সুদর্শন চক্রের অহংকার ভাঙতে ঠিক কি করেছিলেন ভগবান শ্রীকৃষ্ণ?
নিউজ ডেস্কঃ পৌরাণিকে কাহিনী অনুসারে,ভগবান শ্রীকৃষ্ণ একবার তার স্ত্রীর সত্যভামার কথায় পারিজাত বৃক্ষ এনে দিয়েছিলেন স্বর্গ থেকে। আর এরপর থেকে মনে অহংকার খুব বেড়ে যায় সত্যভামার।তখন তিনি নিজেকে সবচেয়ে অধিক সুন্দরী বলে ভাবতে থাকেন এবং শ্রীকৃষ্ণের অত্যন্ত প্রিয় বলে নিজেকে মনে করেন। এদিকে একবার ইন্দ্রের বজ্রকে নিষ্ক্রিয় করে দিয়েছিল সুদর্শন চক্র আর তারপর থেকে তারও মনে মধ্যে খুব অহংকার বেড়ে যায় এবং ভাবেন যে যুদ্ধের সময় যখন কৃষ্ণের কাছে আর কোন উপায় থাকেনা তখন তাঁরই সাহায্য নেন ভগবান শ্রীকৃষ্ণ।এছাড়াও আবার এই একই রকম ভাবে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের বাহন গরুড়ও ভাবেন যে তাঁর গতি ও শক্তির সব থেকে বেশি হওয়ার জন্য ভগবান শ্রীকৃষ্ণ তাকে ছাড়া কোথাও যেতে পারবে না।আর শ্রীকৃষ্ণ যখন এই তিনজনের অহংকারের কথা জানতে পারলেন তখন শ্রীকৃষ্ণ হনুমানকে স্মরণ করলেন তাদের অহংকার ভাঙার জন্য। হনুমান জানতেন যে ভগবান শ্রীরামচন্দ্র এবং শ্রীকৃষ্ণ যে একজনই। তাই তাঁকে স্মরণ করার সাথে সাথে দ্বোয়ারকা শহরে এসে পৌঁছালেন এবং শ্রীকৃষ্ণ তাকে কি কাজের জন্য স্মরণ করেছেন তা তিনি জানতেন। তাই শ্রীকৃষ্ণের দরবারে যাবার পরিবর্তে তিনি দ্বোয়ারকার একটি সুন্দর বাগানে চলে গেলেন।
সেখানে গিয়ে তিনি বৃক্ষের ফলগুলিকে ভাঙতে শুরু করেন এবং তাঁর সাথে সাথে গাছগুলিকে মাটি থেকে উপড়ে ফেলতে থাকেন।যখন এই কথা ভগবান শ্রীকৃষ্ণের জানতে পারলেন যে একটি বানর সুন্দর বাগানটিকে নষ্ট করে দিচ্ছে তখন গরুড়কে শ্রীকৃষ্ণ বললেন যে তুমি সেনা নিয়ে যাও এবং আমার সামনে ওই বানরটিকে ধরে ধরে নিয়ে আসো।গরুড় তাঁর নিজের শক্তি নিয়ে এতটাই অহংকারী হয়ে উঠেছিলেন যে সে বলেন যে অতি সাধারন একটি বানরকে ধরে নিয়ে আসার জন্য তাঁর সেনার কোন প্রয়োজন নেই তাকে ধরার জন্য সে একাই যথেষ্ট।তারপর যেখানে হনুমান সেই গাছগুলোকে উপরে ফেলছিলেন সেখানে উড়তে উড়তে গিয়ে উপস্থিত হলেন গরুড়।এবং কিছু না ভেবেই ওই হনুমানটিকে ধরার চেষ্টা করলেন তখন তার লেজ দিয়ে গরুড়কে চেপে ধরলেন হনুমান।এতে গরুড়ের নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে যায়। কিছু সময় পর্যন্ত এই ভাবে গরুড়কে কষ্ট দেওয়ার পর হনুমান তাঁর লেজের ঝাপটায় দূর সমুদ্রে ফেলে দেয়। এরপর অনেক কষ্টে নিজেকে সামলে গরুড় ফিরে এলেন শ্রীকৃষ্ণের দরবারে।দরবারে আসে গরুড় শ্রীকৃষ্ণকে বললেন যে এই বাণর কোন সাধারণ বাণর নয় যার জন্য সে ধরে আনতে পারলেন না তাকে।
