্তান ভাঙার কোনো ইচ্ছাই ছিল না সরকারের। বরং ভারত সরকারের উচ্চপদস্থ বেশ কিছু অফিসার অখন্ড পাকিস্তানের ই পক্ষে ছিলো। কিন্তু বাংলাদেশী জনগণের উপর পাকিস্তানের লাগামহীন নৃশংস হামলা এবং উদ্বাস্তুদের ক্রমবর্ধমান বোঝা ভারতকে বাধ্য করেছিল মুক্তিযোদ্ধাদের পাশে দাঁড়াতে এবং তাদের সমর্থন করতে। শান্তি, বন্ধুত্ব ও সহযোগিতার ইন্দো-সোভিয়েত চুক্তির উদ্দেশ্য ছিল সংঘাতের ক্ষেত্রে বহিরাগত কোনো সম্পৃক্ততাকে নিরুৎসাহিত করা।
স্বাধীনতার পর থেকেই দীর্ঘ বহু বছর ধরে ভারত আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে যথাসম্ভব নিরপেক্ষতা বজায় রেখে চলেছিল। তবে, বাংলাদেশের ঘটনায় জড়াতে বাধ্য হয়েছিলো ভারত কারণ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্যের মতো দেশ মুখে বাঙালিদের সমর্থন জানিয়ে পাশে থাকার অঙ্গীকার করলেও বাস্তবে মেলেনি কোনো সাহায্য। এমনকি ভারতের হয়ে গোটা ঘটনা বিশ্বের সামনে উপস্থাপন করার জন্য তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী স্বয়ং সেই সময় ইউরোপের প্রধান প্রধান রাজধানী এবং ওয়াশিংটনে সফর করেন।1971 সালের 3 ডিসেম্বর, পিএএফ ভারতীয় বিমানঘাঁটি এবং অন্যান্য স্থাপনাগুলিতে আক্রমণ করলে মধ্যরাতে, ইন্দিরা গান্ধী পার্লামেন্টে বলেছিলেন যে “পাকিস্তানের অপ্রীতিকর আগ্রাসন চূড়ান্তভাবে এবং শেষ পর্যন্ত প্রতিহত করা হবে।”
পাকিস্তানী সেনাবাহিনী পূর্ব পাকিস্তানে ভারতীয় সেনাবাহিনী এবং মুক্তিযোদ্ধাদের জোড়া আক্রমণের মুখে পড়লে, মরিয়া ওয়াশিংটন সেই সময় ভারতকে ভয় দেখানোর জন্য বিমানবাহী রণতরী এন্টারপ্রাইজকে বঙ্গোপসাগরে পাঠায়। সেই সঙ্গে, কিসিঞ্জার জাতিসংঘে চীনা প্রতিনিধির সাথে দেখা করে সরাসরি ভারতের বিরুদ্ধে চীনা সামরিক হস্তক্ষেপ ও কামনা করেন।কিন্তু, এতো কিছুর পরেও সব রকম প্রতিকূলতাকে জয় করে বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী দেশ আমেরিকাকে চমকে দিয়ে ভারত ১৯৭১ সালে মানবিকতার এক নতুন উদাহরণ তৈরি করে। ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানের লেফটেন্যান্ট জেনারেল এ.এ.কে. নিয়াজি, রমনা রেসকোর্সে ভারতীয় ও বাংলাদেশী বাহিনীর যুগ্ম কমান্ডার লেফটেন্যান্ট জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরার কাছে আত্মসমর্পণের চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর করেন।