ভগবান শ্রীকৃষ্ণ এই শুনে গরুড়কে বলেন যে তাহলে তিনি অবশ্যই রামভক্ত হনুমান হবেন। তাহলে এক কাজ করো তুমি তাকে গিয়ে বলো যে তাকে শ্রীরাম ডেকে পাঠিয়েছেন।তাহলে অবশ্যই চলে আসবেন তিনি আর যদি সম্ভব হয় তাহলে তোমার সাথে করে তাকে নিয়ে আসো।তখন গরুড় সেখান থেকে রওনা হলেন শ্রীকৃষ্ণের আদেশ অনুসারে।গরুড় উড়তে উড়তে মলয় পর্বত এসে ক্ষমা চাইলেন হনুমানের এবং জানান যে ভগবান শ্রীরাম তাঁকে স্মরণ করেছেন।তারপর গরুড় বলেন যে তাঁর পিঠে বসতে সে খুব শীঘ্রই তাঁকে নিয়ে যাবে শ্রীকৃষ্ণের কাছে। শ্রীকৃষ্ণের এই লীলাও হনুমান বুঝতে পেরে যান। তখন গরুড়কে বলেন তিনি যে তুমি চলো আমি তোমার পেছনে পেছনে আসছি। এদিকে দ্বারকাতে শ্রীরামচন্দ্রের রূপ নিয়ে শ্রীকৃষ্ণ সত্যভামার সাথে সিংহাসনে বসলেন এবং আদেশ দিলেন সুদর্শন চক্রকে যে তুমি দুয়ারে গিয়ে পাহারা দাও যাতে কেউ ভেতরে বিনা অনুমতি ছাড়া আসতে না পারে। এর কিছুক্ষণ পর দুয়ারে আসে উপস্থিত হলেন হনুমান। সুদর্শন চক্র তখন হনুমানের রাস্তা আটকায় এবং তাঁকে বলেন যে বিনা অনুমতিতে তুমি ভেতরে প্রবেশ করতে পারবে না।এই শুনে সুদর্শন হাত দিয়ে ধরে হনুমান তার দাঁত দিয়ে খামছে ধরে ভেতরে প্রবেশ করলেন।দরবারের ভিতরে হনুমান প্রবেশ করার পর সিংহাসনে বসে থাকা শ্রী রামচন্দ্রকে প্রণাম করে তাকে জিজ্ঞাসা করলেন যে প্রভু মা কোথায় এবং এ কোন দাসী বসে আছেন আপনার সিংহাসনে? সত্যভামা এই কথা শুনে খুবই লজ্জিত হয়ে পড়লেন। আর তখনই তার সমস্ত অহংকার ভেঙে গেল।এদিকে গরুড় হাঁপাতে হাঁপাতে দরবারে পৌঁছিয়ে যখন হনুমানকে দেখলেন তখন চমকে গেলেন যে তাঁর গতির থেকেও দ্রুত গতিতে হনুমান এখানে পৌঁছে গেলেন। এই দেখে শক্তি ও গতি নিয়ে যে অহংকার ছিল গরুড়ের তা ভেঙে যায়।তারপর হনুমানকে শ্রীরামচন্দ্র প্রশ্ন করেন যে তুমি ভিতরে কিভাবে প্রবেশ করলে ভিতরে আসার সময় কেউ তোমাকে বাঁধা দেয়নি? তখন হনুমান শ্রীকৃষ্ণকে বললেন যে সুদর্শন চক্র আমার পথ আটকায় তবে কিভাবে আমি আপনার দর্শনের বিলম্ব করতে পারি? এইজন্য সুদর্শন চক্রকে আটকে রেখেছি আমি দাঁত দিয়ে। এই বলে সুদর্শন চক্রকে হনুমান মুখ থেকে বার করে দিয়ে রামচন্দ্রের পায়ের সামনে রেখে দেন।এরপরেই সমস্ত অহংকার এর সমাপ্তি ঘটেছিল সুদর্শন চক্রেরও।